image

উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে ৪০ রোহিঙ্গা গডফাদার সক্রিয়

image

মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের রুটের গতি পরিবর্তন ঘটেছে। আন্তর্জাতিক সীমানা নাফ নদীর টেকনাফ অংশের পাশাপাশি উখিয়া অংশে ও ইয়াবা পাচারের বিস্তৃতি ঘটেছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমারের রাখাইনের অন্তত ৪০ জন গডফাদার বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবির গুলোতে অবস্থান নিয়ে স্থানীয় গডফাদারদের সাথে সিন্ডিকেট করে এ নতূন রুট দিয়ে ব্যাপক আকারে ইয়াবা লেনদেন করার খবর সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী  বিজিপির সহযোগিতা ও প্রহরায় সেখানকার রাখাইন গডফাদাররা উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গা গডফাদাররা স্থানীয় চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারী ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় পুরো ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মংডু জেলার তুমব্রু লেট ও রাইট ওয়ে ঢেকিবনিয়া, ফকিরা বাজার, সাহেব বাজার, নাগপুরা, গদুরা ও বলি বাজার ভিত্তিক  ৬টি শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারী গ্র“পের অন্তত ৪০ সদস্যের সংঘবদ্ধ গডফাদারা উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে। উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের-৩, ৫, ৬, ৮, ৯, ১৩, ১৪, ১৬ নং ক্যাম্প সহ টেকনাফের চাকমারকুল, উনছিপ্রাং, লেদা, নয়াপাড়া, মুচনী ক্যাম্পে মিয়ানমারের উলে­খিত এলাকার গডফাদাররা পুরো ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ২০১৭ সালের আগষ্টের পর থেকে মূলত রাখাইনের এসব ইয়াবা ডনরা অবস্থান নেয়। তারা ক্যাম্প গুলোতে বসে স্থানীয় পুরাতন ও নতূন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে সিন্ডিকেট করে ইয়াবার পাচার ও ব্যবসার লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি টেকনাফ সীমান্তে সব ধরণের সরকারী দায়িত্বশীলদের নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মিয়ানমার ও স্হানীয় গডফাদাররা টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচারের গতি প্রবাহের রুট পরিবর্তন করে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে উখিয়া সীমান্তের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে রীতিমত অবাক করার মতো ইয়াবার চালান আসছে। ইয়াবা পাচার, ইয়াবা ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা বাড়ার সাথে ঘটছে গুলা গুলির ঘটনাও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালুখালীর একাধিক সাবেক জনপ্রতিনিধি জানান, কাদিরাঘাঁট, ঢেকিবনিয়া, রহমতের বিল সাইক্লোন সেল্টার, চাকমা কাটা, আনজুমান পাড়া, হউসের দিয়া, বালুখালী পূর্ব পাড়া কাটা পাহাড় (চন্দ্র পাড়া), বেতবুনিয়া গোলপাতা বাগান, ডেইল পাড়া, দুই ছাইল­া সহ ৮/১০টি পয়েন্ট এখন ইয়াবা কারবারিদের নিরাপদ নতূন রুট।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে,রোহিঙ্গা গডফাদাররা বড় বড় ইয়াবার চালান নিরাপদে আনতে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করছে। ওই জনপ্রতিনিধিরা সহ স্থানীয়  লোকজন  জানান, বালুখালী কাটা পাহাড় চন্দ্র পাড়া চিংড়ি ঘের দিয়ে গত ১৭ এপ্রিল রাত আড়াইটার দিকে বড় ধরনের একটি ইয়াবার চালান পাচারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে গুলা গুলির ঘটনা ঘটেছে।  এ সময় পূর্ব পাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ ছিদ্দিকের ছেলে নাজমুল হক (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উখিয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত)  নূরুল ইসলাম মজুমদার  ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেশকিছু আলামত সংগ্রহের কথা  জানান।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, বালুখালীসহ রোহিঙ্গা  ক্যাম্পে গুলোতে  ইয়াবার লেনদেন ব্যবহার ও পতিতাবৃত্তি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পরপরই রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ অপরাধ জগতের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। ভয়ানক এ অনৈতিক পরিবেশ এখনই দমন করা না হলে পরবর্তীতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে পরিবেশ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে বলে তিনি জানান।

উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান উখিয়া সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান পাচার হয়ে আসার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৭ এপ্রিল শনিবার রাত আড়াইটার দিকে বালুখালী ক্যাম্পের দক্ষিণ পশ্চিমে চিংড়ি ঘের পার হয়ে ব্রিজের  দিয়ে ৪/৫ জন ইয়াবা কারবারি ক্যাম্পে ঢুকার চেষ্টা করছিল। এসময় পুলিশ ধাওয়া করলে ইয়াবার বস্তা ফেলে পাচারকারীরা পালিয়ে গেলেও দুই জন পাচারকারীকে চিহ্নিত করা গেছে বলে তিনি জানান। পাচারকারীরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে ফেলে যাওয়া সাড়ে তিন লক্ষ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের জানান, এ ঘটনায় উখিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়েছে। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক  লেঃ কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমদ বলেন, সীমান্তের নাফ নদী পার হয়ে চিংড়ি ঘের এলাকা দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে।

তিনি বলেন, নাফ নদী ও চিংড়ি ঘেরে মাছ ধরে জীবন ধারণের সঙ্গে নিয়োজিত পরিবারের কথাও বিবেচনায় রাখতে হয়। তথাপিও বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, উখিয়ার নাফ নদী সীমান্ত দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা ও ৬০ জন ইয়াবা কারবারিকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজিবির সাথে বন্দুক যুদ্ধ মারা গেছে তিনজন ইয়াবা কারবারি।