image

আন্তর্জাতিক মুদ্রাপাচার চক্রে ৫০ বাংলাদেশি

image

মানবকন্ঠের সৌজন্যে ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মুদ্রাপাচারকারী চক্র। এ চক্রে রয়েছে ৫০ বাংলাদেশি। তাদের মূল হোতা সুমন নামে এক ব্যক্তি। বর্তমানে তিনি পালিয়ে আছেন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে। ঢাকার সঙ্গে রয়েছে সাত দেশের একটি সিন্ডিকেট। চক্রের সদস্যরা ঘন ঘন বিদেশে যাতায়াত করেন। তারা মুদ্রার পাশাপাশি স্বর্ণ পাচার এবং জালিয়াতিতেও জড়িত। তাদের বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার কাছে গোপন তথ্য আসে- ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে রয়েছেন সুমন নামে এক ব্যক্তি। তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রাপাচার চক্রের অন্যতম হোতা। খবর পেয়ে বনানীর ওই হোটেলে সম্প্রতি অভিযান চালান গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। কিন্তু সুমনকে পাওয়া যায় না। অনুসন্ধানে জানা যায়, বেনাপোল সীমান্ত হয়ে সুমন পাড়ি জমিয়েছেন পাশের একটি দেশে। তারপর সেখান থেকে ব্যাংককে চলে গেছেন। অবশ্য সুমন ধরা না পড়লেও ফিরোজ নামে তার এক আত্মীয়কে কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেন গোয়েন্দারা। ফিরোজের কাছ থেকে সুমন সম্পর্কে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রে আরো জানা গেছে, ঢাকায় মুদ্রাপাচার চক্রের একটি শক্ত ঘাঁটি তৈরি করেছে সুমন। তার সঙ্গে অন্তত অর্ধশত চোরাকারবারি এবং মুদ্রা পাচারকারীর সম্পর্ক রয়েছে। তাদের সবাই আন্তর্জাতিক চক্রে জড়িত। প্রত্যেকটি চক্রের সঙ্গে সুমনের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি চালানো অভিযানে বনানীর ওই অভিজাত হোটেল থেকে কিছু কাগজপত্র জব্দ করেছেন গোয়েন্দারা। ওইসব নথিপত্র খতিয়ে দেখতে গিয়ে চক্রের প্রায় সবার নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। এদের বেশিরভাগ সদস্য ঘন ঘন বিদেশ যাতায়াত করে। তারা বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে ও শ্রীলঙ্কার সিন্ডিকেটে জড়িত।
দায়িত্বশীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মানবকণ্ঠকে বলেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে আন্তঃদেশীয় যোগসূত্র তৈরি করে মাফিয়া সদস্যরা মুদ্রাপাচার করে যাচ্ছে। এদের কারো কারো রয়েছে রাজনৈতিক কানেকশনও। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন ঢাকার বাইরেও কালো তালিকাভুক্ত। দুবাই ও থাইল্যান্ড পুলিশে ব্লাককলিস্টে তাদের নাম আছে। চক্রের সদস্যরা আন্তর্জাতিক রুটে মুদ্রাপাচার করে কাড়িকাড়ি টাকা কামিয়েছে। এদের মধ্যে সুমন নামে যাকে গ্রেফতারে সম্প্রতি অভিযান চালানো হয়েছিল, তিনি ঢাকায় একটি মামলারও আসামি। সুমন ঢাকার বাইরে দুবাই ও ব্যাংকক পুলিশের খাতায় অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। তার পুরো নাম সুমন আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী সুমন ওরফে সুমন আহমদে। তার একাধিক পাসপোর্ট রয়েছে।

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুমনের নথিপত্রে নাম পাওয়া গেছে জাকির ও সুশংকর নামে দুই ব্যক্তির। এ দুজন থাইল্যান্ড ও দুবাইকেন্দ্রিক মুুদ্রাপাচার চক্রে জড়িত। জাকির মধ্যপ্রাচ্যে এবং সুশংকর কুয়ালালামপুর পুলিশের তালিকাভুক্ত। দুজনের চক্রে আছে শাহীন, আমীর, আশরাফ ও হাসান আলম। এরা ঢাকাতেই আত্মগোপন করে আছেন। এর মধ্যে হাসান ও আশরাফের সঙ্গে এক ব্যাংক কর্মকর্তার জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। রাজধানীর পল্টনে এদের একটি গোপন অফিসও আছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বুপারাম পুলিশ স্টেশনে নাজমুল নামে এক বাংলাদেশির বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খোয়া যাওয়ার পর থেকে আন্তঃদেশীয় মুদ্রা পাচারকারী সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য পায় থাইল্যান্ড পুলিশ।

পরে তদন্তে জানা যায়, নাজমুলের মুদ্রা চুরিতে আনোয়ার হোসেনের নাম আসে। নাজমুল ও আনোয়ার এক চক্রের সদস্য। আর চুরি যাওয়া মুদ্রা নাজমুলের বৈধ নয়। ভারত, নেপাল ও দুবাইভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য-আমদানি রফাতানির নামে মুদ্রাপাচার করে তারা। 
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী যাদের খোঁজা হচ্ছে তারা হলেন- মালয়েশিয়া ও ব্যাংককের যাতায়াতকারী হারুনুর রশিদ, জয়নাল আবেদীন, মুক্তাদির; সিঙ্গাপুরে যাতায়াতকারী আতিকুর রহমান সেলিম, হারিছ আলী, আমির, রহমান ইয়ার, বিজয়, রোমান, বকুল; কুয়ালালামপুরে যাতায়াতকারী আবুল আহাদ, মোস্তফা মিয়া, মুহাইমিন, শামীম, মোস্তাক আহমেদ, ইমরান; শ্রীলঙ্কা যাতায়াতকারী আহমেদ, বাবুল মিয়া, জাবেদ খান, জসিম উদ্দিন, সুমন মিয়া, ডালিম, ফরিদ ও শাহজাহান, সুমন আহমদ জাকির হাসান, আব্দুর রহিম, জাহাঙ্গীর, আবদুল খালেক; নেপাল ও ভারতে যাতায়াতকারী কামরুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান ও মামুনুর রশীদ। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর, সেলিম ও খালেক পাকিস্তানের মুদ্রাপাচার সিন্ডিকেটেরও হোতা। তালিকায় জামিল, আবদুল লতিফ, মতির মিয়া, সোহেল মিয়া, সাইফুল হক, আনোয়ার, রেজাউল ইসলাম, কামাল, শাহাবুদ্দিন, বাবুল, কায়সার, আমিনুল, বোরহান উদ্দিন, জিল্লুর, বেলাল হোসেন ও আলামিনের নাম রয়েছে। এরা আন্তর্জাতিক মুদ্রাপাচার চক্রের সদস্য। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, মুদ্রাপাচারে আন্তর্জাতিক চক্রে ট্রাভেল এজেন্সির কতিপয় লোকজন, দেশি ও বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিস, ব্যাংক কর্মকর্তা, সিএন্ডএফ এজেন্টের লোকজন ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত কতিপয় বিপথগামী সদস্য জড়িত।

দায়িত্বশীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রাপাচার চক্রে মুদ্রাপাচার সুমনের অন্যতম কয়েক সহযোগীর মধ্যে জহির মিয়া, আলী নেওয়াজ, সাজু, দানেশ, মজিদ নুরানী ও আফজাল মামুনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তারা নিত্যনতুন কৌশলের মাধ্যমে মুদ্রাপাচার ও স্বর্ণ পাচারসহ জালিয়াতি করে যাচ্ছে।