image

একমাস আগেই খালেদা জিয়াকে বরণে প্রস্তুত কেরানীগঞ্জের মহিলা কারাগার

image

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াই হতে পারেন ঢাকার কেরানীগঞ্জে নব-নির্মিত দেশের প্রথম কেন্দ্রীয় নারী কারাগারের প্রথম বন্দী। বেশ কয়েকদিন ধরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-নেতারা বেগম খালেদা জিয়াকে ঢাকার অদুরে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নেয়ার প্রস্তুতি গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ হতেই নিয়ে রেখেছেন কারা কর্তৃপক্ষ। মার্চের শেষ সপ্তাহে কারাকর্তৃপক্ষ আকর্ষিকভাবে একদিনেই কারাগারের সূর্যমুখী সেলসহ বিভিন্ন সেল  হতে ১৬০ জন বিএনপি- জামায়াত করেন এমন নেতা-কর্মী হাজতিদের কাশিমপুর কারাগারে বদলি করেছেন। কারণ সূর্যমুখী সেলটিতে ছিলো  বিএনপি- জামাতের বেশীর ভাগ নেতা-কর্মী। এই সেলটি কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের যে নতুন একতলা ভবনে বেগম খালেদা জিয়াকে রাখার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো, তার নিকটবর্তী। এমন কি কেউ জোড়ে ডাক দিলেও শোনতে পারবেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারের মনিহার, কর্ণফুলী ও রূপসা সেল থেকেও বেগম জিয়াকে রাখার সেলটি দেখা যায়। তাই সকল বিএনপি- জামাতের নেতা-কর্মীদের একদিনেই কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলি করে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার জামাত- বিএনপি মুক্ত করে প্রস্তুত করে ছিলো কেন্দ্রীয় কারাকর্তৃপক্ষ।

কারাসূত্রে জানা গেছে ২৮ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চেক-আপ শেষে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হতে পারে এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে কারাকর্তৃপক্ষ সেলসহ সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তবে ঢাকা মাওয়ার মহা- সড়কের রাস্তার নির্মাণ কাজের জন্য নিরাপত্তার কারণে হয়তো ওই দিন সকল প্রস্তুতি সত্বেও কেরানীগন্জের বদলে বেগম খালেদা জিয়াকে আবারও নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যাক্ত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন করাকর্মকর্তা জানান, মহিলাদের জন্য নির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারটির নির্মাণ কাজ পুরোপুরি এখনো শেষ না হলেও বেগম খালেদা জিয়াকে রাখার জন্য একটি একতলা সেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সদ্য কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন, এমন একজন জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যে সেলটিতে রাখার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তা রাতের বেলায়ও দিনের মতো রাখা হয় আলো জ্বালিয়ে এবং কেন্দ্রীয় কারাগারের সবগুলো ভবন থেকেই ওই সেলটি দেখা যায়।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেই সেলটির এখনো কোন নাম চুড়ান্ত করা হয়নি। অন্য কোন বন্দী না থাকলে এই মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারেও বেগম খালেদা জিয়াকে একাই থাকতে হতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দিলেই যেকোন দিন কেরানীগঞ্জের মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হবে। আর কারাকর্তৃপক্ষ প্রস্তুত আছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানীর পরবর্তী তারিখ আগামী ১৯জুন ধার্য করেছেন আদালত। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় মামলার শুনানী শুরু হয়। এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া অসুস্থ জানিয়ে সময় চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবিরা। আদালতে এই মামলার আসামী সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মৃত্যুর বিষয়টি  আদালতকে অবহিত না করায় এবং খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক এইচ এম রুহুল ইমরান আবেদন মুঞ্জর করে নতুন তারিখ আগামী ১৯জুন  ধার্য করেন।

উল্লখ্য ২০০৮সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রীসভার সদস্যসহ ১৬জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুদক।

মামলার অন্যতম আসামীরা হলেন বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল(অবঃ)আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যানমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার মোঃ আমিনুল হক, মোঃ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মুঈনুল আহসান, সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী একে এম মোশারফ হোসেন।

আদালতে ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও একে এম মোশরাফ হোসেনসহ ৫জন আসামী উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবীদের নেতৃত্ব দেন ব্যারিষ্টার মাসুদ রানা এবং সরকার পক্ষের আইনজীবি ছিলেন মোশারফ হোসেন কাজল।