image

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে কর্ণফুলীতে ভাড়া নৈরাজ্য !

image

কর্ণফুলীতে চলাচলকারী গ্যাস চালিত ফোর ষ্টোক অটো রিক্সা সি.এন.জিগুলো (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) যাত্রীদের কাছ গত এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করেই বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। ফলে অটো সিএনজি গাড়ির মালিক ও চালক সমিতি এবং প্রশাসনসহ স্থানীয় জনগণের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করলেও এখনো কোন সুরাহা আসেনি বলে জানা যায়। 

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে কর্ণফুলী উপজেলায় এক যৌথ বৈঠক শেষে ভাড়া না বাড়িয়ে পুর্বের ভাড়া বহাল রাখার জন্য সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক’কে নিদের্শ দেন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। 

সকালে মিটিং হলেও বিকেলে আবারও বেশি ভাড়া আদায় করায় স্টেশনে সিএনজি ড্রাইভার ও যাত্রীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি করতে দেখা যায়। পরক্ষণে আবার চরপাথরঘাটার পুরাতন  ব্রীজঘাট চত্বরে বাড়তি ভাড়া নেওয়া যাবেনা বলে শ্লোগানে শ্লোগানে ঝটিকা মিছিলও করেছে যাত্রীরা।

অপরদিকে সিএনজি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে ন্য‚নতম ভাড়া আদায় না করে নিজেরাই নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে। তালিকায় দেখা যায়, বোর্ড বাজার টু ব্রীজঘাট ১০ টাকা, বোর্ডবাজার টু সৈন্যেরটেক ৮ টাকা, বোর্ডবাজার টু মইজ্জ্যারটেক ১০ টাকা, বোর্ডবাজার টু খুইদ্দ্যারটেক ১০ টাকা, মইজ্জ্যারটেক  টু সৈন্যেরটেক ১০ টাকা,  ব্রীজঘাট টু খুইদ্দ্যারটেক ১০ টাকা, আলী হোসেন মার্কেট টু ব্রীজঘাট ১৫ টাকা, পল্লী বিদ্যুৎ টু ব্রীজঘাট ১৫ টাকা, জুলধা পাইপের গোড়া টু ব্রীজঘাট ২০ টাকা, গোয়ালপাড়া টু ব্রীজঘাট ২০ টাকা, আলী হোসেন মার্কেট টু বোর্ডবাজার ৫ টাকা, খুইদ্দ্যারটেক টু মইজ্জ্যারটেক ৫ টাকা, পাইপের গোড়া টু বোর্ডবাজার ১০ টাকা, গোয়ালপাড়া টু বোর্ডবাজার ১০ টাকা ও সিরিয়ালের গাড়ি ওঠানামা ১০ টাকা জানিয়ে তালিকায় স্বাক্ষর করেন কর্ণফুলী থানা অটো রিক্সা ও অটো টেম্পু ফোর ষ্টোক শ্রমিক কল্যাণ বহুমূখী সমবায় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক। 

এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের সঙ্গে সিএনজি পরিবহনের  ড্রাইভারদের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, এমনকি ছোটখাটো হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। কিন্তু স্বার্থসিদ্ধির বিষয় থাকায় স¤প্রতি উপজেলায় ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি ও থানা প্রশাসন অনেকটা নীরব বলে মন্তব্য করেন জুলধার সিরাজ, মনির ও আলী আকবর নামে তিন যাত্রী।

চালকদের দাবি, গ্যাসের দাম বাড়ায় জ্বালানি খরচ বেড়েছে। এ কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে। মালিকের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিতে গাড়ি চালানোর কারণে বাড়তি ভাড়া না নিলে এ লোকসান তাদের বহন করতে হবে।

যাত্রীদের অভিযোগ, গাড়ি ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উচ্চ আদালতেও বিষয়টি শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। তাই মালিক-শ্রমিকরা এখনই বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় মুরুব্বি হাজী সৈয়দুল হক। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এ নৈরাজ্য শুরু হয়েছে বলে দাবী জনগণের।

সড়ক পরিবহন স‚ত্রগুলো জানায়, গ্যাসের দাম বাড়ার পর অটোরিকশা ও সিএনজির ভাড়া বাড়বে কি বাড়বে না, বাড়লে কত বাড়বে, তা এখনো নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও ভাড়ার হার নির্ধারণের আগে বেশি ভাড়া না নিতে চালক ও মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে। ভাড়া নির্ধারণের আগেই বেশি ভাড়া আদায় করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভাড়া নৈরাজ্যে কতটা লাগাম টানা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সংশয় প্রকাশ করেছে। তাদের ভাষ্য, অতীতেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক-চালকরা তাদের খেয়াল খুশি মতো ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে। ওই সময়ও  প্রশাসন নানা ধরনের শাস্তিম‚লক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েও তা নথিপত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পরে বেশি ভাড়া আদায় করেছে, যা পরবর্তীতে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারও আগের মতো একই ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কর্ণফুলীর যাত্রীরা।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানা অটো রিক্সা ও অটো টেম্পু ফোর ষ্টোক শ্রমিক কল্যাণ বহুমূখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘নতুন করে উপজেলায় সিএনজি পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণের কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও গ্যাসের ম‚ল্য বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ফিলিং স্টেশন গুলো ড্রাইভারদের কাছ থেকে গ্যাসের দাম বেশি নেওয়াতে ড্রাইভাররাও একটু বেশি ভাড়া আদায় করাতে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে তা স্বীকার করছি। 

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘যাত্রী হয়রানী না করতে ও অতিরিক্ত ভাড়া না নিয়ে পুর্বের ভাড়ায় সিএনজি চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সমিতির নেতাদের।  সাত দিন পর পরবর্তী বৈঠকে বসে পুনরায় সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে তিনি জানান।