image

দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীদের ঈদ ভোগান্তি : প্রশাসনও যেন অসহায়

image

সামনের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঘরমুখো যাত্রীদের কাছ থেকে গণপরিবহনে কয়েকগুণ ভাড়া আদায়ের যে নৈরাজ্য চলছে তাতে যাত্রীদের পাশাপাশি প্রশাসনকেও অসহায় মনে হয়েছে। শুধু আসন্ন কোরবানির ঈদ নয়,যেকোন উৎসব কিংবা উপলক্ষকে ঘিরে এমন হয়রানি এ রুটে নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। চলে আসা এ নৈরাজ্য ও হয়রানি যাদের রোধ করার কথা তারাও নিরব কিংবা অপারগ এ অযোক্তিক ভাড়া আদায় থামাতে।

সকাল হতে না হতেই যেন শুরু হয় পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের আনন্দ উল্লাস। তবে এই উল্লাস ঈদের নয়, অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি বাতিলপুর্বক নতুন গাড়ি নামানোর নয়! এই আনন্দ সিন্ডিকেট করে বাড়তি ভাড়া নেয়ার আনন্দ।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮ উপজেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক, যা আরকান সড়ক নামেও পরিচিতি। এ সড়কে প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম শহরে আসা যাওয়া করছে লক্ষাধিক মানুষ। এ সড়কে যাত্রী যতই বাড়ছে চালক ও হেলপারদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যও বেড়ে চলেছে। ঈদের কয়েকদিন আগের থেকেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার ফলে যাত্রী হয়রানী বাড়ছে। প্রচার আছে, গাড়ির মালিক, চালক ও হেলপারসহ কিছু সুবিধাবাদী মানুষ কর্তৃক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় না।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম শহরের ব্যবধান ১৬ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিলেই চট্টগ্রাম শহর। পটিয়া উপজেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রায় ৬ লাখের অধিক মানুষের বসবাস। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরিজীবী ও ছাত্রদের লেখাপড়ার তাগিদে প্রতিদিন আনোয়ারা,পটিয়া,বাশখালিসহ আশেপাশের  উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরে এ পথে নিয়মিত যাতায়াত করে যেতে হয় হাজার হাজার যাত্রীদের। বাড়তি ভাড়া আদায় ও বাসের কৃত্রিম সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।

পটিয়ার যাত্রীদের ২০ টাকা নির্ধারিত ভাড়া হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। গাড়ির চালকদের ইচ্ছাকৃত কৃত্রিম গাড়ি সংকটের কারণে যাত্রীদের দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এ যেন মগের মুলুক!জোর যার মুল্লুক তার। তা ছাড়া  ঈদ-পার্বন ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবারের নৈরাজ্যের কথা না বললেই নয়। বৃহস্পতিবার  সন্ধ্যার পর থেকে কর্ণফুলী ব্রীজ এলাকায় পটিয়ামুখী যাত্রীদের গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে কর্ণফুলী ব্রীজ পার হতে হয়। পরে, মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিক্সা, মহেন্দ্র, টেম্পোযোগে পটিয়ায় আসতে হয়।

অন্যদিকে, সপ্তাহের শনিবার ও রোববার পটিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরমুখী গাড়িগুলো একইভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ২০ টাকার ভাড়ার বিপরীতে দ্বি-গুণ তিন গুণ ভাড়া আদায় করে।

পটিয়া ছাড়াও আনোয়ারা, বাশখালী,চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া উপজেলার হাজার হাজার যাত্রীও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে যাতায়াত করে।

কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে চন্দনাইশের যাত্রীদের নির্ধারিত ভাড়া ৩০টাকার স্থলে সকালে শহরে যেতে ৬০ টাকা এবং সন্ধ্যায় শহর থেকে চন্দনাইশে আসতে ১২০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে।

সাতকানিয়া কেরানিহাট যাত্রীদের জন্য ৬০টাকার স্থলে সকালে ১০০ টাকা এবং এবং সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে সাতকানিয়া কেরানিহাটে আসতে ২০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।

