image

টেকনাফে একদিনেই ১৬ লাখ ইয়াবা উদ্ধার 

image

টেকনাফে তালিকা ভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারী আইনশৃংখলা বাহিনীর কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহতের কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ফের বন্দুক যুদ্ধে ২পাচার কারী নিহত ও পৃথক অভিযানে ১৬লাখ ২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। কথিত বন্দুকযুদ্ধে দেশের শীর্ষ ইয়াবা ডন ও একাধিক ইয়াবা কারবারির তালিকায় শীর্ষে থাকা ব্যক্তি টেকনাফের হাজী সাইফুল করিম  নিহত হওয়ার পর  অনেকে ধারণা করেছিল এবার সীমান্তে ইয়াবা পাচার অনেকটা হ্রাস পাবে। তবে তার মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই বিজিবির অভিযানে ফের ১৬ লাখ ২হাজার ইয়াবার চালান জব্দের ঘটনায় অনেকে হতবাক হয়েছেন। 

টেকনাফ হ্নীলার নাফনদীতে গোলাগুলির পর বিজিবি জওয়ানেরা অভিযান চালিয়ে ৯লাখ ৬২হাজার পিস ইয়াবা ভর্তি কাঠের নৌকা জব্দ করেছে। ২জুন সকাল সাড়ে ১১টারদিকে টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল ফয়সাল হাসান খান ব্যাটালিয়ন হলরুমে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এই বৃহৎ ইয়াবার চালান উদ্ধারের বিবরণ দেন। চলতি বছরে বিজিবির অভিযানে এটি সর্ববৃহৎ চালান। টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা নাফনদীর উপকুল  থেকে মালিকবিহীন ৯ লাখ ৬২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে ২ বিজিবির সদস্যরা। ১ জুন শনিবার দিবাগত গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া  এলাকার নাফনদীতে হতে এ বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তবে এঘটনায় কোন পাচারকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।  বিজিবি সূত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তীদেশ মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় চালান টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়সল হাসান খানের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় বিজিবির একটি চৌকসদল দমদমিয়া বিওপি হতে একটি বিশেষ টহলদল নাফ নদীতে নৌকা যোগে গমন করে ওঁৎ পেতে থাকে। কিছুক্ষন পর একটি হস্তচালিত নৌকা নিয়ে মিয়ানমার হতে নাফ নদী পার হয়ে জাদিমোড়া বরাবর বিআরএম-৯ এর নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসলে টহলদল তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে। টহলদলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা মাত্রই সশস্ত্র ইয়াবা পাচারকারীরা টহলদলের উপর গুলি বর্ষন করে। এ সময় বিজিবি’র টহলদল আতœরক্ষার্থে কৌশলগত অবস্থান নিয়ে ০৮ রাউন্ড পাল্টা গুলি বর্ষন করে। এতে ইয়াবা পাচারকারীরা নৌকা হতে নাফ নদীতে পড়ে যায়। নদীতে জোঁয়ার থাকায় অনেক খোঁজাখুজির পরও পাচারকারীদের পাওয়া যায়নি। এসময় একটি নৌকাসহ মালিকবিহীন ৯ লাখ ৬২হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। 

তবে ইয়াবার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য ১জুন ভোর রাতে বিজিবির বন্দুক যুদ্ধে রোহিঙ্গাসহ ২পাচারকারী নিহত ও ৬ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা জব্দ করেছে ।

টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়সল হাসান খান ২জুন বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে জানান, শনিবার গভীর রাতে ৯ লাখ ৬২ হাজার ও একইদিন ভোররাতে বন্দুক যুদ্ধে রোহিঙ্গাসহ ২জন নিহত ও একলাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ৩১ মে অপর একটি অভিযানে ৫লাখ ৪০হাজার ইয়াবাসহ কাঠের নৌকা জব্দ করা হয়েছে। 

এসময় পাচার কারীদের লক্ষ্য করে ৮রাইন্ড গুলি বর্ষন করা হয়েছে। গুলির সময় ইয়াবা পাচারকারীরা নৌকা হতে নাফ নদীতে পড়ে যায়। নদীতে জোঁয়ারের পানিও রাতের অন্ধকার থাকায় অনেক খোঁজাখুজির পরও পাচারকারীদের পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া একই দিন ভোররাতে টেকনাফ বিজিবি’র পৃথক অভিযানে ৬ লাখ ৪০হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় বন্দুকযুদ্ধে দু’ ইয়াবা পাচারকারীও  নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধি লাশের সাথে বাঁধানো ৫০হাজার করে ১লাখ ইয়াবাও ২টি লোহার ধারালো কিরিচ উদ্ধার করা হয়। সুত্রে আরো জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১ জুন ভোররাতে টেকনাফস্থ কে কে খাল এলাকা দিয়ে ইয়াবার একটি বড় চালান মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে পাচার হতে পারে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ বিওপি হতে একটি বিশেষ টহলদল কে কে খাল এলাকায় কৌশলগত অবস্থান নেয়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ৪-৫ মিনিট গুলি বিনিময় হওয়ার পর ইয়াবা পাচারকারীরা গুলি করতে করতে ঘটনাস্থল হতে দ্রæত পালিয়ে যায়। গুলির শব্দ থামার পর টহলদলের সদস্যরা এলাকা তল্লাশী করে কে কে খালে বিজিবি ডিউটি পোষ্ট হতে ২০০ গজ পূর্ব দিকে ০২ জন ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাঁদার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে উভয়ের দেহ তল্লাশী করে শরীরে গামছা দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ৫০ হাজার করে এক লক্ষ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এছাড়াও ঘটনাস্থল হতে ০২ টি লোহার ধারালো কিরিচ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোক মারফত পরিচয় পাওয়া যায় ঃ মিয়ানমার নাগরিক, হ্নীলা জাদিমোড়া ব্রিটিশপাড়া শরনার্থী শিবিরের বাসিন্দা সুলতান আহমদের পুত্র মোঃ আব্দুল গফুর (৪০) ও টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বরইতলী গ্রামের মৃত শরিফের পুত্র  মোঃ সাদেক (২৩)।  এ ঘটনায় বিজিবি টহলদলের সিপাহী মোঃ আল ইমরান ও সিপাহী আব্দুল আউয়াল আহত হয়। এছাড়া বিজিবির অপর একটি অভিযানে  ৫ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। বিজিবি সুত্র মতে  ৩১ মে দিবাগত গভীর রাতে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন  (২ বিজিবি) এর অধীনস্থ দমদমিয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা নাফ নদী দিয়ে ইয়াবার একটি বড় চালান মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে পাচার হতে পারে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান, পিএসসি এর নেতৃত্বে দমদমিয়া বিওপি হতে একটি মাদক বিরোধী বিশেষ টহলদল তিনভাগে বিভক্ত হয়ে নাফ নদীতে নৌকা যোগে টহলে গমন করে। পাচারকারীরা টহলদলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা মাত্রই ইয়াবা পাচারকারীরা ওমরখালে নৌকাটিকে পানিতে ডুবিয়ে কেওড়া বাগানে লাফ দিয়ে নেমে কাঁদার মধ্যে দিয়ে দ্রæত পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে টহলদল কর্তৃক নৌকাটি উদ্ধার করে  তল্লাশী করে ৫ লাখ ৪০হাজার  পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করে। জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো ব্যাটালিয়ন সদরে জমা রাখা হয়েছে, যা পরবর্তীতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও মিডিয়া কর্মীদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হবে জানান বিজিবি কর্তৃপক্ষ।