image

সাংবাদিক দম্পতী সাগর- রুনী হত্যা : ৭ বছরেও ৪৮ ঘন্টা শেষ হয়নি

image

সাংবাদিক দম্পতী সাগর- রুনী হত্যার সাত বছর হলো।সাত বছরে এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন বা খুনীদের আটক করতে পারেনি আইন শৃংখলা বাহিনী এবং তদন্তকারী সংস্হা। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী রাজাবাজারের একটি ফ্লাট থেকে এই দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপরই ততকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন ঘোষনা দেন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সাগর-রুনীর হত্যাকারীদের আটক করা হবে।কিন্তু সাত  বছর পেরিয়ে গেলেও এই হত্যার কোন কুল কিনারা করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্হা বা আইন শৃংখলা বাহিনী। গত ছয় বছরে আদালত ৬২ বার সময় মন্জুর করেছে তদন্তকারী সংস্হা কে।তারিখ আর তারিখ। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার আরেকটি তারিখ রয়েছে।ওই বছরের ১৮ এপ্রিল হাই কোটের নির্দেশে এই মামলার তদন্ত দেয়া হয় RAB এর কাছে।এই মামলায় আটজন সন্দেহ ভাজনকে আটক করা হয় এরা হলেন,কামরুল  ইসলাম,বকুল মিয়া,রফিকুল ইসলাম,মিন্টু,আবু সাঈদ এবং এনাম আহমেদ। রুনীর বন্ধু তানভীর রহমান এবং পলাশ রুদ্র  দীর্ঘদিন কারা ভোগের পর হাই কোট থেকে জামিনে মুক্তি পান।
এরই মধ্যে ঘটেছে অনেক ঘটনা।ঘটনা বহুল এই মামলায় দুই দফা ময়নাতদন্ত করা হয়েছে সাগর- রুনীর মরদেহের।ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত এবং সন্দেহ ভাজন অপরাধীদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে ছিলো খুনী সনাক্তে।তাতেও কাজ হয়নি।মহাখালীর ডাক্তার নিতাই রায় হত্যার ডাকাতি মামলার আসামীদের সাগর-রুনী হত্যায় অভিযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিলো।পুরান ঢাকার নবাবপুরে সাগরের বাসার পাশের এলাকার জাহাঙ্গীর নামে এক মটর- পার্টস ব্যবসায়ীকে আইন শৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ছয় বছরেও তার খোজ মিলেনি।তার স্বজনরা জানিয়েছেন,সাগর- রুনী হত্যায় স্বীকারোক্তি দিলেই তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।কিন্তু ছয় বছরেও তার সন্ধান মিলেনি।এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলা প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ এরপর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শুরু করে।পরবর্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ হাই কোটে এই মামলা তদন্তে তাদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলে হাই কোট মামলাটি ওই বছরের ১৮ এপ্রিল তদন্তের দায়ীত্ব  RAB এর উপর অর্পন করে।এরপর থেকে ৫ জন তদন্তকর্মকর্তা বদল হয়ে সর্বশেষ শাহিদুর রহমান মামলাটির তদন্ত করছেন।তাদের ভাষ্য একটিই তদন্তে অগ্রগতি থাকলে জানানো হবে। গত ছয় বছরে সাগর-রুনী হত্যা মামলা নিয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকেও আন্দোলন - প্রতিবাদ, সভা-সমাবেশএবংমানবন্ধন হয়েছে।এতো কিছুর পরও কেন এই হত্যার রহস্য উদঘাটন বা খুনীদের আটক করতে পারছে না আইন শৃংখলা বাহিনী? জনমনে এ প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছেনা।সাগর-রুনীর লাশ উদ্ধারের পর থেকেই কিছু বিষয় বির্তকের জন্ম দিয়েছে,যেমন ঘটনা স্হলে  আইন শৃংখলা বাহিনী ছাড়া কেন এতো সাংবাদিক বা লোকজনকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়ে ছিলো,যা আলামত নষ্টে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।যে ফ্লাটে থাকতেন সাগর- রুনী তার বিজিটর খাতা আছে,নাইট গার্ড আছে,নামের তালিকা আছে কারা কয়টা বাজে কোন ফ্লাটে কার কাছে  আসে -যায়। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ফরেনসিক চিকিৎসক বলেছেন,ছুরিকাঘাত  পেশাদারের নয়।প্রথম দফায় ময়নাতদন্তে হত্যার কারন চিহ্নত হওয়ার পরও আবার কারন চিহ্নিত করতে দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্তের কারন কি ছিলো? চিকিৎসকরা প্রথম দফা ময়নাতদন্ত শেষে বলে ছিলেন,রুনীর পাকস্থলীতে ভাত- ডিম পাওয়া গেছে,যা পুরো হজম হয়নি,সাগরের হাত পেছনে বাধা ছিলো,যদি কিছু খাওয়ে তাদের অচেতন করাই হতো তবে হাত বাঁধা ছিলো কেন? ছুরিকাঘাতে রক্ত ক্ষরনেই তাদের মৃত্যু হয়েছে যা হত্যাকান্ড জনিত।খুনীদের চিহ্নিত করার চেয়ে খুনের কারন নির্নয়ে তদন্তকারীদের বেশী গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি রহস্যময় বলে অনেকেই মনে করেছেন, কারন শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পরিষ্কার  হত্যাকান্ড,এপরও হত্যার আসামী না ধরে কারন নির্নয়ে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের প্রয়োজনিয়তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।স্বজনহারা পরিবার গুলোর মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।ঘটনার সময় সাগর-রুনীর একমাত্র ছেলে মেঘ বাসায় উপস্হিত ছিলো।তাতখনিক তাকেও একটি চ্যানেলে কথা বলিয়ে মানসিক চাপে ফেলে শিশুর স্মৃতি মুছে দেয়ার চেষ্টা  করা হয়েছে বলে অনেকেই বিষয়টি ভাল ভাবে দেখেননি।অপরাধ বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন যে খানে আমাদের গোয়েন্দা সংস্হা ক্লু লেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করে আসামী আটকে গৌরবজনক ইতিহাস আছে, সে খানে এমন একটি আলোচিত মামলার রহস্য উদঘাটন বা খুনীদের আটক করতে না পারাটা বিশ্বাস যোগ্য নয়।বিশ্লেষকেরা মনে করছেন হয় তদন্তকারীরা খুনী সনাক্ত করেছেন আটক করতে পারছেন না কোন মহলের চাপ আছে,আর না হয়  তারা আলামত নষ্ট হওয়ার কারনে প্রকৃত খুনি চিহ্নিত করতে পারছেন না।

