image

এলবাম

image

দশক হিসেবে ৭০, ৮০, ৯০ 'তে বাড়ি বাড়ি এলবামের প্রচলন ছিল। বাড়িতে অতিথি এলে আপ্যায়নের সাথে সাথে কাছের মানুষদের এলবাম দেয়া হতো দেখতে। স্মৃতিচারণে মুখর হতো বিকেলের আড্ডা, চায়ের চুমুক।

কেউ কেউ অতিথি হয়েও নিজ থেকে চেয়ে নিতো এলবাম; সময় কাটাতে, সাবলীল হতে। তারপর এলবামের ছবির, স্মৃতির সূত্র ধরে এগোত কথা, গাঢ়তা। তবে কিছু রিস্ট্রিকশনও ছিল। স্বামীর বন্ধু, অফিসের কলিগ, পাশের বাসার ইঁচড়েপাকা ছেলে এলবাম থেকে ছবি বের করে খুব কাছে নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার মতো সুযোগ সেই সময়ে ছিল না। তবে আজ আছে। সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর জীবনে আপনার ওপেন প্রোফাইল ঘেটে কতজনই যে zoom করে খুটিয়ে খুটিয়ে আপনার ছবি দেখছে আপনি জানেন না, ভাবতেও পারেন না।

পারিবারিক এলবামগুলো আজ ভার্চুয়াল। সার্বজনীন। আমরা মরিয়া হয়ে আছি নিজেকে দেখাতে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে স্তুতিবাক্য লুফে নিতে আমরা ঘরের দরজা-জানালা খুলে বসে আছি। ভাবছি শালীন ছবিতে এই দেখাটা মন্দ না, ঠিক সেই আমরাই যখন চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়ায় রিক্সা-টেক্সী-বাসের অপেক্ষায়, তখন ঘাঁড় ঘুরিয়ে বারবার আমাদের হিজাবি শালীনতা দেখা অপরিচিত ছেলেটাকে বখাটে ভাবি। ডবল স্ট্যান্ডার্ড এই মূল্যবোধের গভীরে আমরা যেতে চাই না। বরং গন্তব্যে পৌঁছে অপলোড করতে বসি আজকের সাজ, হিজাবের ফ্যাশন!

লিখাটুকু পড়তে পড়তে এই পর্যায়ে এসে আপনার সাথে মিলে যাচ্ছে ভেবে আপনার খারাপ লাগছে, রাগ হচ্ছে, যুক্তি আসছে মনে। 'নাহ্, আমি এমন না। আমার ফেইসবুক প্রোফাইল তো সবার জন্য উম্মুক্ত না!' তবে বলি, ফেইসবুক security অপশনে আপনার 'only friend বা family লিস্ট' আর শরীয়া মাহারাম বা দেখা দেয়ার বৈধ তালিকার সাথে বিস্তর ফারাক আছে। ফাতিমা (রা:) কে বিয়ে করার আগে আলী (রা:) সম্পর্কে তাঁর চাচা ছিলেন। কারণ রাসুলুল্লাহ ﷺ এর আপন চাচা আবু তালিবের সন্তান ছিলেন আলী (রা:) এবং সেই হিসেবে আপন চাচাতো ভাই। তাই আমাদের ভাবতে হবে নতুন করে, প্রকৃতই মাহারাম আর গায়রে মাহারাম কারা জানতেই হবে।

লাক্স সুন্দরী বাথটাবে সাবানের ফেনিল জলের আড়ালে নগ্ন থাকেনা এটা যেমন সবাই বোঝে আবার নগ্নতার আকর্ষণে কাছে টানার বিজ্ঞাপনী মনস্তত্ত্বও কারো অজানা নয়। আমাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড জীবন-যাপনের চৈতন্যহীনতা কাটিয়ে জাগতে হবে। অজ্ঞতাজনিত ভুলের জন্য ক্ষমার গ্যারান্টি কিয়ামত দিবসে আছে, এই কথা নবী-রাসূলগণ বলেন নি। বরং 'ইকরা/পড়ো' তথা জানো, মহাগ্রন্থ আল-কুর'আনের প্রথম নাযিলকৃত শব্দ।

আমরা যেন সতর্ক হই প্রতিদিন একটু একটু করে। যুক্তি-তর্কের মারপ্যাঁচে না ডুবে মুখের উপর ঠাশ করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে শয়তানকে 'না' বলি।

আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করুন ও শুদ্ধতার পথে কবুল করুন।