image

নির্বাচনমুখী রাজনীতি : আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ

image

সোহেল মাহমুদ : লড়াই শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কাছে এসে লড়াইয়ের আগুনে ঘি দিয়েছে শুধু। আমি আগেও বলেছিলাম, এবার নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ আর এন্টি আওয়ামী লীগের লড়াইটা জমবে না। জমবে নিজেদেরটা। মানে, আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ। হয়েছেও তাই।

কেনো এ লড়াই? সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে লড়াই। এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তির লড়াই। আর এজন্য যে যাকে যেভাবে পারছেন সাইজ করছেন, হেয় করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন এই লড়াই মহামারির আকার ধারণ করেছে। ভাষা প্রকাশেও অনেকে শালীনতাকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন।

নির্বাচনী সরকার গঠণের পর এ লড়াই ভিন্ন মাত্রা পাবে বলে আমার ধারণা। অন্তর্জালের লড়াইটা তখন মাঠে আরো বেশি হবে। প্রতিপক্ষের ওপর দীর্ঘদিনের প্রতিশোধস্পৃহা জেগে উঠলে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে চিন্তাটাও কম নয়। এবং, এ লড়াইও হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে। নির্বাচনকালিন সরকার হবে আওয়ামী লীগ প্রভাবিত। তাতে করে, মাঠে ময়দানে বিরোধী দল কতটুকু আগ্রাসী হতে পারবে সহজে অনুমেয়। প্রশাসন বিএনপি কিংবা তাদের সমমনাদের মাঠে উপস্থিতি বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হলেও তাদের আগ্রাসী হতে দেবে, কিংবা তারা আগ্রাসী হবার সাহস দেখাবে, এটা ভাবা যায় না। তাহলে, উত্তাপ নিয়ে মাঠে থাকবে কে? একাই আওয়ামী লীগ।

নিউ ইয়র্কে বসে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে ধারণা নেয়া কঠিন কাজ নয়। অনেকের সাথে কথা বলেছি, যাদের বেশিরভাগই নির্বাচন নিয়ে খুবই আগ্রহী, কিন্তু আশাবাদী নন। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে, এটা প্রায় সবার বিশ্বাস। শেষ মুহূর্তে বিএনপির সাথে সমঝোতা হলেও সে দল যে ক্ষমতায় আসবে না এটা অনেকে বোঝেন। দুই পক্ষের অংশগ্রহণে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে আসলেই কারো কোন আশা নেই। তাহলে নির্বাচন নিয়ে এতো আগ্রহ কেনো? নিজেদের পছন্দের ব্যক্তির মনোনয়ন পাওয়া, আর জয়লাভ। এলাকায় নিজেদের লোকজনের আধিপত্য কায়েম করা। প্রেস্টিজ ইস্যু রীতিমতো। বিশেষ করে যাদের টাকাপয়সা আছে, এই ইস্যু তাদের বেশি স্পর্শ করে।

ইস্যুটাতে একই দলে ভাগ আর ভাগ। রেষারেষি। মারামারি। ক্ষমতাসীন হবার কারণে আওয়ামী লীগ থেকে কোনভাবে মনোনয়ন পেলে সংসদ সদস্য হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রচুর। সংসদ সদস্য হবার পর ধনী হবার, মন্ত্রী হবার, আরো নানা "হওয়া"র সাথে জড়িয়ে যেতে পারেন নেতা। তিনি প্রভাবশালী হয়ে যান। রাজনীতি এমন প্রভাবশালীদের দখলে, রাজনীতি করে রাতারাতি ভাগ্য পাল্টানো যায়, এমন নানা মিথ, সত্য, আর বাস্তবতার কারণে সবার নেতা হবার দৌঁড় এখন সবচেয়ে উপভোগ্য রাজনৈতিক লড়াই। এ লড়াইয়ে নামার কোন যোগ্যতা লাগে না। যে কারণে, যে কেউই এখন সংসদ সদস্য হবার স্বপ্ন দেখেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে, এমন অনেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন যাদের দলের সাথে কোন সম্পর্ক ছিলো না। এদের অনেকেই এখন অর্থের কারণে দলে বেশ প্রভাবশালী। ৫ বছরে আয় রোজগারও করেছেন বেশ। কিন্তু, দলের স্থানীয় মূলধারায় নিজেকে মেশাতে পারেন নি। এমন পরিস্থিতি অনেক জায়গায়। আর, এরফলে যেটা হয়েছে, নিজেদের যোগ্যতা জাহিরের লড়াই শুরু হয়ে গেছে। একের বিরুদ্ধে অন্যের নানা কাহিনী প্রচার শুরু হয়েছে। সংসদ সদস্যের গ্রুপের কারণে কোনঠাসা নেতা কর্মীরা এলাকায় ফিরছেন কোথাও কোথাও। কোন কোন এলাকায় সংসদ সদস্য ও তার অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীদের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে।

আর একমাস হয়তো। তখন থেকে আরো এক নতুন রাজনীতির মুখ দেখা শুরু হবে বাংলাদেশের। নিকট অতীতে এমন পরিস্থিতি দেখেনি বাংলাদেশের মানুষ। বিরোধী দল সক্রিয় না থাকার পরও রাজনীতির মাঠ গরম থাকবে এই পরিস্থিতির কারণে। আর সেটি হচ্ছে শাসক দলের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। সংসদে যাবার প্রতিযোগিতা। মর্যাদা রক্ষার প্রতিযোগিতা। এলাকায় টিকে থাকার প্রতিযোগিতা। আপাত পক্ষপাতহীন একটি প্রশাসন পেলে, শাসক দলের নির্যাতিতরা কি আচরণ করে, সেটির ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনকালিন রাজনীতির মাঠ।

অনলাইনে শোডাউন চলছে নানা কায়দায়। 

বাস্তবে মাঠে ময়দানে এমন আচরণ প্রকাশ পেলে পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ হবে।

লেখক : উপদেষ্টা সম্পাদক, সিটিজি সংবাদ.কম