image

কর্ণফুলীতে অবৈধ ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও অটোরিক্সার যেন বৈধ রাজত্ব

image

মহামান্য হাইকোর্ট এবং সড়ক সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে কর্ণফুলী উপজেলার মহাসড়ক কিংবা অলিগলিতে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ যানবাহন থ্রী হুইলার, অটো সিএনজি, ব্যাটারী চালিত অটো ভ্যান ও টমটম। এর ফলে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তেমনি হাইওয়ে ও ট্রাফিক  পুলিশের মাসিক মাসোয়ারা ও স্থানীয় বির্তকিত কিছু জনপ্রতিনিধিদের নিয়েও  প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যারা এসব গাড়ির গ্যারেজ মালিক সেজে মাসিক চাঁদা আদায় করছে। তারা কার স্বার্থে এসব অর্থ তুলেছেন এ বিষয়েও বহু প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ জনগণ।

জানা যায়, উপজেলার  ইছানগর ,খোয়াজনগর ও চরপাথরঘাটা এলাকায় যেসব অবৈধ ব্যাটারী চালিত রিক্সা সড়কে চলাচল করছে তাদের রয়েছে এলাকা ভিত্তিক একটি বড় সিন্ডিকেট। যাদের আওতায় থাকা অটো রিক্সার পেছনে সাঁটানো হয়েছে সাংকেতিক প্লেট ও সাত অক্ষরের গোপন নাম্বার। যাতে লেখা থাকে সাত গ্যারেজের মালিকদের নামের  প্রথম অক্ষর যথা: আরএসএমএএফএসএফ-রিক্সা নং ৩৯,৪০,৪১..ইত্যাদি। 

এসব নাম্বার সম্বলিত রিক্সাকে কখনো ট্রাফিক বা পুলিশ হয়রানি না করে অন্যান্য রিক্সা চালকদের হয়রানি করার কথা জানান। কেননা সুবিধা পাওয়া চালকেরা নির্দিষ্ট সময় পর মাসোহারা দিচ্ছেন প্রভাব বিস্তারকারী নেতাদের।

কয়েক মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মিল-কারখানার পরিবহনে যাতায়াত করা ট্রাক ও ব্যাটরী চালিত যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে বিভিন্ন সময়ে বহু দূর্ঘটনা ঘটছে। এতে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনার পাশাপাশি পঙ্গুত্ব ও আহত হয়েছেন অনেকেই। যদিও গত কয়েক মাস আগে এসব তিন চাকার অবৈধ যান বন্ধে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী কর্ণফুলী থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে শতাধিক ব্যাটারী জব্দ করেন। পরে অদৃশ্য কারণে সে অভিযানও থেমে যায়।

বর্তমানে প্রধান সড়কগুলোতে রাত-দিন ব্যাটারী চালিত এসব অবৈধ তিন চাকার যান চলতে দেখে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেন। ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও অটোরিক্সার বেলায় প্রশাসনের পদক্ষেপ তাহলে যা বায়ান্ন তা তেপান্ন নয় কি! 

জানা যায়, উপজেলার মহাসড়কে প্রায় ৫’শতাধিক ব্যাটারী চালিত ইজি বাইক অটো রিক্সা চলাচল করছে। এসব পরিবহনে দেখা যায়, পায়েল পরিবহন, আনারকলি পরিবহন, বিটারটেক, পরাগ পরিবহন, এইচ এক্সপ্রেস, আমানত এক্সপ্রেস, মিশুক এক্সপ্রেস সহ ইত্যাদি নামে। অপরদিকে ৫ শতাধিক ইঞ্জিন চালিত সিএনজি হতে টোকেন ও রশিদে চাঁদা আদায়ও অব্যাহত রয়েছে।

এসব যানবাহন চলাচলের নেতৃত্বে থাকা কথিপয় নেতারা, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন নামিয়ে দিয়েছে বলে প্রচার রয়েছে। যদিও থানার ক্যাশিয়ার পরিচয় নামধারী কুদ্দুস নামে আরেক ব্যক্তি এসবের সাথে জড়িত বলে কাঁনাঘোষা রয়েছে। থানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হলেও তাতে ক্যাশিয়ারের কি কাজ সেটাও বোধগম্য নয় অনেক সচেতন মহলের।

অনেকের ধারণা সেক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করছে থানা পুলিশ। যদিও সর্বৈব অস্বীকার করে সব পুলিশ। ফলে নিষিদ্ধ যানবাহনের চালকরা তোয়াক্কা করছেনা মহামান্য হাইকোর্টের রায় ও সরকারের সড়ক সেতু যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ।

অপরদিকে স্থানীয় সচেতন জনসাধারণ মনে করেন, মহাসড়কের প্রধান সড়কগুলোতে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলে সড়ক দূর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাবে। পাশাপাশি দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবে জানমাল ও মানুষের মহামূল্যবান জীবন।

অনেক সময় কর্ণফুলীতে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে থানা পুলিশ ব্যাটারী খুলে নিলে এর প্রতিবাদে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ করেন অটো রিকশাচালকেরা। নানা তদবিরে ব্যস্ত হয় স্থানীয় কতিপয় নামধারী নেতা ও নামস্বর্বস্ব শ্রমিক নেতা। যারা এসব যান চলাচলের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। যাদের সহায়তা ও আর্থিক লেনদেনের কারণে এসব যান চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গত কয়েকদিন আগে বেপরোয়া ভাবে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালাতে গিয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও এক যুবলীগ নেতার ঝগড়া হয়। এছাড়াও বিগত মাসে  চরপাথরঘাটা এলাকায় থানায় কর্মরত পুলিশ অফিসারও দ‚র্ঘটনার শিকার হন। এতে তিনি বেশ গুরত্বর আহত হয়েছিলেন বলে  জানিয়েছিলেন  সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ জুয়েল।

স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, আবাসিক মিটার ও চোরাই সংযোগের মাধ্যমে এসব রিক্সার ব্যাটারি চার্জ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধেও। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের (পিডিবি) এক শ্রেণির অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসোহারা দেওয়ার ফলে চোরাই বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে রিক্সার ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে থাকেন। এ ধরণের অভিযোগও কম নয়। যেহেতু ব্যাটারি চালিত রিক্সা দৈনিক ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা আর সাধারণ রিক্সার দৈনিক ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।

কর্ণফুলী থানা পুলিশ সুত্র জানা যায়, ‘পুলিশের তৎপরতার কারণে ব্যাটারী চালিত রিক্সা কমেছে। পরে সময় করে অভিযান আরো জোরদার করা হবে। মহাসড়ক থেকে অবৈধ টেম্পু, নছিমন, করিমন, টমটম, অটোবাইকসহ যানবাহন বন্ধে সরকারী নিদের্শনা পালন করা হবে।’

কর্ণফুলী জোনের  ট্রাফিক অফিস সুত্রে জানায়, ‘জনবল সংকট থাকায় উপজেলার বড় বাজারের প্রধান রাস্তাগুলোর মোড়ে মোড়ে  ট্রাফিক ও অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। দ্রæত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সচেতন মহলের একাংশ জানান, গরিব মানুষেরা বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না করে ধার দেনা করে অটো রিক্সা কিনে অবৈধ যান চলাচল করছে তা সত্যিই দুঃখজনক। এদের উচিত ছিলো ভিন্ন পেশায় যাওয়া। কেননা এটাতে ঝুঁকি রয়েছে প্রচুর।

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক ও অলিগলিতে ব্যাটারী চালিত নিষিদ্ধ অটো রিক্সা চলছে বলে মৌখিক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। জনগণের স্বার্থে এসব বন্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’