image

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোঃ আবু তাহের খাঁন খসরুর ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী

image

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৫৪নং প্লাটুন কমান্ডের কমান্ডার, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের দোহাজারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা (জাসদ) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোঃ আবু তাহের খাঁন খসরু'র ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী ১০ অক্টোবর, ২০১৯ইং বৃহস্পতিবার।

১৯৭৫ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রামের পাহাড়তলি হাজী ক্যাম্পে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু তাহের খাঁন খসরুকে।

চন্দনাইশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাফর আলী হিরুর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ১৯৭১ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু দোহাজারী থেকেই অসযোগ আন্দোলন, প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে উঠে। ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলিতে এ অঞ্চলের সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীদের জোরালো ভূমিকা ছিল। দোহাজারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ হলেও কেন্দ্রের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তখন দোহাজারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন আবু তাহের খাঁন খসরু, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাফর আলী হিরু, সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন রতন কুমার নাথ। আবু তাহের খাঁন খসরু যুদ্ধকালীন ১৫৪ নং প্লাটুন কমান্ডের কমান্ডার ছিলেন। জাফর আলী হিরু ছিলেন যুদ্ধকালীন ১৫৪নং গ্রুপের ডেপুটি কমান্ডার। 

তিনি আরো বলেন, অদম্য সাহস স্পৃহা সহকারে দেশ মাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে আবু তাহের খাঁন খসরু ১৯৭১ সালে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তি সংগ্রামে। জীবন বাজি রেখে ছিনিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতার লাল সূর্যটিকে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিঃস্বার্থভাবে অবদান রাখার পরেও ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি। 

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক উপ-শহর, ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীণতম জনপদ দোহাজারী পৌরসভার খান বাড়ীর একটি মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫০ সালের ৩০ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন শহীদ মোঃ আবু তাহের খাঁন খসরু।

মরহুমের ভাই আবু মনসুর খাঁনের সাথে আলাপকালে জানা গেছে মরহুম ইসহাক মিয়া খাঁনের ৯ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে মোঃ আবু তাহের খাঁন খসরু ছিলেন ৭ম সন্তান। ২১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে দীর্ঘ নয় মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ করে বীরের বেশে বাড়ী ফিরলেও এদেশীয় মীরজাফরদের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছিলো তাঁকে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় এসে অবৈধ অস্ত্র জমা দানের নির্দেশ দেন। এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্রের সহযোগীতায় ১৯৭৫ সালের ৪ অক্টোবর মোঃ আবু তাহের খাঁন খসরুকে বন্দি করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলি থানাধীন হাজী ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে দীর্ঘ এক সপ্তাহ অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে সুপরকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোঃ আবু তাহের খাঁন খসরুর মৃত্যুর পর প্রতি বছর ১০ অক্টোবর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, সাবেক মন্ত্রী আ.স.ম আব্দুর রব, ইব্রাহিম বিন খলিল সহ বাংলাদেশের বাঘা বাঘা রাজনিতীবিদেরা স্মরণসভায় অংশ নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন।

প্রতি বছরই আয়োজন করা হয় স্মরণসভা, দোয়া মাহফিল, মেজবান ও কাঙ্গালিভোজ। তবে ২০০১ সালের পর থেকে আর কারো দেখা মেলেনি, কোন নেতাই রাখেনি পরিবারটির খবর। পারিবারিক উদ্যোগে ছোট্ট পরিসরে হলেও প্রতি বছর খতমে কোরআন, দোয়া মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোঃ আবু তাহের খাঁন খসরু'র ছোটভাই মোঃ আবু মনসুর খাঁন।