মসজিদের এক খাদেম আরেক খাদেমকে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে রেখে নামাজ আদায় করেছেন।নামাজ শেষে কিভাবে এই লাশ ঘুৃম করা যায় তা চিন্তা করেছেন।এর পরের ঘটনা আরো মর্মান্তিক।
আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের খাদেম হানিফ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও একমাত্র খুনি সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)।
পিবিআই প্রধান জানান, খাদেম হানিফকে হত্যার পরে পালিয়ে গিয়ে নিজের দাড়ি কেটে চেহারা পরিবর্তনের চেষ্টা করে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রামের ফুপুর বাড়িতে আত্নগোপন করেছিলো সাইফুল ইসলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই’র প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।
বনজ কুমার জানান, গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের আগ্রাবাদ এলাকার বেপারী পাড়ায় পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে।
পিবিআই জানায়, আজিমপুর গোরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদটি গত বছরের ৪ নভেম্বর উদ্ধোধন হয়। সেদিন থেকে আসামি সাইফুল খাদেম হিসেবে অস্হায়ী ভাবে যোগদান করেন। ওই মসজিদে তিন জন খাদেম ও একজন পরিচ্ছন্নকর্মী কর্মরত ছিল। এদের মধ্যে আসামি সাইফুল সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় মসজিদের উপ-কমিটি গত রমজানের পূর্বে নিহত আবু হানিফকে খাদেম হিসেবে নিয়োগ দেয় বলে সাইফুল পিবিআই কর্মকর্তাদের জানান।
নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই হানিফ তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতেন। স্বাভাবিকভাবেই আসামি সাইফুলকে বিভিন্ন কাজের জন্য নির্দেশ দিতেন হানিফ। কিন্তু সাইফুল সব কাজ ঠিক মতো মত করতেন না। কারণ হানিফকে নিয়োগ দেওয়ার পরে সাইফুলের পদ ছোট হয়ে গেছে। তিনি বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না। এসব কারণে সাইফুল পরিকল্পনা করেন হানিফকে খুন করার।
পিবিআই তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকান্ডের দিন গত ২ জুলাই যোহরের নামাজের পরে আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে নিহত হানিফ খাবার শেষ করে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়েন। ওই সময়ে ঘরে কেউ ছিল না। এই সুযোগে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসামি সাইফুল রান্নাঘর থেকে একটি ছুরি এনে হানিফের পেটে আঘাত করে। এরপর হানিফ জেগে উঠলে তার মুখে বাম হাত দিয়ে চেপে ধরে আসামি সাইফুল উপূর্যপরি হানিফের বুকে, পেটে ও গলায় একাধিক আঘাত করতে থাকে একপর্যায়ে হানিফের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে বাইরে থেকে প্লাটিকের বস্তা ও পলিথীন নিয়ে আসে এবং মরদেহটি বস্তায় ভরে পলিথীন দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে বারান্দায় একটি বাশের ঝুড়িতে রেখে দেয়।
তারপর, বাথরুম থেকে বালতিতে পানি এনে তোষকের কভার ভিজিয়ে ফ্লোরের রক্ত একাই পরিষ্কার করে। এরপর আসামি সাইফুল আসরের নামাজ পড়তে যায়। নামাজ শেষে আসামি সাইফুল তার ব্যবহৃত রক্তামাখা কাপড় বাথরুমে পরিষ্কার করে।
পিবিআই আরও জানায়, ওই দিন রাত ৯টার দিকে আসামি সাইফুল বাইরে খেতে যায়। রাত ১০ টার দিকে সে রুমে ফিরে আসে। এ সময় বাহাউদ্দিন নামে (ক্লিনার)ও আরেক খাদেম ফরিদ বাইরে থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রুমে ফিরে আসে। বাহাউদ্দিন ও ফরিদ আসামি সাইফুলকে খাদেম হানিফ কোথায় আছে জানতে চাইলে সাইফুল তাদের জানায় বাইরে গেছে।
পিবিআই সুত্রে জানা গেছে খাদেমকে হত্যার পরে গভীর রাতে তার লাশ আজিমপুর কবরস্থানের ভাঙা কোন কবরে লাশ ঢুকিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সাইফুল। কিন্তু অপর খাদেম ফরিদ ওই দিন অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকায় আসামি সাইফুল তার পরিকল্পনা বদলায়। লাশ ফেলেই পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রাত সাড়ে এগারোটায় সাইফুল খাদেম ফরিদকে বলে যে তার বাবা মারা গেছে এখনই যেতে হবে।এই বলে সে তার ব্যবহার্য সব জিনিসপত্র নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
পরের দিন গত ৩ জুলাই রাতে ক্লিনার বাহাউদ্দিন ও আরেক খাদেম ফরিদ নিহত খাদেম হানিফের কক্ষে ঘুমাতে যায়। সেই সময় তারা দুর্গন্ধ পেয়ে পাশের ব্যালকনির থাইগ্লাস টান দিয়ে একটি বাশের খালি ঝুড়ির মধ্যে পলিথীন দিয়ে প্যাঁচানো একটি বস্তা দেখে। সেটি খুলে তারা খাদেম হানিফের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দিলে লালবাগ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
ডিআইজি বনজ কুমার জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে আসামি সাইফুল পালিয়ে যায়। সে প্রথমে সেনবাগ নোয়াখালী তাদের নিজের বাড়িতে যায়। পরে সেখান থেকে তার শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামের খুলশীতে গিয়ে আশ্রয় চায়। সেখানে তার শ্বশুর আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানালে রেলওয়ে হাসপাতালের নিকট চাচার কাছে যায়। সেখানেও আশ্রয়ের সুযোগ না পাওয়ায় আগ্রাবাদ বেপারী পাড়ায় তার ফুফুর নিকট আশ্রয় নেয়। সেখানে সে আত্মগোপন করে থাকে। আর নিজের চেহারা যাতে সহজে কেউ চিনতে না পারে সে জন্য দাড়ি কেটে ফেলেন। কিন্ত পুলিশ তাকে সনাক্ত করে আটক করতে সক্ষম হয়।এক সপ্তাহের মধ্যেই এই চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদঘাটন ও মুল খুনিকে আটক করা হয়।
Developed By Muktodhara Technology Limited