image

চন্দনাইশে মোগল সেনার ২২ কবর ও নবী (দঃ) এর কদম চিহ্নঃ প্রাচীণ স্থাপত্যের নিদর্শন

image

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের বাগিচাহাট এলাকায় ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তৈরী আধু খাঁর মসজিদ সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে চারদিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একটি চত্বরে একই ডিজাইনে বাঁধানো দুটি সারিতে ২২ টি কবর রয়েছে। এগুলো মুসলিম ঐতিহ্য ও মোগল স্থাপত্য রীতিতে তৈরী। দিল্লীর রাজকীয় কবরস্থানের আদলে এখানকার কবরগুলোর নির্মাণশৈলী একই প্রকৃতির।

জনশ্রুতিমতে, মোগল আমলে চট্টগ্রাম বিজয়কালে মোগল সীমানা নির্ধারণে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে পরিচালিত অভিযানকালে নিহত মোগল পক্ষের উর্ধ্বতন ২২ সেনা অফিসারকে এখানে দাফন করা হয়। আর এটির নাম রাখা হয় 'বাগ-ই-শাহ' বা বাদশাহদের বাগান। কালের বিবর্তনে মানুষের মুখের কথায় এ স্থানটির নাম বাগিচা হাট হয়ে যায়।

চট্টলা বিশারদ মরহুম পন্ডিত আবদুল হক চৌধুরীর পুত্র আহমেদ আমিন চৌধুরী 'বাগিচারহাটঃ বিকৃত নামের বিস্তৃত একটি মোগল জনপদ' প্রবন্ধে লিখেছেন, 'শঙ্খনদীর পাড় পর্যন্ত মোগল সীমানা নির্ধারণের জন্য ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মোগল অভিযান, ২য় বার লোহাগাড়া অভিযান, ৩য় বার আলী কদম অভিযান ও ৪র্থ বার লামা অভিযানে মোগল পক্ষের নিহত উর্ধ্বতন সেনা অফিসারদের কথিত বাগিচাহাটের রাজকীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। উর্ধ্বতন মোগল সৈনিকদের কবরস্থানের মর্যাদা রক্ষার্থে ২২ টি কবরকে একইভাবে একই উপাদানে একই স্থানে মোগল স্থাপত্য রীতিতে ও শিল্প সুষমায় সজ্জিত করে এর নাম রাখা হয়েছিল 'বাগ-ই-শাহ'। অর্থাৎ শাহদের বাগান। এখানে বাগান বলতে শাহী কবরস্থান বোঝানো হয়েছে।'

কবরস্থানের পাশের খান জামে মসজিদে সংরক্ষিত রয়েছে নবী (দঃ) এর পবিত্র কদম চিহ্ন। একটি বড় পাথরে খোদিত এক পায়ের চিহ্ন থেকে সর্বদা পানি নিঃসরণ হয় এবং অপর পায়ের চিহ্ন সর্বদা শুকনা থাকে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ফৌজদার এয়াসিন খাঁ একবার আধু খাঁর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে চট্টগ্রাম নগরীতে দাওয়াত করেন। আধু খাঁর তরবারি দেখে মুগ্ধ হন এয়াসিন খাঁ এবং তা পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আধু খাঁ দোহাজারী দুর্গে পৌঁছে তাঁর তরবারির হাতলটি নবাবের কাছে সসম্মানে পাঠিয়ে দেন। বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে আধু খাঁ প্রচুর ভূ-সম্পত্তি লাভ করেন। সে সঙ্গে এয়াসিন খাঁ পবিত্র মক্কা নগরী থেকে আনা নবীজির পায়ের চিহ্নসংবলিত পাথর উপহার দেন আধু খাঁকে। আরো দেন বড় পীর আবদুল কাদের জিলানীর (রহ.) পায়ের চিহ্ন। আধু খাঁ সেসব স্থাপন করেন তাঁরই বাগানবাড়ির খাঁ মসজিদে (যা চন্দনাইশ উপজেলার বাগিচারহাট এলাকায় অবস্থিত)।