কক্সবাজারের শুঁটকির কদর এখন তুঙ্গে। সারাদেশে তো বটেই, বিদেশেও রয়েছে এখনকার শুঁটকির যথেষ্ট চাহিদা। কিন্তু অনেকের কাছেই লোভনীয় এ খাদ্যটিতে মেশানো হচ্ছে বিষ!
সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজারে এখন পুরোদমে চলছে শুঁটকি উৎপাদন প্রক্রিয়া। জেলার উপকুলীয় এলাকা টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সদর উপজেলা,বিশেষ করে নাজিরারটেক ও শহরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রোদে শুকিয়ে চলছে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ।
প্রতিবছর শীতের শুরু থেকে রোদে মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়। যা চলে জুন মাস পর্যন্ত। কক্সবাজারের শুঁটকি মহালগুলোতে এখন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ এ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান। আর কূলে ফিরলে এ মাছ কিনে নিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রোদে রাখা হয়। বাঁশের মাচার ওপর তা শুকানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের চাহিদা মিটিয়ে শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করে বছরে ২০০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে।
শুঁটকি তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, জেলার ২৯টি ফ্যাক্টরি পোপা শুটকি রপ্তানি করে গত বছর ১৪৫ কোটি টাকা আয় করে।
২০০৫ সালে ১২৮ কোটি ও ২০০৩ সালে ১২১ কোটি টাকা আয় হয়েছিলো। বর্তমানে কোরাল, লাক্ষ্যা, চাপা, কামিলা, হাঙ্গর, রূপচান্দা, পোপা, রাঙাচকি, মাইট্যা, কালো চান্দা, ছুরি, লইট্যা, ফাইস্যা, ছিটকিরি, সুন্দরীসহ অন্তত ১০০ প্রজাতির মাছ শুঁটকি করা হয়। দেশে-বিদেশে এ শুঁটকির রয়েছে আলাদা কদর।
এদিকে লোভনীয় খাবারটি আর নিরাপদ নেই। কারণ শুঁটকিতে ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক ও কীটনাশক।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুঁটকি মহালগুলোতে শুকাতে দেওয়া কাঁচা মাছের গায়ে সাদা সাদা দানা। কাঁচা বা পচা মাছের স্বাভাবিক গন্ধও তাতে নেই। আশপাশে নেই কোনো মশা-মাছি। পরে জানা গেল, মাছের গায়ের সাদা দানাগুলো হলো কীটনাশক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক জানান, শুঁটকিতে যাতে পোকা না ধরে এবং রং যাতে কালচে না হয় সে জন্য তারা কীটনাশক ব্যবহার করেন।
নিষিদ্ধ নগজ, ডিডিটি পাউডার ছাড়াও বাসুডিন, ফরমালিন, ডায়াজিননসহ নানা ধরনের বিষ ও কীটনাশক শুঁটকিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল আলম জানান, বিষ ও কীটনাশক দেওয়া শুঁটকি খেলে ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ পেটের নানা পীড়া হতে পারে।
তিনি জানান, এতে যকৃৎ ও কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এ ছাড়া নারী-পুরুষ উভয়েই প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন। গর্ভবতী নারী বিষযুক্ত শুটকি খেলে তার সন্তান শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী অথবা বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে।
কক্সবাজার ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী ডাইরেক্টর এ.এস.এম মাছুমউ দৌলাহ জানান, কক্সবাজারে উৎপাদিত শুঁটকিতে যাতে বিষ ও কীটনাশক ব্যবহার করা না হয় সে জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে শুঁটকি বিষমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব ভাবে তৈরি করতে একটি প্রকল্পও সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
Developed By Muktodhara Technology Limited