image

প্রায় বিলুপ্তির পথে বিএনপি !

image

বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সময়ের অন্যতম প্রধান সক্রিয় দল হলেও গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। ভাঙন, বিতর্কতা এবং সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে দলটি। দলটির চেয়ারম্যান দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবাস করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু এ ব্যাপারে দলটি সরকার দলকে দায়ী করে আসলেও বস্তুত কোন পদক্ষেপও নিতে পারেনি। বিএনপির নামেমাত্র কার্যক্রম এখন শুধু অনশন, প্রেস ব্রিফিং এবং কর্মসূচী ঘোষণাতেই। এক কথায় বলতে গেলে বিএনপি এখন নামমাত্র দল হিসেবে রূপ নিয়েছে।

২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের পর বেশ কয়েকটি অপ্রধান দলের সঙ্গে ঐক্য গড়ে গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে যায় বিএনপি। কিন্তু শুরুতেই আসে বিপত্তি। আসন নিয়ে জোটের অন্যান্য দলের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। এরপর কোনরকম আসন ভাগাভাগি হয়। এরপর মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে বিতর্কিত হয় দলটি। অফিস ভাংচুর হয়। অনেকে দলত্যাগ করে। ভাঙনের সূচনা শুরু হয়। এরপর আসে ভোটের দিন। দলীয় প্রধানকে জেলে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যায় ঠিকই। কিন্তু মাত্র গুটিকয়েক আসন পায়। এরপর সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

এরপর যথারীতি চলতে থাকে প্রেস ব্রিফিং এবং কর্মসূচি ঘোষণা। সবচেয়ে বড় নাটকীয়তা ঘটে তখনই যখন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান শপথ নেন।

এসময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ৩০ ডিসেম্বর কোনো ভোট হয়নি। ভোট আগের রাতেই হয়ে গেছে। এই প্রহসনের নির্বাচন বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।'

শপথে সরকারের চাপ থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ শৃঙ্খলাভঙ্গ বলে অভিহিত করেন তিনি। বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন জাহিদুর। বিএনপি ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত একাদশ সংসদে যোগ না দেয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে। জাহিদুর দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে শপথ নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মির্জা ফখরুল।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন- নেত্রীকে কারাগারে রেখে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন, তারা জাতীয়তাবাদী আদর্শের নয়। তারা গণদুশমন। তার বিচার জনগণই করবে। আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত যে আমরা পার্লামেন্টে যাব না। দলের সিদ্ধান্ত যিনি অমান্য করবেন, তিনি দলের লোক হিসেবে বিবেচিত হবেন না। জাহিদুর রহমানকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

তবে নাটকীয়তার চরম দৃশ্য তখনো দেখা বাকি। এরপর সময়সীমার শেষ দিনে এসে সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নিলেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত আরও চারজন।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমানের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বিএনপি সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের সবার সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজনীতি এ সংকটময় সময়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা, তার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামের অংশ হিসেবে আমরা সংসদে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, সংসদে যাওয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে অবিলম্বে একটি অবাধ জাতীয় সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রীসহ সব রাজবন্দিকে মুক্ত করতে পারবে বিএনপি।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মির্জা ফখরুল। সময় শেষ হলেও তিনি শপথ নেননি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত হলে মহাসচিব কেনো শপথ নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে শপথকারীদের একজন হারুন অর রশীদ এক সাক্ষাতকারে বলেন, শপথ নেবেন কি নেবেননা এটি মহাসচিবের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আমাদের দলের সিদ্ধান্তেই আমরা শপথ নিয়েছি। এখন মহাসচিবই তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারবেন। তিনি কেনো শপথ নেননি বা নেবেন কি-না তার ব্যাখ্যাও মহাসচিবই দিতে পারবেন।

এর আগে গণফোরামের মোকাব্বির খানও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই শপথ নিয়েছিলেন। বিরোধী জোট থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে প্রথম শপথ নিয়েছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।

নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কতটুকু যুক্তিযুক্ত ছিল তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। জাতীয় নির্বাচনে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভুমিকাই রাখতে পারেনি জাতীয় এই ঐক্য। প্রধান দল বিএনপি হলেও নির্বাচনে তাদের তেমন কোন ভুমিকাই চোখে পড়েনি।

বিএনপির কফিনে শেষ পেরেকটি প্রবেশ করে যখন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ । ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা না করে বিএনপি সংসদে যোগদান করায় এ সিদ্ধান্ত নেন পার্থ। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর হতে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমশই স্থবির হয়ে পড়ে। বিরোধীদলীয় রাজনীতি অতিমাত্রায় ঐক্যফ্রন্টমুখী হওয়ায় ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরবর্তীতে সরকারের সঙ্গে সংলাপসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ২০ দলীয় জোটের বিএনপি ছাড়া অন্যকোনো দলের সম্পৃক্ততা ছিল না। এমতাবস্থায় ২০ দলীয় জোটের বিদ্যমান রাজনীতি পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ২০ দলীয় জোটের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসছে।

গত এক দশকেরও বেশি সময় থেকে সভা সমাবেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত বিএনপি নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছে। বোধ হয় এসব কারণেই কোন জাতীয় সঙ্কটে কোন আন্দোলন করতে দেখা যায়নি বিএনপিকে। সব মিলিয়ে বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন ভুমিকা-ই রাখতে পারছে না। নিজেদের অস্তিত্ব টেকাতে গেলে যে শক্তি অর্জন করা দরকার, সেই শক্তি বিএনপি সঞ্চয় করতে পারছে না। এভাবে নিষ্ক্রিয় থাকলে বিএনপি এক সময় ইতিহাসে লেখা নাম হবে। রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাবে বিএনপি।

সূত্র : দৈনিক অধিকার