image

শীঘ্রই কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি : চলছে লবিং গ্রুপিং মেরুকরণ

image

কর্ণফুলীতে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা।নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা, কারো আগ্রহের কমতি নেই। কে হচ্ছেন! ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক?

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি ঐতিহ্য ও ইতিহাস আছে। এখানে একদিকে যেমন নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন হয়, তেমনি বেরিয়ে আসে নতুন নেতৃত্ব। প্রত্যেক কমিটি হওয়ার আগেই কারা কারা নতুন নেতৃত্বে আসতে পারেন তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-গুঞ্জন। তেমনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আওতাধীন কর্ণফুলী উপজেলায় বিশেষ করে সংগঠনের প্রধান দুটি পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসতে পারেন সেদিকে এখন সবার দৃষ্টি।

কেন না শীঘ্রই শহরের নিকটবর্তী কর্ণফুলী উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হচ্ছে। শুরু হয়েছে পদ প্রত্যাশীদের জোর লবিং তদবির। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে কাজ করছে এক ধরনের স্নায়ু চাপ। নিজ নিজ বলয়ে স্থানীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের দুয়ারে দুয়ারে হাজির হচ্ছে লবিং নিয়ে। কে কতো ত্যাগী, কার কতোটুকু গ্রহণযোগ্যতা তা প্রমাণের জন্য নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা হয়ে উঠেছেন মরিয়া।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উপজেলা কমিটি ঘোষণা করা হবে সুত্রে এমনটি জানা যায়। গঠনতন্ত্রে দুই বছর পর পর ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৭ বছর পর এবার কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগে নেতৃত্ব প্রত্যাশীর সংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই বেশী দেখা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যেমনি ঐতিহ্যবাহী তেমনি বড় সংগঠন। এখানে ছাত্রত্ব আছে এমন কাউকে মূল নেতৃত্বের জন্য বাছাই করা হয়। উপজেলায়ও তার ব্যতিক্রম হবে না এমনটাই বলছেন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাইকারীরা।

ছাত্রলীগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে নানা যোগ বিয়োগ করে সভাপতি-সম্পাদককে বাছাই করে থাকেন। মূল পদধারীদের নিয়ে যেন বির্তক না হয়। সেখান থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স, আঞ্চলিকতা এসব বিবেচনায় নিয়ে কে সভাপতি, কে সাধারণ সম্পাদক হবেন তা নির্ধারণ করা হয়। অনেকে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে ছাত্রলীগের পদ ছিনিয়ে নিতে কৌশল করে থাকেন বলেও অতীতে দেখা গেছে।

তবে সবকিছুর শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ছাত্র সংগঠনের জেলা নেতাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। তবে একাধিক প্রার্থী থাকলে যদি কোনো সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব না হয় তাহলে নির্বাচন আবশ্যক হয়ে পড়ে।

কারা কারা মূল নেতৃত্বে আসবে তা এখন নিশ্চিত করে বলা না গেলেও মূল নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের চলছে জোর তৎপরতা। কর্মী সমর্থকদের মধ্যেও চলছে উৎসাহ উদ্দীপনা। গত কয়েক দিন ধরে ছাত্রনেতাদের ব্যক্তিগত পেইজবুক দেখলে তা বুঝা যায়।

এদিকে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে জোর তদবির করে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ মূছা, মো. মহসিন, জাহাঙ্গীর আলম জাবেদ, এম সাইফুদ্দীন, শাকিল আহমেদ, আতিকুল ইসলাম জুয়েল, মো. সাঈদ হোসাইন রিমন, মোহাম্মদ মোরশেদ, মো. সাজ্জাদ সাজিদ, আরমান হায়দার, ইছাক ইমনসহ কয়েক জনের নাম বেশ জোরে শোরেই শোনা যাচ্ছে।

সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাজ্জাদ সাজিদ বলেন, ‘যারাই কমিটিতে আসুক আমরা স্বাগত জানাই তবে নিয়মিত ছাত্র ও পরিচ্ছন্ন তৃণমূল নেতারা যেনো কর্ণফুলী উপজেলায় হাল ধরুক সে প্রত্যাশা করি।’

সভাপতি প্রার্থী এম সাইফুদ্দীন বলেন, ‘আমি অনেকটা আশাবাদী। কেন না দীর্ঘদিন জাবেদ ভাইয়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সাথে মাঠে ছিলাম। আমরা চাই কর্ণফুলীতে এমন নেতৃত্ব আসুক যাদের ধারা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাস ধরে রাখবে। এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য সব সময় মাঠে উপস্থিত থাকবেন। সুতরাং কর্ণফুলীতে এমন নেতৃত্ব আশা করি যে নেতৃত্বের কারণে যেন ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়।’

ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রনেতা মুছা এবং মো. মহসিন এর নাম শীর্ষ দুই পদের একটির আলোচনায় রয়েছে। মূল নেতৃত্বের দৌঁড়ে সাংগঠনিক দক্ষতা ও তৃণম‚লে কর্মী সমর্থক নিয়ে তিনি অনেকটা এগিয়ে থাকবেন বলে তাদের ধারণা। তবে শেষ পর্যন্ত কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গুরু দায়িত্বে কারা আসছেন তা কিছুটা সময়ের ব্যাপার বলে জানা যায়।

কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বে ক্লিন ইমেজের ছাত্রনেতারা আসবেন সেটি কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি সাবেক ছাত্র নেতারাও প্রত্যাশা করেন। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড। তাই সংগঠনে এমন নেতৃত্ব আসা উচিত যাতে করে সংগঠনের সব নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী ছাত্রলীগের উপর আস্থা রাখতে পারে। পুরোনো ঐতিহ্য যেনো ফিরিয়ে আনতে পারে তেমন নেতৃত্ব’কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

কর্ণফুলী উপজেলার সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল মালেক রানা বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস এক সুতোয় গাঁথা। তা থেকে প্রমাণ হয় ছাত্রলীগের অতীত যোগ্যদের হাতে ছিল। আমার বিশ্বাস আগামী দিনেও অতীতের মতো কর্ণফুলীতে উজ্জ্বল নেতৃত্ব পাবে।’

এদিকে নতুন কমিটি হবে এই ধারনায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। আসন্ন কমিটিতে ত্যাগী ও মেধাবী ছাত্রনেতাদের নিয়ে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, যোগ্য কর্মী ও আদর্শিক ছাত্র নেতাদের মুল্যায়ন করে একটি সময়োপযোগী কমিটি উপহার দেয়ার জন্য দলীয় ঊর্ধ্বতন নেতাদের প্রতি তৃণম‚লের নেতা কর্মীরা দাবী জানিয়েছেন।

তথ্যসুত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওতাধীন কর্ণফুলী উপজেলা শাখার কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বিগত বছরের ১০ জুলাই সহ সভাপতি মো. আনিছ, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান চৌধুরী ও মো. সোহেল উদ্দীন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন মানিক এর নেতৃত্বে আগ্রহী প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত নেওয়া হয়। এতে কর্ণফুলীতে সভাপতি পদে ১৬ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৪৬ জনের নাম তালিকায় পাওয়া যায়।

কর্ণফুলীতে ২০১২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী গঠন করা জসিম উদ্দীন ও জীবন মঞ্জুর আলম নিয়ে ছাত্রলীগের কমিটিই ছিলো সর্বশেষ কমিটি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ম‚লত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া ছাত্রদের সংগঠন এখানে কোন অছাত্ররা পদে আসার সুযোগ নেই। সুতরাং তৃণম‚লের চাওয়া পাওয়া ও প্রকৃত ছাত্রদের ভেতর থেকে নেতৃত্ব তৈরি করা হবে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দীন বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দ্রæত সময়ে উপজেলা কমিটি গুলো দিয়ে দিতে।’