লোহাগাড়া আমিরাবাদ যাত্রীদের জন্য ১০০টাকার স্থলে সকালে চট্টগ্রামে যেতে ১৫০টাকা এবং সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে আসতে ২৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।

আনোয়ারা রুটে ২০ টাকার ভাড়া নেওয়া হয় ৫০/৬০ টাকা। মহিলা কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গেলে চরম ভোগান্তি সহ্য করতে হয়।

অধিকাংশ সময়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করতে গেলে চালক ও হেলপাররা যাত্রীদের উপর চড়াও হয় এবং লাঞ্ছিত করে। যাত্রীরা কিছুটা উত্তেজিত হলে চালক ও হেলপাররা গাড়ি বন্ধ করে দেয়। এভাবে পরিবহন সেক্টর সংশ্লিষ্টদের হাতে সাধারণ জনগণ জিম্মি।

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া পর্যন্ত ১০০টি লোকাল বাস ছাড়াও কয়েকশ সিএনজি অটোরিক্সা, মহেন্দ্র চলাচল করে। এছাড়াও পটিয়া, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার কয়েক হাজার সিএনজি মহাসড়ক হয়ে কর্ণফুলী মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত চলাচল করে।

তবে, ভাড়া নৈরাজ্য দিন দিন বেড়ে গেলেও এখনও প্রশাসন কিংবা কোন পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। মনে হয়, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই গাড়ির মালিক, চালক ও হেলপাররা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

ধারণা করা হয়, এতে গাড়ির মালিক সমিতির নেতারাও জড়িতে রয়েছে। প্রতিনিয়ত এদের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করলে বাসের চালক ও সহকারীরা দুর্ব্যবহার করেন। অনেক সময় যাত্রীদের শারীরিকভাবেও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। তাছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকেরাও স্থানভেদে দুই থেকে তিন গুণ হারে বর্ধিত ভাড়া নিচ্ছেন। এসব অনিয়ম থেকে সাধারণ যাত্রীরা মুক্তি চায়।

এ ব্যাপারে দায়িত্বরত পুলিশের এস.আই কারিমুজ্জামান বলেন, আমরা যেখানেই যাত্রীদের অভিযোগ পাচ্ছি চেষ্টা করছি সেটা শিথিল করে দেয়ার। অমান্য করলে আইনানুসারে ব্যাবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে দিচ্ছি। বেশ কিছু বাসে আমরা সহনশীলতা ভাড়ার মধ্য যাত্রী তুলে দিয়েছি।

বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্যর ব্যাপারে বিআরটিএ'র ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম.মনজুরুল হক জানান, আমরা খুব জোড়ালোভাবে কাজ করে যাচ্ছি।ঈদের আগে এই রকম বেশ কিছু পয়েন্ট থেকে নৈরাজ্যের খবর পেয়েছি। আপাতত বিআরটিএ'র দুটি আদালত বন্ধ থাকায় সব পয়েন্ট দেখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে আমরা অভিযোগগুলি ও পাওয়া তথ্যাদি ডাটা আকারে সংরক্ষণ করে রাখছি যাতে এই ক্ষনিকের সুবিধাবাদী শ্রেণির বিরুদ্ধে সময়মত যুগোপযোগী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল যুগে কেউ অপরাধ করে পার পাবেনা। সকল অপরাধ ফাইল হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় অনিয়মের প্রতিবাদ বা জরিমানা করলে তারা একযোগে সকল পরিবহন ধর্মঘট ডাকার মত নেক্কারজনক ঘটনাও ঘটিয়েছে যা ঘৃনিত ও জঘন্যতম অপরাধ।

তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, যারা এইরকম ঘৃনিত কাজ করেছে, তারা এখনো বোকার স্বর্গে বাস করছে। কারণ বাংলাদেশে অপরাধ করে কেউ টিকে থাকতে পারেনাই, পারবেও না। বর্তমান সরকার অপরাধের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা দিয়েছেন। অপরাধের সাথে কোন আপোষ নয় বলেও তিনি জোরালো দাবী করেন।