আমাদের ছেলেবেলায় হাইস্কুল ড্রেস ছিলো সাদা ফুল প্যান্টের সাথে সাদা শার্ট; যার হাতা শীতকালে ফুল আর গরমে হাফ, কিংবা যেকোন সময়ে যেকোনটাই। প্রতিদিন স্কুলের শুরুতে এসেম্বলি হতো আর প্রতিদিনই এসেম্বলি শেষে রংড্রেসের ছাত্রদের খুঁজে বের করে রামধোলাই চলতো। একদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক খানিকটা খোশমেজাজে ছিলেন। সে সুবাদে তিনি এর একটা ব্যাখ্যা দিলেন এই বলে যে, "সাদা কাপড় সহজে ময়লা হয়। তাই ছাত্ররা যাতে সবসময়ই সতর্ক থাকে বা সতর্ক থাকতে শিখে এজন্য আমাদের স্কুলের এই পোশাক। কিন্তু সেই শিক্ষার জায়গায় ফাঁকিবাজি কিছুতেই মেনে নেয়া হবেনা।"
আজ সে ছেলেবেলার কথা, প্রধান শিক্ষকের কথা, সেই শিক্ষা উপকরণের কথা মনে পড়ছে বারবার। ছেলেবেলার শিক্ষাগুলো মনে গেঁথে যায়, মানি বা না মানি সারাজীবনের জন্য শুদ্ধতার মানদন্ড হয়ে থেকে যায়। সাদা পোশাক সহজে ময়লা হয়, যেমনটা সৃষ্টিগত ভাবে মানুষও দূর্বল আর পাপপ্রবণ হয়। কি অদ্ভুত মিল! প্রতিনিয়ত পাপ থেকে সতর্ক থাকাই তো মোমিনের কাজ, মুক্তির উপায়।
বুখারী থেকে প্রাসঙ্গিক একটি হাদীসও মনে ভাসছে এই মূহুর্তে, “আল্লাহর বান্দা তার পাপকে এমনভাবে দেখে যেন সে কোনো পর্বতের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছে আর এই ভয়ে সে তটস্থ যে, হয়ত এটা এখনই তার মাথার ওপর ভেঙ্গে পড়বে। আর পাপী তার পাপকে এমনভাবে দেখে যেন কোনো মাছি তার নাকের ডগায় এসে গেছে, আর সে তা হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।”
বিপরীতে কালো কিংবা গাঢ় রঙের জামাকাপড়ে সুবিধা অনেক। ময়লা, ঘাম সহজে বোঝা যায়না। দীর্ঘদিন পড়ার পরও! তবে কতোটা নোংরা হলো তা চারপাশের কেউ গুনাক্ষরে বুঝতে না পারলেও ধোপার চোখে কিন্তু ফাঁকি হয় না। ধোপাবাড়ির ধোলাইয়ের সাথে হড়হড়িয়ে বেড়িয়ে আসে পুঁতি গন্ধময়তার গভীরতা। ঠিক যেমন আল ইয়ামুল আখেরে জাহান্নামের ফেরেশতাকূল জেনে যাবে মানব পাপের ইতিবৃত্ত আর তারা প্রশ্ন করবে সেদিন, "তোমরা আজ এখানে কেন? তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আসেনি?
মানুষেরা বলবে, অবশ্যই আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল, আমরা তাকে মিথ্যাবাদী গণ্য করেছিলাম। যদি সেদিন আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম তাহলে আজ আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না।" -(সূরা মূলক ৬৭/৮-১০)
ইস্তিগফারের সাথে ক্ষমার দরখাস্ত রাখি তাই আল্লাহ্'র দরবারে যেভাবে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতের শুরতেই বলতেন,
اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْني مِنْ خَطَايَايَ، بِالثَّلْجِ وَالْماءِ وَالْبَرَدِ
হে আল্লাহ! আপনি আমার এবং আমার গুনাহসমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করুন যেরূপ দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার গুনাহসমূহ থেকে এমন পরিষ্কার করে দিন, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপসমূহ থেকে বরফ, পানি ও মেঘের শিলাখণ্ড দ্বারা ধৌত করে দিন।
(আল্লা-হুম্মা বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিলনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিস্সালজি ওয়াল মা-’ই ওয়াল বারাদ)
-বুখারী ১/১৮১, নং ৭৪৪; মুসলিম ১/৪১৯, নং ৫৯৮।
Developed By Muktodhara Technology Limited