image

শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব : ১৯২৭-২০০০

image

জীবনমুখী ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবন্ত সংগীত¯্রষ্টা শিল্পী শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার ফতেয়াবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জয়দাস বৈষ্ণব ছিলেন একজন লোকশিল্পী। বাবার কাছে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের সংগীতের হাতে খড়ি। ১১ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে মঞ্চে গান গাওয়ার পাশাপাশি নাটকের অভিনয় করতেন। পরবর্তীতে এ অভিনয় শৈলীকে তিনি গানে উপস্থাপন করে লোকগানের এক নতুনধারা সৃষ্টি করেন। পেশাগত জীবনে চট্রগ্রামের আর্ট প্রেসে ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।পরে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে কন্ঠশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। বেতারে গাওয়ার তাঁর প্রথম আঞ্চলিক গান হলো গুরা বউ বউরে সন্ধ্যাকালে চেরাগ দিতে গেল এবং চল অপুত বিলত যাই। স্বমহিমায় উদ্ভাসিত শিল্পী শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব একাধারে গায়ক, অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক। চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্য সাহার অনুপ্রেরণায় যোগ দেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র যন্ত্রর মন্ত্রর আর অভিনয় করেছেন অশিক্ষিত নামক বাংলা চলচ্চিত্রে। নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানেরও ¯্রষ্টা শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব। তাঁর গাওয়া বাইছা দুমরি আঁইয়েন রেলে ফুত কইচ্ছে উল্লেখযোগ্য। চট্রগ্রাম ও নোয়াখালী আঞ্চলিক গান ছাড়াও তিনি একক ও দ্বৈত কন্ঠে শিল্পী শেফালী ঘোষের সাথে লোকসংগীতের নানা স্বাদের গান গেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ও শেফালী ঘোষের প্রথম দ্বৈত কন্ঠের আঞ্চলিক গান নাইয়র গেলে বাপের বাড়ী আইসু তারাতারি গানটির কথা ও সুর করেছিলেন মলয় ঘোষ দস্তিদার। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের এই গান গেয়ে শ্যাম-শেফালী জুটিকে মানুষের হৃদয়ে কাছাকাছি নিয়ে যায়।মিয়ানমার,জাপান,আমেরিকা,লন্ডন,দুবাই,মালয়েশিয়া,কাতার,ওমান,আবুধাবীসহ বিভিন্ন দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান গেয়ে নিজস্ব গায়ন শৈলীর পরিবেশনায় আবালবৃদ্ধাবনিতার মন ভরিয়েছেন। রয়েছে ১২০ টির মত গানের এ্যালবাম। শিল্পীকে বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে মরণোত্তর একুশে পদক-এ ভূষিত করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর ৭৩ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। তাঁর এক ছেলে প্রেমসুন্দর বৈষ্ণব বাবার আদর্শকে অনুসরণ করে গান করে যাচ্ছেন।

সম্পাদনায় : কবি আইউব সৈয়দ, উপদেষ্টা সম্পাদক, সিটিজি সংবাদ.কম।