চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর এক্সরে মেশিন ১০ বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। পৌনে ৩ কোটি টাকার অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন বিকল, অর্ধেক চিকিৎসকের পদ শূন্য, চিকিৎসকদের জন্য নির্মিত আবাসিক কোয়ার্টারগুলো খালি দীর্ঘদিন যাবৎ। জরুরি বিভাগে প্রয়োজনে পাওয়া যায় না অনেক চিকিৎসককে। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ হতে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় অভিযোগ বোয়ালখালীবাসির।
পরিসংখ্যানুসারে জানা যায়, ৯ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে ১৩৭.২৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি উপজেলা বোয়ালখালী। এখানকার প্রায় ৪ লক্ষাধিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারীভাবে নির্মিত হয়েছে ৫০ শয্যার ১ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৯ টি এফ ডাব্লিউ সি ও ৬ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এসবগুলোতে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে মোট ৩১ জন চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী রয়েছে। রয়েছে রোগ নিরূপনী অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ । তারপরও চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে বার-বার অভিযোগ তুলেন বোয়ালখালীবাসি। এ নিয়ে রোগী ও ডাক্তার-কর্মচারীদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা, বাদানুবাদ লেগে থাকতে দেখা যায় প্রায় সময়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৭ সালের শেষের দিকে বিকল হয়ে পড়ে পুরাতন এক্সরে মেশিনটি। এর ৩ বছর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে ২০১০ সালের মার্চে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার মূল্যের ৫০০ এম এম আধুনিক একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয় বোয়ালখালী হাসপাতালে। তবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও টেকনিশিয়ান জটিলতায় নতুন এক্সরে মেশিনটি চালু করা সম্ভব হয়নি কখনো। ফলে এক্স-রে মেশিন পেয়েও এর সুফল ভোগ করতে পারেননি বোয়ালখালীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কেউ।
সূত্রে জানা যায়, পুরোনো এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুবাধে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট তৎকালীন এক্স-রে টেকনেশিয়ান (রেডিওগ্রাফি) মো. বাবুল মিয়াকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল ও মিডফোর্ড হাসপাতালে প্রেষণে নিয়ে যাওয়া হয়। বোয়ালখালীতে নতুন এক্সরে মেশিন বরাদ্দ হবার প্রায় ৩-৪ বছর পর প্রেষণে থাকা টেকনেশিয়ান বাবুল মিয়াকে তার কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার জন্য চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত এক্স-রে টেকনেশিয়ান আবুল কালাম প্রধানসহ বোয়ালখালীতে পরপর আরো ৩-৪ জন টেকনেশিয়ানকে পদায়ন করা হয়। তারা বিভিন্ন অযুহাতে সেই বদলি ঠেকিয়ে ফেলেন। ফলে টেকনেশিয়ান জটিলতায় পড়ে দীর্ঘদিন চালু করা যায়নি এ মেশিন। শেষতক একজন টেকনিশিয়ান আসার কারণে এ জটিলতা দূর হলেও সরকারের দেওয়া নতুন এক্স-রে মেশিনটি আর চালু করা যায়নি কখনও। এতে বোয়ালখালীবাসীর কপালে আর জুটলো না ডিজিটাল এক্স-রে সেবা। ফলে সরকারি এক্স-রে সুবিধা বঞ্চিত রোগী সাধারণকে নিম্নমানের সেবা গ্রহণ করতে হচ্ছে বাইরের বিভিন্ন রোগ নিরূপণ কেন্দ্র থেকে। এ চাহিদাকে পুঁজি করে স্থানীয় রোগ নিরুপনী কেন্দ্রের মালিকরা রিপোর্ট দেওয়ার নামে প্রতারণা করছেন গ্রাহকদের সাথে। হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।
২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির ৪র্থ সভা চলাকালীন সময়ে স্থানীয় সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদল ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ৫বছরেও চালু করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ১৫ দিনের মধ্যে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি সচল করে জনসেবায় উন্মুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ নির্দেশের সাড়ে ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শুধুমাত্র চিঠি লিখে দায় সেরেছেন কর্তৃপক্ষ। ৫০০ এমএম ডিজিটাল এক্সরে মেশিন চালু করতে না পারায় অবশেষে অলস পড়ে রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পুরাতন ভবনের একটি কক্ষে। আর এক্স-রে টেকনিশিয়ানকে প্রেষণে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প.কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান এলাকাবাসির এসব অভিযোগের সাথে দ্বিমত পোষন করে বলেন , ৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১২ টি পদই শূন্য, আবার কেউ আছেন অর্জিত ছুটিতে, কেউ আছেন সংযুক্তিতে। মূল্যবান ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি দীর্ঘদিন যাবৎ অচলের কারণে সামান্য আঘাত পাওয়া রোগীদেরও স্থানান্তর করতে হচ্ছে অন্যত্র ।
Developed By Muktodhara Technology Limited