চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি প্লেন অপহরণের চেষ্টার ঘটনাটি দক্ষতার সঙ্গে মাত্র ৮ মিনিটে অবসান ঘটিয়েছে কমান্ডো বাহিনী।
প্লেনের ১৪৮ আরোহী নিরাপদে নামতে সক্ষম হয়েছেন। তবে কমান্ডো অভিযানে মারা গেছেন ছিনতাইকারী।
এ বিষয়ে শাহ আমানত বিমান বন্দরে রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান।
প্লেন ছিনতাই চেষ্টাকারী আটক, যাত্রী-ক্রু সবাই নিরাপদ। তিনি বলেন, মাত্র আট মিনিটে ছিনতাই ঘটনার অবসান ঘটানো হয়েছে। লে. কর্নেল ইমরুলের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ছিনতাইকারীর সঙ্গে একটি পিস্তল থাকার তথ্য জানিয়ে মেজর জেনারেল মতিউর বলেন, ছিনতাইকারীর বয়স ২৫-২৬। ক্রু’কে সে তার নাম ‘মাহাদী’ বলে জানিয়েছে।
ছিনতাইয়ের চেষ্টার শিকার বিমানের সেই ফ্লাইটবর্ণনায় তিনি আরো বলেন, বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটে বিমান বাহিনী প্রথম ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানতে পারে।
ককপিট থেকে পাইলট বিষয়টি জানায় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি)। পরে প্লেনটি ৫টা ৪১ মিনিটে জরুরি অবতরণ করে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ঘটনা সামাল দিতে থাকেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে এক প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন আসে বিএনএস ইশা খাঁ থেকে। তারা সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন। দ্রæততম সময়ে বিমান বন্দরে এসে সফল অভিযান চালিয়ে ছিনতাই চেষ্টার অবসান ঘটান।
নিহত ছিনতাইকারী সম্পর্কে ৭ প্রশ্নের যে উত্তর দিলেন জিওসি
বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ বিজি-১৪৭ ফ্লাইট ছিনতাইকারী মাহাদী (২৬) সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
আইএসপিআর জানায়, অভিযানের পর ছিনতাইকারীকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ ঘটনার পর সাংবাদিকদের কাছে দেয়া ব্রিফিংয়ে ছিনতাইকারী সম্পর্কে নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান।
তিনি বলেন, ছিনতাইকারীর বয়স আনুমানিক ২৫-২৬ বছর। ছিনতাইকারীকে নিবৃত্ত করার জন্য আমাদের কমান্ডো বাহিনী প্রথমে তাকে গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণ করার জন্য আহŸান জানিয়েছিল। কিন্তু সে এই আহŸান প্রত্যাখ্যান করে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলে স্বাভাবিকভাবেই যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে প্রথমে আহত পরে সে নিহত হয়।
১। যে কারণে এই ঘটনা
এই অল্প সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে যতটুকু কথোপকথন হয়েছে, সে শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল এবং তার (ছিনতাইকারীর) স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। এরপর আর তার সঙ্গে আমাদের কথা বলার সময় এবং সুযোগ ছিল না।
২। ছিনতাইকারী দেশি না বিদেশি?
আমাদের পাইলট প্রথমে দেখে মনে করেছিলেন সে বিদেশি। কিন্তু আসলে সে দেশি। তার কাছে একটা পিস্তল ছিল। এছাড়া আমরা তার কাছে কিছু পাইনি।
৩। যাত্রীদের কোনো ক্ষতি করতে চেয়েছিল?
সে যাত্রীদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি। তার একটাই দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলার। তাকে আমরা কমান্ডো পরিচালনা করা পর্যন্ত কনটিনিউওয়াসলি (নিয়মিত) ফোনে ব্যস্ত রেখেছিলাম।
৪। আপনাদের কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে কিনা?
সে জিম্মি করেছিল। সে কেবিন ক্রুদের জিম্মি করেছিল। তার সঙ্গে কথা বলেছি আপনার সব কথা শোনা হবে। এটা বলে সবাই আমরা ভেতর থেকে বের করে নিয়ে এসেছি।
যাত্রীরা বলেছেন, অপারেশনের আগে সেখানে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। বিমান ছিনতাই হওয়ার পরে যাত্রীরা অনেক কিছু শুনতে পারেন। এগুলো আমি বলব, মনের মধ্যে আতঙ্ক থেকে হয়।
৫। সে তো যাত্রী ছিল, তার পরিচয়?-
তার অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরও আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তার ব্যাগ খুঁজে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
৬। সে কী করে অস্ত্রসহ বিমানে উঠল?
বিমানে ওঠার আগে অনেক পর্যায় পার হতে হয়, সে কী করে অস্ত্রসহ বিমানে উঠল? নিশ্চয়ই দেখা হবে সে কী করে ভেতরে চলে এলো। তদন্ত করলে চলে আসবে।
৭। ছিনতাইকারী যেখানে মারা গিয়েছে
তিনি বলেন, ভেতরে তার সঙ্গে গোলাগুলি হলে আহত হয়। পরে সে বাইরে মারা যায়।
Developed By Muktodhara Technology Limited