image

পটিয়ায় ১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ হচ্ছে আধুনিক উপজেলা মডেল মসজিদ

image

পটিয়া সদরের আল্লাই-ওখাড়া শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ” হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী জামে মসজিদ”কে পটিয়া উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। মসজিদের আনুষ্টানিক নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও মসজিদের মোতোয়াল্লি এবং উপজেলা প্রশাসনের সাথে ভূমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। 

হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী জামে মসজিদের মোতোয়াল্লির দাবি তাদের মসজিদকে উপজেলা মডেল মসজিদ হিসেবে নির্ধারণ ও শত বছরের এ পুরনো মসজিদ করার ক্ষেত্রে মোতোয়াল্লি বা মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে কেউ কিছু জানে না। এছাড়া মসজিদকে দেয়া তাদের পূর্ব পুরুষের দেয়া মসজিদে জায়গাটি এবং মসজিদ পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বে থাকা মোতোয়াল্লিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিত অলিখিত এমনকি এ সংক্রান্ত কোন বৈঠকেও ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ করেন। বিষয়টি দ্রæত সমাধানের জন্য হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী জামে মসজিদের মোতোয়াল্লি সুলতান আহমদ চৌধুরী জাতীয় সংসদের হুইপ ও পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী কাছে গত ২ আগস্ট একটি লিখিত অভিযোগও করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দ্রæত সমাধান করার জন্য হুইপ নির্দেশ দিয়েছেন।  

কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি ধর্ম মন্ত্রনালয়ের উপসচিব মো. শাখাওয়াত হোসেনের স্বাক্ষরিত এক পত্রে পটিয়া মডেল মসজিদেও জায়গা নির্ধারণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই তৎকালিন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিলটন রায় উপজেলা পরিষদের তৎকালিন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফ্ফরআহমদ চৌধুরী টিপু ও ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ এয়ার মোহাম্মদ পেয়ারু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা বেগম জলির উপস্থিতে হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী জামে মসজিদের পাশে পুকুর ভরাট করে মডেল মসজিদ নির্মানের প্রস্তাব দেন।  বিষয়টি সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান সুপারিশ অনুমোদন হওয়ার পর আল্লাই-ওখাড়া হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী জামে মসজিদের পুকুর ভরাট করে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

জানা গেছে, হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী জামে মসজিদের কাগজ পত্র মতে ১৮৯২ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মসজিদ পরিচলনার জন্য তৎকালিন পটিয়ার জমিদার হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী ৩৯ দোন সম্পত্তি দেন। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী একজন দানবীর সমাজসেবক ও মানুষ ছিলেন। পেশায় তিনি কন্ট্রাক্টও হলেও তার জীবনের সমস্ত আয় দিয়ে যা কিছু তিনি সংগ্রহ করেছেন স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সব সম্পদ তারই নামে প্রতিষ্ঠিত "হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী ওয়াকফ এস্টেট" নামে ১৯১১ সালে ওয়াকফভুক্ত করে দেন। নিয়ম মতে তিনিই উক্ত এস্টেটের  মোতোওয়াল্লী ছিলেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী আতরজান বিবি মোতোয়াল্লি হন। তাঁর পরে পুত্র নুরুল গণি চৌধুরী মোতোয়াল্লি হিসেবে রেকর্ডভূক্ত হন। নুরুল গণি চৌধুরী মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আইয়ুব আলী চৌধুরী ২০০১ সালে মোতোয়াল্লিার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এস্টেটেইট পরিচালনার সুবিধার জন্য সৎ ভাই আরব আলী চৌধুরীকেও যুগ্ম মোতাওয়াল্লী হিসেবে অর্ন্তভুক্ত  করেন। ২০০৩ সালে আইয়ুব আলী চৌধুরীর মৃত্যুর পর এস্টেইট পরিচালনায় শৃঙ্খলা হারিয়ে যুগ্ম-মোতাওয়াল্লী এককভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আরো জটিলতা তৈরী করেন। এতে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন অভিযোগ আসায় মরহুম মোতোয়াল্লি আইয়ুব আলী চৌধুরীর স্থলে মোতোয়াল্লি হিসেবে ওয়াকফ প্রশাসক তদন্ত করে এবং মসজিদ পরিচালনার জন্য ২০১১ সালে তাঁর ছেলে সুলতান আহমদ চৌধুরীকে মোতোয়াল্লি হিসেবে দায়িত্ব ভার দেন। সুলতান আহমদ চৌধুরী মোতোয়াল্লি হিসেবে দায়িত্ব নিতে গেলে যুগ্ম মোতোয়াল্লি দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে মসজিদের টাকার হিসাব না দিতে কমিটি সাজিয়ে তালবাহনা করার অভিযোগও করেন বর্তমান মোতোয়াল্লি সুলতান আহমদ চৌধুরী। পটিয়া হাজী আনোয়ার আলী চৌধুরী মসজিদের মোতোয়াল্লী সুলতান আহমদ চৌধুরী বলেন, ভূমি দেয়ার আগে আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে এরমধ্যে মসজিদের নামকরণ, মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে মোতোয়াল্লির ভূমিকা, ভূমি হস্তান্তরসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এসব বিষয়ে আমাদের সাথে কোন ধরণের আলাপ আলোচনা ছাড়াই আমার বাপ দাদার পূর্ব পুরুষের নামের মসজিদ বিলুপ্ত হউক বা ভূমি বিনাশর্তে দিয়ে দিবে এটা হতে পারে না, এটা নিয়ে  উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়া দরকার বলে তিনি জানায়।

ইসলামী ফাউন্ডেশন পটিয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মডেল মসজিদেও ভূমি জটিলতার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এমপি মহোদয় সমাধাণ করার চেষ্ঠা করছেন। ইতোমধ্যে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেলেও ভূমির সমস্যাটা এখনো নিরসন হয়নি, আশা করি দ্রæত সমাধান হয়ে যাবে।

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান উপজেলা মডেল মসজিদের ভূমি জটিলতা সংক্রান্ত একটি অভিযোগে এমপি স্যার আমার কাছে পাঠিয়েছে । বিষয়টি বসে দ্রæত সমাধান করার চেষ্ঠা চলছে বলে তিনি জানান।