image

বাঁশখালীতে সরকারী সহযোগীতা পাচ্ছেনা অর্ধেক জেলে : কার্ডধারীদের এক-তৃতীয়াংশ ভুয়া

image

১৬ বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন সুব্রত বড়ুয়া। ৮ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ১ কন্যার বিয়ে দিয়েছেন। বাকীরা সংসারের টানাপোড়নে খেয়ে না খেয়ে একজনের আয়ের সংসারে চলছে সীমাহীন কষ্টে। সরকার ঘোষিত ৬৫ দিন মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীতে মাছ শিকার বন্ধের সাথে তার পরিবারের দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। প্রকৃত জেলে হওয়ার পরেও তার কাছে নেই জেলের কার্ড। কতৃপক্ষের কাছে বার বার বলে আসলেও তার নাম সরকারি খাতায় জেলে হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাই মাছ ধরা বন্ধে সরকারি সহোযোগিতা জুটেনি তাদের ভাগ্যে।

বাঁশখালী উপজেলার শিলকুপ ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের শিলকুপ বড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা উপেন্দ্র বড়ুয়ার ছেলে সুব্রত বড়ুয়া। একই ওয়ার্ডের এনাম উদ্দীন, মনির উদ্দীন, নুরুন্নবী, জয়নাল উদ্দীন, নাছির উদ্দীন, এনামুল হক, জামাল উদ্দীন, টিপু সোলতান, জাহাঙ্গীর আলম, ফেরদৌস, শাহেদ, তাজর মুল্লুক, অনিল বড়ুয়া, নুর মোহাম্মদ এদের কারো কাছেই নেই মৎস্যজীবীর এই কার্ড। মৎস্যজীবী না হয়েও ওই ওয়ার্ডের ১৫ জনের অধিক মৎস্যজীবীর কার্ড পেয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। অতচ তারা পাহাড়ী চাষাবাদে, দিনমজুরের কাজে ব্যস্থ থাকে।

ওই ওয়ার্ডের মত শিলকুপ ইউনিয়নের ১, ২,৩,৪ নং ওয়ার্ডের আরো প্রায় ৪শতাধিক জেলে বাদ পড়েছেন মৎসজীবী কার্ড থেকে এমনটি জানান স্থানীয় ইউপি সদস্যরা। ২নং ওয়ার্ডের হেড পাড়ার মৎস্যজীবী ওমর মিয়ার পুত্র আব্দুর রহিম জানান, পূর্ব পুরুষ থেকে আমরা সাগরে মাছ ধরি। সাগরে মাছ ধরার কাজে ২০ বছর অতিবাহিত হলেও কপালে জুটেনি ১টি মৎস্যজীবী কার্ড।

অন্যদিকে, মাছ ধরা ও মাছের ব্যবসার সাথে সম্পর্ক নেই কিন্তু মৎস্যজীবী কার্ড করে সরকারি সুবিধা নিচ্ছে এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এদের বেশির ভাগ সংশ্লি­ষ্ট ওয়ার্ডের তালিকা প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিকটাত্মীয়। তালিকা তৈরির সময় কৌশলে তাদের নাম উঠিয়েছে। অনেক প্রবাসীদের মৎসজীবীর খাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার ছনুয়া, পুইছড়ি, শেখেরখীল, চাম্বল, শিলকুপ, গন্ডামারা, সরল, কাথরিয়া, খানখানাবাদ, বাহাড়ছড়া ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার জেলে মাছ শিকার ও ব্যবসায়ের সাথে জড়িত।

বাঁশখালী উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, উপজেলার ১৩ হাজার ৬শত লোক মৎস্য পেশার সাথে জড়িত। মৎস্যজীবী হিসেবে নিবন্ধিত মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৮হাজার ৭শত ২৮ জন, তার মধ্যে কার্ড পেয়েছেন ৬হাজার ৭শত ৮৩ জন। আবেদন কারীর সংখ্যা জানতে চাইলে অফিস সূত্র জানিয়েছেন, এখনো নতুন কেউ আবেদন করেননি। তবে নিবন্ধিত সহ মোট ৮ হাজার ৭ শ ২৮ জনকে ৪৬ কেজি চাউল দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি উপজেলা মৎস্য অফিসের। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের জেলেদের দাবি, তাদের এক তৃতীয়াংশ জেলেরা সরকারি কার্ডের তালিকায় নেই। ফলে বন্ধের মৌসুমে জাল বন্ধ রাখার সাথে চুলায় হাঁড়ি উঠানো বন্ধ হয়ে গেছে।

বেশ কয়েকজন জেলেদের অভিযোগ, প্রকৃত জেলেদের প্রায় অর্ধেকেরই মৎসজীবী কার্ড নেই। অনেক জেলে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোন ফল পায়নি। কার্ড ছাড়া সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা তারা পাচ্ছেনা। দ্রুত প্রকৃত জেলেদের তালিকা করে সহযোগিতা না করলে জেলেরা না খেয়ে মরে যাবে।

জেলেদের অভিযোগ স্বীকার করে শিলকুপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মহসিন বলেন, আমার ইউনিয়নের কার্ডধারী মৎসজীবীর সংখ্যা ৭৫৫ জন। এর ভিতর যারা পুকুরে মাছ চাষ করছে তারাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নিয়মবহির্ভূত অনেকেই মৎস্যজীবীর কার্ড পেয়েছে কিন্তু সরাসরি নদীতে গিয়ে মাছ ধরে এমন জেলের সংখ্যা বাদ পড়েছে ৪শতাধিক। তিনি বলেন, তালিকাগুলো পুরনো হওয়ায় এগুলোতে অনেক সমস্যা রয়েছে। তাই নতুন করে প্রকৃত জেলেদের কাছে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছাতে না পারলে তারা হয় না খেয়ে মরবে, না হয় আইন অমান্য করে সাগরে নামবে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমান বলেন, যারা প্রকৃত মৎস্যজীবী হয়েও নিবন্ধিত হয়নি তাদেরকে আগামীর (২০১৯-২০২০) অর্থ বছরে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। বিগত সময় যারা মৎস্যজীবীর তালিকা প্রণয়ন করেছে তাদের ভুল তথ্যের কারণে অনেকেই মৎস্যজীবী না হয়েও কার্ড পেয়েছেন। আগামী অর্থ বছরে তথ্য হালনাগাদ করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের রেখে ভূয়া কার্ডধারীদের ছাঁটাই করা হবে বলেও তিনি জানান।