image

রাজনৈতিক চাপে বার বার বাধাগ্রস্থ কেএসআরএম’র দেয়াল উচ্ছেদ অভিযান

image

নানা উদ্যোগের পরও মূল্যবান ভ‚মি উদ্ধার করতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। অবৈধভাবে দখলে নেওয়া মূল্যবান জমি নিজেদের জিম্মায় নিতে পারছে না। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলের বেদখল ভূমি উদ্ধারে প্রধান প্রতিবন্ধক রাজনৈতিক চাপ। সরকার দলীয় নেতা, এমপি-মন্ত্রীদের তদবিরে থমকে যায় উদ্ধার কার্যক্রম। 

জানা গেছে, বর্তমানে রেলের জায়গা বিক্রির সুযোগ নেই। অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত জায়গা বাদে বিপুল ভ‚মি অরক্ষিত থাকায় আয় বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে কৃষি ও বাণিজ্যিক লিজ দিয়েছিল। শর্ত ভঙ্গ করলে লিজ বাতিলের বিধান রয়েছে। কিন্তু তা অমান্য করে বাণিজ্যিক ভবনসহ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত। এসব ভ‚মি উদ্ধারে গেলে নানা দিক থেকে আসা চাপে পিছু হটে রেলওয়ে। তবে বর্তমান মন্ত্রী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অনড় অবস্থানে থাকায় উদ্ধার তৎপরতা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ধরনের চাপ তো রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রাখা জায়গা কেউ ছাড়তে চায় না। এছাড়া মামলাও একটি বড় বাধা। তবে মন্ত্রী মহোদয় অবৈধ ভ‚মি উদ্ধারে কোন ছাড় দিচ্ছেন না। 

সম্প্রতি এক একর ভ‚মি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের বর্ণনা দিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামের সীতাকুÐ উপজেলার বাড়বকুÐ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ঘেষে অবৈধভাবে নালা ও দেওয়াল দেয় শিল্পগ্রæপ কেএসআরএম। গত ৮ মার্চ সরেজমিন পরিদর্শন করেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সৈয়দ ফারুক আহমদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওইদিন নালা ভরাট এবং দেওয়াল নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন জিএম। অবৈধভাবে জায়গা দখল করে দেওয়া সীমানা দেওয়াল অপসারণসহ কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার সুপারিশ করে গঠিত তদন্ত কমিটি। 

গত ২৩ জুলাই দ্রæত সময়ের মধ্যে দেওয়াল উচ্ছেদ করে রেলের জায়গা দখলে নেওয়ার নির্দেশ দেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সূজন। গত ২৮ জুলাই ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় ভ‚-সম্পত্তি কর্মকর্তা শেখ নাইমুল হকের জারি করা নোটিশে ৪ আগস্ট সেই দেওয়াল উচ্ছেদের কথা জানানো হয়। কিন্তু তার আগেই থমকে যায় উচ্ছেদ কার্যক্রম। অবৈধভাবে জায়গা দখল এবং লিজের শর্ত ভঙ্গের প্রমাণ পাওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে থমকে যায় উচ্ছেদ কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্ছেদ নোটিশ জারির পর চট্টগ্রামের দু’জন সংসদ সদস্য ফোনে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কেএসআরএম’র পক্ষ নিয়ে তারা রেলমন্ত্রীকে বলেছেন, কেএসআরএম রেলের জায়গা দখল করেনি। এটা মূলত আরেকটি পক্ষের সাথে লিজ সংক্রান্ত বিরোধ। এরপরও রেলমন্ত্রী সেখানে রেলের জায়গা থাকলে তা উদ্ধারের নির্দেশ দেন। গত ২০ আগস্ট বাড়বকুÐ যান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম নাসির উদ্দিন আহমেদসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা কেএসআরএম’র অফিসে যান। সেখানে তাদের আতিথিয়তা গ্রহণ করেন। পরে কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে পার্শবর্তী আরেকটি লিজ ভ‚মি মেপে ভুল-ত্রæটি ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি।

মন্ত্রীর নির্দেশের পরও দেওয়াল উচ্ছেদ না হওয়ার বিষয়ে জিএম নাসির উদ্দিন বলেন, মন্ত্রী মহোদয় আবার দেখে আসতে বলেছেন, তাই আমি গিয়ে দেখে এসেছি। মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। 
সূত্র বলছে, চট্টগ্রামের একজন সাংসদ কেএসআরএম’র পক্ষ নিয়ে রেলমন্ত্রীকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন। মূলত চট্টগ্রাম অঞ্চলে রেলমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে ওই সাংসদ সবসময় বাধা হয়ে দাঁড়ান। এসব কারণে সাবেক রেলমন্ত্রীর সাথে তার বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। গত বছর বাড়বকুÐ এলাকায় রেলের জায়গা দখল করে কাঁটাতারের বেড়া দেয় কেএসআরএম। তৎকালীন মন্ত্রী তা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলে কেএসআরএম’র পক্ষ নেন ওই সাংসদ। তবে শেষ পর্যন্ত অবৈধ ঘেরাবেড়া তুলে নিতে বাধ্য হয় কেএসআরএম। 

লিজের শর্ত ভঙ্গ করেছে কেএসআরএম, সীমানা মাপছে পিএইচপির : পিএইচপি ফ্লোট গøাস কারখানা রেলওয়ে সীমানা থেকে এক ফুট দুরে দেওয়াল নির্মাণ করেছে। ২০১৮ সালের রেলের করা সার্ভে রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়েছে। বিপরীতে প্রায় এক একর জায়গা দখল করে দেওয়াল দিয়েছে কেএসআরএম। কৃষি লিজের ভ‚মিতে স্থাপনা নির্মাণের বিধান না থাকলেও অবৈধভাবে দেওয়াল দেয় কেএসআরএম। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পিএইচপি গ্রæপের সীমানা মাপছে রেলওয়ে। গতকাল সোমবার যৌথ সার্ভে করতে যান পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সুবক্তগীন, প্রধান ভ‚-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজা, ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় ভ‚-সম্পত্তি কর্মকর্তা শেখ নাইমুল হক। 

প্রধান প্রকৌশলী জানান, গত বছর রেলওয়ে যে সার্ভে রিপোর্ট দিয়েছে সেটা সঠিক রয়েছে। তবে কেএসআরএম রেলের জায়গা দখল করেছে। শেখ নাইমুল হক বলেন, কৃষি লিজের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করে শর্ত ভঙ্গ করেছে কেএসআরএম। তবে বিষয়টি আমরা জানতাম না। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৮৫৪ একর বেদখল জমিতে ৯ হাজার ৬২৬টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। ঢাকা বিভাগে ৬৮৪ একর বেদখল ভ‚মিতে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে দুই হাজার ৩৪৩ টি। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬৯ একর বেদখল ভ‚মিতে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সাত হাজার ২৮৩টি। এসব ভূমি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করেছে ৫২৫ একর। ঢাকা বিভাগে ৩৭৫ একর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫০ একর। আর বিভিন্ন ব্যক্তি দখল করেছে ৩২৮ একর।