image

দখলমুক্ত হচ্ছে না ফুটপাত : শুধু প্রতিশ্রুতি, অগ্রগতি নেই

image

দৈনিক আজাদীর সৌজন্যে বিশেষ ডেস্ক রিপোর্ট
মোরশেদ তালুকদার, দৈনিক আজাদী :: হকারদের শৃঙ্খলায় আনার প্রতিশ্রুতি আছে নগর পিতার। আবার এ প্রতিশ্রুতি পূরণে বিভিন্ন সময়ে আছে নানা উদ্যোগ গ্রহণের দাবিও। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদে সিটি কর্পোরেশনের ব্যানারে পরিচালিত হয়েছে অভিযান। আবার বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে অভিযানিক দলকে। যারা বাধা দিয়েছেন, তাদের কেউ কেউ খোদ মেয়রের অনুসারী হিসেবেও পরিচিত নগরবাসীর কাছে।

গত তিনবছর ধরেই নগরীতে হকার এবং তাদের শৃঙ্খলায় আনার গল্প এমন বৃত্তেই ঘুরছে। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি এবং উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে অগ্রগতি খুব একটা নেই। কোন কোন সময় সাফল্য এলেও তার স্থায়িত্ব ছিল সাময়িক। উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা বা একদিন পরেই যত্রতত্র সড়ক-ফুটপাত অবৈধ দখলে নিয়েছে হকাররা। এমন পরিস্থিতিতে, সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, বাধাহীন ফুটপাতে নিরাপদ পথ চলা কি স্বপ্নই থেকে যাবে? সড়ক ও ফুটপাত রক্ষার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোনো করণীয় নেই? তারা কি কেবল সড়ক-ফুটপাত শৃঙ্খলায় আনার গল্পই শুনাবেন?

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছর পর্যন্ত নগরীতে ১৪০টি সড়কে ফুটপাত আছে। যার দৈর্ঘ্য ২৬৭ কিলোমিটার। ফুটপাতগুলোর গড় প্রস্থ ১ দশমিক ৮০ মিটার। এসব ফুটপাতের বেশিরভাগ জায়গাজুড়েই হকার বসে। যেসব জায়গায় হকার বসে না তার সিংহভাগও নানাভাবে দখল হয়ে গেছে। ফুটপাত সংলগ্ন বিভিন্ন দোকানপাটের মালামাল রেখেই ফুটপাতগুলো দখল করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেল স্টেশন এলাকায় গত বৃহষ্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে করিম নামে এক পথচারী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমতল রিয়াজুদ্দিন বাজারের মুখ থেকে স্টেশন পর্যন্ত হেঁটে আসার সময় বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে হাঁটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু ফুটপাতেও হাঁটার মত জায়গা নেই। হকাররা দখল করে রেখেছে। অথচ বিভিন্ন সময়ে সিটি কর্পোরেশন হকারদের বসার সময় বেধে দেয়ার কথা বলে। ওই হিসেবে সকালে হকার থাকার কথা না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, নগরীর নিউমার্কেট থেকে আমতল, স্টেশন রোড, মুরাদপুর থেকে অঙিজেন পর্যন্ত সড়ক, বহাদ্দারহাট মোড়, আমতলী, চকবাজার, জিইসি মোড় থেকে এমএএস কলেজ পর্যন্ত অংশ, ইপিজেড, আগ্রাবাদসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাত দখলে নিয়ে ব্যবসা করছেন হকাররা। সকাল ১০টা থেকে ১১টা থেকে বসতে শুরু করেন হকাররা। দুপুর ১২টা-১টা হতে না হতেই সিংহভাগ ফুটপাত দখলে চলে যায় তাদের। বিকেলের দিকে কোথাও কোথাও মূল সড়কেও চলে আসেন তারা। এতে পথ চলতে বিঘ্ন ঘটে সাধারণ মানুষের।

স্থায়ী হকারদের বাইরে বিভিন্ন রিকশা ভ্যানের মাধ্যমে ব্যবসা করতে দেখা গেছে ভাসমান হকারদের। মূলত, এসব ভাসমান হকাররাই মূল সড়ক দখল করে থাকে। যা যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সৃষ্টি করছে তীব্র যানজট। অথচ ২০১৬ সালে হকারদের শৃঙ্খলায় আনার উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা ছিল সিটি মেয়রের। এর অংশ হিসেবে ওই বছরের ১৩ মার্চ চসিক ও হকার্সদের দুটি বৃহত্তম ফেডারেশনের সাথে বৈঠক করেছিলেন তিনি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ‘হকার সংগঠনগুলো চসিককে তালিকা সরবরাহ করবে। পরবর্তীতে চসিক যাচাই-বাছাই ও জরিপ করে প্রকৃত হকারদের একটি চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে তাদের পরিচয়পত্র দিবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ স্থান দিয়ে বসানো হবে নির্দিষ্ট হকারকে।’ পরবতীতে ৯ হাজার ৮৮৬ জন হকারের একটি তালিকা করা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের পরিচয়পত্র সরবরাহ করেনি চসিক।

এছাড়া ‘বৃহস্পতিবার ২টা থেকে, শুক্রবার ও শনিবারসহ সরকারি বন্ধের দিনে পূর্ণ দিবস এবং বাকি দিনগুলোতে বিকেল ৫টার পর হকাররা বসবেন’, চসিকের পক্ষে এমন ঘোষণা দিলেও সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেটারও যথাযথ তদারকি নেই বললেই চলে। ফলে দিনের প্রায় পুরোটা সময়জুড়েই নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছেন হকাররা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘চট্টগ্রাম সম্মলিত হকার্স ফেডারেশন’ এর সভাপতি মো. মিরন হোসেন মিলন দৈনিক আজাদীকে বলেন, হকাররা মোটামুটি শৃঙ্খলায় আছে। তাদের কোন ত্রিপল নেই, বাঁশ দিয়ে ঘেরাও নেই। আমাদের সংগঠনের সদস্যভুক্ত হকাররা চসিকের নির্ধারিত সময়ে ব্যবসা করেন। তবে আমরা মেয়রকে অনুরেধ করেছিলাম, ৫টার পরিবর্তে ৩টার সময় থেকে আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হোক। চসিক প্রতিশ্রুত আইডি কার্ড দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, যদি আইডি কার্ড দেয়া হয় তাহলে আরো বেশি সুশৃঙ্খল হতো।

খবর : দৈনিক আজাদী, ৩০ জুন, ২০১৯ইং, প্রথম পাতা