image

টেকনাফে মাদককারবারীদের আত্মসমর্পণ শনিবার : আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপি

image

অবশেষে বহুপ্রতিক্ষার পর মাদককারবারীরা আত্মসমর্পণ করতে যাচ্চে আগামী (১৬ ফেব্রুয়ারী) শনিবার । এ লক্ষে টেকনাফ পইলট উচ্চ বিদ্যালয় মঠে ম  তৈরী, মাইকিংসহ মাদক বিরুধী বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ প্রশাসন। আত্বসমর্পন অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি প্রধান অতিথি ও পুলিশের আইজিপি (ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী,ও সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারসহ অনেকে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা যায়।

সুত্রে জানা যায় ১৬ ফেব্রুয়ারী শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত টেকনাফের দেড় শতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন। 

এদিকে মরণ নেশা ইয়াবার জোনখ্যাত টেকনাফেই অবশেষে দেড় শতাধিক ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের খবর প্রচার হওয়ায় সীমান্ত নগরী টেকনাফের মানুষের মাঝে কৌতুহল ও নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। আলোচনা চলছে সর্বত্র বিভিন্ন সময়ে তালিকায় থাকা সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ,টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিক উদ্দীন ও তার সহোদর ভাই, বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দীন এবং শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিমসহ আরো কয়েক ব্যাক্তিকে ঘিরে। তারা শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পন করবে কি না তা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে চলছে নানান বিশ্লেষণ। এরই মধ্যে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিম পুলিশ হেফাজতে চলে গেছে এমন খবর চাউর হয়ে গেছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

এছাড়া নিজের আত্মসমর্পণ বিষয়ে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ইয়াবা সম্পৃক্ত একটি চক্র তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালাচ্ছে এবং সরকারের আত্মসমর্পন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারায় রয়েছে বলে দাবী করেন। 

এছাড়াও মাদক ইয়াবায় অর্জিত টাকা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে কিনা তা নিয়েও সাধারণ মহলের মধ্যে চলছে আলোচনা। 

এদিকে অনেক জনপ্রতিনিধি ও রাঘববোয়াল ইয়াবা কারবারিরা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পনের জন্য পুলিশ সেফহোমে চলে গেলেও তালিকায় শীর্ষে থাকা কয়েকজন এখনো গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তারাও সুযোগ বুঝে আত্মসমর্পন করবেন বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আগ্রহী এসব ইয়াবা কারবারিদের ডাকে সাড়া দিয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এইসব ইয়াবা কারবারীরা আত্মসমর্পণ করবে।  দীর্ঘদিন এ ব্যবসা থেকে অর্জন করা অর্থের লোভ ত্যাগ করে  দেড় শতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী  কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। 

সম্প্রতি ইয়াবার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যে এই অভিযানে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি’র সাথে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় অনেকে নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় ইয়াবা পাচারকারীদের মৃত্যুর হারও বাড়তে থাকে। এতে মৃত্যু শংকায়  অনেক ইয়াবা পাচারকারী স্বপ্রণোদিত হয়েই আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। বিদেশ থেকেও ফিরে এসেছে অনেকেই।

সারা দেশে একযোগে চলছে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান। চলমান অভিযানেও ধরা পড়ছে মাদকের ছোটবড় চালান। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্ধুক যুদ্ধে মাদক চোরাকারবারি নিহতের ঘটনাও ঘটছে। প্রাণ বাঁচাতে টেকনাফের ইয়াবা কারবারিদের একটি অংশ ‘আত্মসমর্পণ’ করতে পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে গিয়েছে। আগামী ১৬ ফেব্রæয়ারি আত্মসমর্পণের নির্ধারিত দিন পর্যন্ত এই তালিকা আরো লম্বা হতে পারে। তবে এত কিছুর পরও থেমে নেই ইয়াবা চোরাচালান। 

ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেব্রæয়ারির ১৬ তারিখ দিন ধার্য করেছে। তবে কতজন আত্মসমর্পণ করবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ইয়াবা কারবারিদের অনেকেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে। বিশাল সীমান্ত এলাকায় অভিযান এবং আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে এই ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অনেকে। প্রতিদিন নতুন নতুন নাম যোগ হচ্ছে এই ব্যবসায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবকটি সংস্থার সমন্বয়ে অভিযানের মাধ্যমে ইয়াবা কারবারিদের রুখতে হবে, এমনটাই দাবী করেছেন সচেতন মহল। 

জানা গেছে, ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়াটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনলে তিনিও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সম্মতি দেন। এরপরই জেলা পুলিশ এ নিয়ে কাজ শুরু করে। 

টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার জানান, ১৬ ফেব্রæয়ারী টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাদক কারবারীদের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠান সফল করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন তিনি।  
বন্দুক যুদ্ধে মারা যায় টেকনাফেরই ২৫ জন।

গত বছরের ৪ মে থেকে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর প্রায় প্রতিদিনই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সন্দেহভাজন মাদক কারবারিদের হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এ সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শুধু কক্সবাজারেই ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে টেকনাফে নিহতের সংখ্যা ৩৯ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জন টেকনাফের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সর্বশেষ করা ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় ১ হাজার ১৫১ জনের নাম রয়েছে। এরমধ্যে ৭৩ জন প্রভাবশালী ইয়াবা কারবারি রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা ওই হালনাগাদ তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিসহ ৩৪ জন সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি এবং বদির ভাই,  বোন, ভাগ্নেসহ ২৬ জন আত্মীয়ের নাম রয়েছে। আরেক সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর স্বজনের নামও রয়েছে। রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের স্বজনদের নামও। তবে উল্লেখিত জনপ্রতিনিধিরা বার বার তাদের স্বজনরা ইয়াবা কারবারে জড়িত নয় বলে দাবী করে আসছে। আত্মসমর্পণ করতে চান ‘ক্রসফায়ারে নিহত’ অনেকের স্বজনও।

অর্ধশত ইয়াবা প্রাসাদে হামলা : পুড়েছে ইয়াবা বহলের ট্রলারও টেকনাফের জালিয়া পাড়া, নাজির পাড়া, পাড়া এক সময় ছিল হতদরিদ্রের ভাঙাচোরা ঘরবাড়ির এক অপরিচ্ছন্ন । প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আসা  ইয়াবা টেবলেট বদলে দেয় এখানকার জীবন চিত্র। সেখানে হঠাৎ গড়ে উঠতে থাকে সুরম্য সব আলিশান প্রাসাদ।

অধিকাংশ বাড়িই গড়ে তোলা হয়েছে মরণনেশা ইয়াবা বড়ি বিক্রির টাকায়। গড়ে তোলা হয় বিলাসবহুল বাড়ি। এসব বাড়ি বাইরের দৃশ্য এতটাই দৃষ্টিনন্দন যে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। বাড়ির ভেতরের প্রতিটি কক্ষ সাজানো হয়েছে বিদেশি আসবাবপত্র ও সামগ্রী দিয়ে।শুধু জালিয়া পাড়া বা নাজির পাড়া নয়, টেকনাফের প্রতিটি গ্রাম ও পৌর শহরে এখন শোভা পাচ্ছে ইয়াবা কারবারিদের আলিশান বাড়ি-বহুতল ভবন। গত বছরের মে মাসে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে এসব আলিশান বাড়ির দিকে নজর পড়ে প্রশাসনের।
অক্টোবর থেকে এসব বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে প্রশাসন, যা এখনো চলমান। ইতোমধ্যে রাতের আঁধারে অনেক ইয়াবা কারবারির প্রাসাদোপম বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ইয়াবা ট্রলারও। টেকনাফের পশ্চিমের মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন বঙোপসাগর সৈকতে কৌশলে মাছ ধরার কথা বলে এসব কাটের বোট বা ট্রলারে করে ইয়াবা পাচার করে এক শ্রেণীর কারবাররিরা। তবে কিছু কিছু চিহ্নিত ইয়াবা কারবারির বিলাসবহুল বাড়িতে বুলডোজারের কোনো আঁচড় লাগেনি। কেন লাগেনি তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন স্থানীয়দের। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসন নিশ্চুপ। এ রকম দুই শতাধিক বাড়ি সাক্ষ্য দিচ্ছে প্রশাসনের এ দ্বৈতনীতির।

টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দৌহা বলেন, আসলে ইয়াবা কারবারিদের বাড়ি ঘরে রাতে কে বা কারা ভাংচুর করেছে তা বলা যাচ্ছে না। যেহেতু কেউ অভিযোগ দেয়নি।  

গত তিন বছরের কম বেশি সময়ে নির্মিত এসব বাড়িতেই প্রকাশ্যে চলেছে ইয়াবা কারবার। এজন্য বাড়ির পাহারায় সার্বক্ষণিক লোক নিয়োগের পাশাপাশি বসানো হয় একাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। পুলিশের সহযোগিতায় টেকনাফ পৌর এলাকা, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন ও সাবরাং ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ৫০ টিরও বেশি প্রাসাদতুল্য বাড়ি কম বেশি ভাঙা হয়েছে। কিন্তু দুই শতাধিক বাড়িই এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ ইয়াবা কারবারির বেশিরভাগের বাড়িতে কোনো ধরনের আঁচড় পড়েনি।