image

অন্তু’র কাছে খোলা চিঠি!

image

প্রিয় রেহনুমা তাসনিম অন্তু,
শুভেচ্ছা জানবেন। যদি ও জানি, আমার এই শুভেচ্ছা আপনার কাছে কখনোই পৌঁছুবে না! আপনি হয়তো ভাবছেন, এতদিন পড়ে আপনাকে মনে পড়লো! আপনার পরিবার আর হয়তো আপনার খুব কাছের কিছু মানুষ আপনাকে মনে রেখেছে, আর আমরা বাকি সকলেই আপনার মতো হাজার ‘অন্তু’ কে ভুলেই বেঁচে আছি! কারন, আমাদের কাছে এখন অনেক কিছু ভুলে থাকা মানেই বেঁচে থাকা! 
মনে পড়ে, ২০০৮ সালের ৫ জুন দৈনিক প্রথম আলো’র ভিতরের পাতায় আপনার ‘সংবাদ’ হয়ে আসা অনেকেই মেনে নিতে পারেন নি। আচ্ছা, আপনি এত বোকা কেন? ঢাবি’র অর্থনীতি বিভাগের মেধাবী ছাত্রী হয়ে ও মাত্র ছয় নম্বরের জন্য প্রথম শ্রেনী না পাওয়ায় আত্মহত্যা!? পরীক্ষায় প্রথম হতে পারার মধ্যেই কী জীবনের সার্থকতা? অনেক পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করে ও একটি মানুষ নৈতিক চরিত্র এবং সামাজিক নৈপুণ্যের ক্ষেত্রে চরম দীনতার মধ্যে থাকতে পারে। আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে ইদানিং শুধু ‘প্রথম’ হওয়ার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যায় এবং বাবা-মায়েরা ও যেভাবে সন্তানদের মানবিক মূল্যবোধ শেখানোর পরিবর্তে শুধু পরীক্ষায় ‘প্রথম’ হওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেন, তাতে সন্তান হয়তো পরীক্ষায় ‘প্রথম’ হতে পারে, কিন্তু, সত্যিকারের ‘মানুষ’ হয়তো সবসময় হতে পারে না। তাহলে, সেই ‘প্রথম’ হতে পারা শিক্ষার কোন মূল্য কি থাকে? সক্রেটিস বলতেন, ‘সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত লোক নিজেদের দুর্ভাগ্যে কখনো মুষড়ে পড়ে না, উপরন্তু আরো সাহস নিয়ে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করেন।’ 

অন্তু, আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, আমাদের অনেক অভিভাবকগনই সন্তানদের শুধু ‘চালাক-চতুর’ হতে বলেন! আমি ভেবে পাই না, মানুষ কেন ‘চালাক-চতুর’ হবে? মানুষ হবে ‘বুদ্ধিমান’। আর তা না হয়ে ‘চালাক-চতুর’ হতে গিয়েই ঘটে যত বিপত্তি। 
অন্তু, আপনাকে তো বলাই হয়নি, বিখ্যাত অর্থনীতিক জন মাইনারড কিনস এর কথা! সেই কিনস ও অর্থনীতিতে খারাপ করেছিলেন! তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তাঁর নেওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে অর্থনীতিতেই লিখিত পরীক্ষায় সর্বনিম্ন মার্কস পেয়েছিলেন। 
অন্তু, আপনাকে আমরা আর কখনোই ফিরে পাব না, আপনার পরিবার আর প্রিয় বন্ধুরা আপনার হাসিমুখ দেখতে পাবে না, এই ‘কষ্ট’ আপনি কি এখন বুঝতে পারছেন? নিশ্চয়ই, বুঝতে পারছেন। তাই, দয়া করে সবাইকে একটু বলে দেবেন, পরীক্ষায় ‘প্রথম’ হতে পারাই জীবনের সব নয়।

লেখক : কলামিস্ট ও বিতার্কিক