image

মলয় ঘোষ দস্তিদার : ১৯২০-১৯৮২

image

চট্রগ্রামের লোকসংগীত ও আঞ্চলিকগানের পথিকৃৎ শিল্পী মলয় ঘোষ দস্তিদার ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুন রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বাবা নতুনচন্দ্র ঘোষ দস্তিদার, মা বগলা ঘোষ দস্তিদার। বাবার উৎসাহে শৈশবকাল থেকে সংগীতচর্চা শুরু। গঙ্গাপদ আচার্য্য উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রথম শুরু। তারপর ধ্যান সেন, চুনু বাবু ও সমীরণ বন্দোপাধ্যায়ের কাছে সংগীতের তালিম গ্রহণ করেন। তৎকালীন বিপ্লবী গায়ক তেজেন বাবুর অনুপ্রেরণায় ইংরেজ বিদ্বেষী গান গেয়ে কিশোর বয়সেই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে আর্য সঙ্গীত সমিতি আয়োজিত সংগীত প্রতিযোগীতায় ভজন ও আধুনিক গান-এ প্রথমস্থান অধিকার করেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেতারে প্রথম গান পরিবেশন করেন। পরবর্তীকালে কলকাতা যান। পাশাপাশি মিনার্ভা থিয়েটারে চাকুরীও করেন। ঐ সময় কলকাতার কলম্বিয়া গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানী তাঁর লেখা ও সুরোপিত কিছু গানের রেকর্ড বের করে। তিনি শুধু গায়কই নন-সুরকার, নাট্যকার, চারণকবি, গীতিকার, সংগ্রামী রাজনীতিবিদ, মঞ্চ রূপসজ্জাকার এবং মাষ্টার দা সূর্যসেনের ছাত্রও ছিলেন। অগ্নিযুগের অগ্নিরোষে পড়ে গানের কারণে কিছুকালের জন্য কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্রগ্রামে ফিরে এসে রমা ঘোষকে বিয়ে করেন এবং বৈবাহিক সূত্রে চট্রগ্রামের ফতেয়াবাদে বাড়ী করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বসবাস করে ছিলেন। মলয় ঘোষ দস্তিদার আঞ্চলিক ভাষার তথা চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় প্রথম গান রচয়িতা। তার রচিত আঞ্চলিক গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানিত, আঁরা চাডগাঁইয়া নওজোয়ান, কাট্রল পাক্অ কাট্রল পাক্অ, বাহার মারি সাম্পান যার, মা বাপারে চাইতা বুলি, বিটিশ কোম্পানি গাট্রি বোস্কা বান্ধি ধাইলিনি, কেমন করে গর বানাইলা ইত্যাদি। তার লেখা সুর করা এবং গাওয়া ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানিত......’ আঞ্চলিক  গানটি ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে রেকর্ড করা হয়। ফলে গানটি চট্রগ্রামের আঞ্চলিক গান হিসেবে প্রথম রেকর্ড করা গানের স্বীকৃতি পায়। অন্যদিকে দেশে-বিদেশে চট্রগ্রামের পরিচয় তুলে ধরতে অসাধারণ ভূমিকাও পালন করেন। চট্রগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছোড ছোড ঢেউ তুলি’র উপর একটি ম্যুরাল রয়েছে। চট্রগ্রাম খেলাঘর ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে তার নির্বাচিত গীতি সংকলন প্রকাশ করে। তাছাড়া চট্রগ্রামের অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে মলয় ঘোষ দস্তিদার স্মৃতি পদক প্রদান করে আসছে। তিনি ভাষা আন্দোলনের একজন কর্মী অন্যদিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকও ছিলেন। জীবদ্দশায় কিংবা মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না পেলেও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কারের পাশাপাশি ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে সংকেত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি কর্তৃক সংকেত পদক-এ ভূষিত হন। শেষ জীবনে এই কিংবদন্তিসম মলয় ঘোষ দস্তিদার পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬২ বছর বয়সে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ চট্রগ্রামের ফতেয়াবাদ গ্রামে বসত ভিটায় পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তিন মেয়ে ঃ প্রতিমা ঘোষ দস্তিদার, তমালী ঘোষ দস্তিদার, মানু ঘোষ দস্তিদার, দুই ছেলে ঃ খোকন ঘোষ দস্তিদার, ছোটন ঘোষ দস্তিদার’কে রেখে যান। তারা সবাই সংগীত চর্চায় নিয়োজিত আছেন।

সম্পাদনায় : কবি আইউব সৈয়দ, উপদেষ্টা সম্পাদক, সিটিজি সংবাদ.কম।