মৃত্যুর আগে আমার ছেলেএবং ছেলের বউয়ের খুনের রহস্য উদঘাটন এবং খুনীদের আটক দেখে যেতে পারবো কিনা আল্লাহই ভাল জানেন।সাতটি বছর ধরে টেলিভিশনের ব্রেকিং নিউজ চোখ রাখছি এই মনে হয় আমার ছেলের খুনীরা আটকের খবর এলো; এ ছাড়া বাড়ির সামনে গলিতে  পুলিশ RAB এর গাড়ি থামলেই মনে হয় এই বুঝি আমার সাগরের খুনীদের আটকের সংবাদ নিয়ে এলো ওরা। এ ভাবেই সাত বছর ধরে অপেক্ষা করছি বলে জানালেন নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগরের মা সালেহা   মনির।রোববার সন্ধ্যায় সাগর- রুনী হত্যার খুনীদের আটক না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন সাগরের মা সালেহা মনির বলেন,তদন্ত কর্মকর্তারা বারবার আমার কাছে আসে জানতে আমি কাউকে সন্দেহ করি কিনা।আমি প্রতিবারই তাদের বলেছি আপনারাইতো আমাকে জানানোর কথা কারা কি কারনে আমার ছেলে ও বউ কে খুন করলো? তিনি বলেন,আমার চেয়ে এই মামলার বাদী রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান ভাল বলতে পারবে।কারা সন্দেহ ভাজন।তিনি বলেন যারে তারে ধরে নিয়ে এই মামলায় জড়িত করার চেষ্টা করা হয়েছিলো বলে আমি জেনেছি আমি এর প্রতিবাদও করেছি।সালেহা মনির বলেন,আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশী ক্ষমতাবান কেউ নন।তিনি এবং সরকার আন্তরিক হলেই সাগর-রুনী হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং খুনীদের আটক করা সম্ভব।তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,বেঁচে থাকতে হয়তো আমি ছেলে হত্যার খুনীদের আটকের সংবাদ শুনে যেতে পারবো না।গত ছয় বছরের নানা অভিজ্ঞতায় হতাশা ব্যক্ত করে প্রশ্ন রাখেন,আমার ছেলের সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিলো না,রুনীর মা তো তার মেয়ের সঙ্গেই থাকতেন সেই রাতে তিনি কি ওই বাড়িতে ছিলেন না? সালেহা মনির বলেন,ওই ফ্ল্যাটে কারা আসে কারা যায় তার সবইতো নিরাপত্তা কর্মীরা লিখে রাখেন। আর এতো রাত পর্যন্ত নিশ্চয়ই তাদের মেহমান অপরিচিত কেউ ছিলো না,এ ছাড়া এই হত্যাকান্ডকে চুরি-ডাকাতির ঘটনা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।তিনি প্রশ্ন রাখেন কোন চোর- ডাকাত কি ওই ঘরেরই চাকু- বটি দিয়েই খুন করতে আসবে? আর যে গ্রিল কেটে চুরির ঘটনা দেখানো হচ্ছে ওই কাটা জায়গা দিয়ে কি মানুষ ঢুকতে পারবে?ময়নাতদন্তে চিকিৎসক দেখেছেন তারা কি খাওয়া- দাওয়া করেছে তাদের পাকস্থলীতে কি কি পাওয়া গেছে,হত্যার কারন নির্নয়ের পরও আমার সন্তানদের লাশ আবার কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এতে আমরা মনে কষ্ট পেয়েছি।হত্যা কারা করেছে খুনিদের ধরার বদলে  তদন্তকারী দল শুধু খুন কি ভাবে হলো সে বিষয়টি কে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে কেন এটা আমার বোধগম্য নয়।

বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি  সাগর-রুনি হত্যার মামলার বাদী রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান ,মামলার তদন্তে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন,তদন্তকারীরা  এখনো সাগর- রুনীর একমাত্র সন্তান মেঘ ছেলে না মেয়ে এটা জানেন কিনা সংশয় রয়েছে।তিনি বলেন সাত বছরে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আমরা হতাশ।আমাদের আর এখন কিছু বলার নেই,আপনাদের যা জানার তা RAB কে জিঙ্গেস করুন, তারা কেন পারছে না,তিনি বলেন,কয়েক মাস পার পর তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয় আর আমাদের সঙ্গে দেখা করে যান।সাত বছরেএই মামলার ব্যাপারে আমাদের আর কিছু বলার মানসিকতা নেই।সোমবার আজিমপুর কবরস্হানে সাগর- রুনীর একমাত্র ছেলে সন্তান ভাগ্নে মেঘ নিয়ে কবর জিয়ারত শেষে ডেইলি বাংলাদেশ কে তিনি এ কথা বলেন।তদন্তের আন্তরিকতা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন,মামলার বাদী হিসেবে তদন্তের  অগ্রগতি নিয়ে ওরাই আমাকে  অবহিত করার কথা।সঙ্গে থাকা মেঘ তার- মায়ের খুনীদের আটকে কোন প্রতিক্রিয়া দিবে কিনা জানতে চাইলে মামা নওশের আলম রোমান বলেন ওকে  এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।ও কিছু বলবে না।