image

দাও বৃষ্টি ঝেঁপে, কল্যাণে ছেপে

image

ছেলেবেলায় কাঠফাটা রোদে বৃষ্টির প্রার্থনায় আমরা ছড়া শিখেছি, 'আয় বৃষ্টি ঝেঁপে/ধান দিবো মেপে'। 'আল্লা-হুম্মা আগিসনা' শিখিনি। (হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন। -বুখারী,মুসলিম)। চাইতে শেখার ভ্রান্তি নিয়ে আমরা বড় হয়েছি। আমাদের গোড়ায় যে গলদ ছিলো, আমাদের বড়রা কেউই তা বুঝতে পারেনি।

ছেলেবেলার প্রভাব মানুষের জীবন জুড়ে থাকে। একটা ইন্দ্রজাল, মায়া খেলা করে ছেলেবেলার শিক্ষাকে ঘিরে। আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা, ঐ দেখা যায় তালগাছ কিংবা আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে_ ছেলেকে এইসব পড়াতে পড়াতে ছেলের বাবাই যে কোন ফাঁকে ছেলে হয়ে যায় ফের! খোঁজে তেপান্তরের মাঠে দিগন্তের গোলকধাঁধায় ঝাপসা দু'চোখে হারানো শৈশব! নস্টালজিক এই ঘেরাটোপের সাথে হাজার(?) বছরের বাঙালীয়ানার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটাও খুব যায়। আর যায় বলেই এসবের বিরুদ্ধ কথাতে আমাদের জাতও যায়!

জীবনে, যাপনে কার কাছে চাইতে হয়, আর কার কাছে চাইতে নেই_ এই জানাটা ঈমানের দাবী। বৃষ্টির স্বকীয়তা নেই ধানের উপঢৌকনে নিজ থেকে ঝরে পড়ার। 'লা ইলাহা' সাক্ষ্যের পাশাপাশি আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে বা কিছুকে ইলাহ'র মতো ক্ষমতাবান ভাবা, ডাকা বা বলা সর্বাধিক জুলুম। এই শিক্ষাটা ছেলেবেলাতেই জরুরী ছিলো, যাতে করে বড়বেলাতে আর হেলা না থাকে রবের দাসত্বপনায়। কিন্তু আগডুম বাগডুম দিয়ে মাথাটা বোঝাই করে রাখলে সপ্তাহান্তে জুমাহ্ মসজিদে হাজির থাকার অধিক দ্বীন আশা করাটা নেহায়েত মূর্খতা। আমরা হয়েছিও তা-ই।

দিনে দিনে আমাদের ধাবমানতা কুরআনে না হয়ে পুরাণে গেছে_ 'বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর, নদে এলো বান/ শিবঠাকুরের বিয়ে হবে তিন কন্যে দান।' ছকে ছকে উম্মাহ্'র এই বখে যাওয়াগুলো শেষে গিয়ে মিলেছে পহেলা বৈশাখে, মঙ্গলশোভায়। আর এভাবেই মিসিং বৃষ্টি দেখলে 'আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআন' এর শিক্ষা। যার ফলে আমরা তো গেছিই আমাদের সন্তানেরাও যোজন দূরে ছিটকে পড়ছে দ্বীনের বেনেফিটগুলো থেকে।

আমাদের জীবনের ইঞ্চি ইঞ্চি ক্ষেত্র আজ বৃষ্টি ও বেদনার কাব্যে পরিপূর্ণ। আর সে অনুষঙ্গে গানে-গল্পে আমিত্ববাদের নির্লজ্জ প্রকাশটাই আমাদের অর্জন। কৃষ্টি-কালচারের বুননে, চারণে ক্রমে আমরা অনৈসলামিক হয়ে উঠেছি অজ্ঞাতে, অবলীলায়। যদিও বেদনার কথা বলে বেড়ানো মুমিনের কাজ নয়, 'সবর' তার শিক্ষা, তথাপি বেদনার উলঙ্গনেই আমাদের তৃপ্তি, সাহিত্য, গৌরব। তাগুতের তালে তালে চলতে গিয়ে আমাদের শাণিত পদধ্বনি দুর্বিনীত আজ স্খলনে। মহাপরাক্রমশালী রব আমাদের সতর্ক করেন এইভাবে যে, 'তাকে তার মন্দ কর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, ফলে সে সেটিকে উত্তম মনে করে।' -( সূরা ফাতির ৩৫/৮)। তিনি আরো বলেন, 'আর তুমি যদি তাদেরকে প্রশ্ন কর, ‘কে আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করেন’? তবে তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। বল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর’। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বুঝে না।' -(আল আনকাবূত ২৯/৬৩)

তবুও 'আয় বৃষ্টি'র মায়া যারা ছাড়তে পারেন না, নিয়মিত চেতনার ইউটোপিয়াতে ভোগেন, আর শিশুতোষ মেজাজে ছন্দোবদ্ধতার গুরুত্বের দোহায় দিয়ে পার পেতে চান, তাদের প্রত্যুত্তরে 'সায়্যিবান নাফিয়ান'ও একদিন না হয় 'দাও বৃষ্টি ঝেঁপে, কল্যাণে ছেপে' হয়েই প্রতিষ্ঠা পাবে, এই দ্বীন তবু পুনরুজ্জীবিত হবে এ উম্মাহরই হাত ধরে, ইনশাআল্লহ্।

________________________________________________
اللّٰهُمَّ صَيِّباً نَافِعاً

হে আল্লাহ! মুষলধারায় উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন। -(বুখারী ২/৫১৮, নং ১০৩২)