চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় দুই দিনের ব্যবধানে আরো একজন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম আরিফুল ইসলাম (৩৫)। সে দোহাজারী পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের ফুলতলা এলাকার মোস্তাক আহমেদের ছেলে।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে দোহাজারী সেইফ হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আরিফুল ইসলামের (এ ক্যাটাগরির) ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।
ডেঙ্গু রোগী আরিফুল ইসলামের বন্ধু দোহাজারী জামিজুরী আঃ রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, "গত তিন দিন ধরে আমার বন্ধু জ্বরে আক্রান্ত। গতকাল (শুক্রবার) রাতে ডাঃ মুহাম্মদ শেখ সাদীর প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে গেলে ডেঙ্গু সন্দেহে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি। দোহাজারী থেকে চন্দনাইশ উপজেলা সদরের দুরত্ব এবং ঝক্কি ঝামেলা থেকে বাঁচতে শনিবার সকালে দোহাজারী পৌর সদরে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে পরীক্ষার পর রিপোর্ট দেখে আমার বন্ধুকে ডেঙ্গু রোগী হিসেবে শনাক্ত করে আতংকিত না হয়ে বাসায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়ার ও ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেইফ হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সত্বাধিকারী রূপন বিশ্বাস জানান, "শনিবার সকাল ১০ টায় রোগীর রক্ত সংগ্রহ করে দুপুর ১টায় রিপোর্ট প্রদান করি। রিপোর্টে এ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু সনাক্ত হয়েছে। রাতে সিভিসি রিপোর্ট প্রদান করবো।" ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএসওয়ান স্ট্রিপের মূল্যবৃদ্ধি সত্বেও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভর্তুকি দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করছেন বলে জানান তিনি।
ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মুহাম্মদ শেখ সাদী বলেন, "শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে আমার প্রাইভেট চেম্বারে জ্বরের চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন আরিফুল ইসলাম নামের একজন রোগী। ডেঙ্গু সন্দেহ হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলাম তাকে। শনিবার দুপুরে রিপোর্ট দেখে ডেঙ্গু শনাক্ত করি, এবং আতংকিত না হয়ে বাসায় মশারি টানিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দেই। প্রতিদিন ব্লাড প্রেশার মাপার পাশাপাশি জ্বর বেশি হলে প্যারাসিটামল সাপোজেটরি ব্যবহারের পরামর্শও দেই তাকে। তবে অন্য কোন ব্যথার সাপোজেটরি ব্যবহার করা রোগীর জন্য বিপদজনক, এতে মৃত্যুও ঘটতে পারে।" সকল ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, "জ্বরের মত স্বাভাবিক চিকিৎসা করলে এটি সেরে যাবে।"
এদিকে দোহাজারী হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষা কীট এনএসওয়ান না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন রোগীর স্বজন বলেন, "দোহাজারীতে এখন পর্যন্ত দু'জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার জন্য এখন একমাত্র ভরসা বেসরকারি ক্লিনিক। চিকিৎসকেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে পরীক্ষার পরামর্শ দিলেও দুরত্বের কারনে রোগীরা সেখানে না গিয়ে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে পরীক্ষা করছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত কোন রোগী শনাক্ত হয়নি। অথচ পরীক্ষা কিট সেখানে অলস পড়ে আছে। চন্দনাইশ উপজেলার তিন ইউনিয়ন ও সাতকানিয়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের রোগীদের একমাত্র ভরসাস্থল দোহাজারী হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষা কীট প্রদানের দাবি জানিয়েছেন রোগীর স্বজন ও স্থানীয় সচেতন মহল।
এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ জিএম প্রিয় বালী বলেন, "আমি একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। আপনি চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করুন।"
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১ আগস্ট) দোহাজারী পৌরসভার লালুটিয়া এলাকার মোঃ ইদ্রিস নামের এক রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
Developed By Muktodhara Technology Limited