image

অপার সম্ভাবনার পদ্মা সেতু

image

নদীমাতৃক বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। দেশের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাহত হয়। যা দেশের আঞ্চলিক সুষম উন্নয়নের অন্তরায়। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি হলেও দক্ষিণাঞ্চল রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগে ফেরি ও লঞ্চের ওপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় পদ্মা সেতু জাতীয় উন্নয়নে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। পদ্মা সেতুর প্রতীক্ষায় আছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, যশোর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও রাজবাড়ীসহ ১৯ জেলার প্রায় তিন কোটি মানুষ। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হলে কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে যাবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এই সেতু দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু হয়ে উঠবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজটি সহজ ছিল না। একসময় আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নদীনির্ভর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর সড়ক যোগাযোগ গুরুত্ব পেতে থাকে। এ ক্ষেত্রেও বাধা ছিল নদ-নদী। যে কোন সড়ক তৈরি করতে গেলেই ছোট-বড় নদী অতিক্রম করতে হতো। অনেক ফেরি চালু ছিল। যমুনা সেতু নির্মাণ এর আগে উত্তরাঞ্চলের মানুষ কখনও ভাবতেই পারেনি সকালে রওনা দিয়ে দুপুরে ঢাকা পৌঁছে কাজ শেষ করে সেদিনই ফিরে আসবে। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন করা হয়। সে সময়েই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য পদ্মায় সেতু নির্মাণের বিষয়টি সামনে আসে। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছিল। ২০০১ সালে জাপানের সহায়তায় সম্ভাবতা যাচাই করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ অনুসারে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করেছিল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বাঙালীর পদ্মা বিজয় অভিযান।

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সীগঞ্জের সঙ্গে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে, ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। দ্বিতলবিশিষ্ট এ সেতু মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের মাধ্যমে পদ্মার দুই পাড়কে সংযুক্ত করবে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে নকশায় রেললাইন সংযোজন করা হয়েছিল। কারণ, ভবিষ্যতে এটিই হবে ট্রান্স-এশীয় রেলপথের অংশ। তখন যাত্রীবাহী ট্রেন যত চলবে, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি চলবে মালবোঝাই ট্রেন। ডাবল কনটেইনার নিয়ে ছুটে চলবে ট্রেন। সেইসঙ্গে এই সেতুকে অবলম্বন করে নেওয়া হবে গ্যাস, অপটিক্যাল ফাইবার, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে বাঙালীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। নিয়মমাফিক সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট কাজগুলো এগোচ্ছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নে এগিয়ে এসেছিল। পরবর্তী পর্যায়ে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়াই ঘুষ দুর্নীতির কাল্পনিক অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলারের অঙ্গীকার থেকে সরে যায় এবং একে একে এডিবি, জাইকা, আইডিবিও চলে যায়। শুরু হয়েছিল বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার নতুন অভিযাত্রা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ। ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার দেশরতœ শেখ হাসিনা। জানিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নয়; নিজস্ব অর্থায়নেই হবে আমাদের পদ্মা সেতু! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশীয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে সকল ষড়যন্ত্র পদদলিত করে স্বপ্নের সেতু নির্মাণে দৃঢতার সঙ্গে এগিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ এসেছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! পদ্মা সেতুর মূল অংশের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে সেতু ও নদীশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ ও কাজ তদারক করার জন্য আন্তর্জাতিক ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা দেশের যে দুটি উন্নয়ন প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন তার মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প একটি। শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান!

বাঙালীর পদ্মা অভিযান : প্রমত্তা পদ্মায় সেতু নির্মাণ বাংলাদেশকে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছিল, এ ধরনের বড় সেতু নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু কারিগরি চ্যালেঞ্জ থাকে। প্রথম চ্যালেঞ্জ পদ্মা-যমুনার সম্মিলিত প্রবাহ। যেখানে প্রতি সেকেন্ডে পদ্মার মাওয়া পয়েন্টে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়, যা আমাজন নদীর পরেই বিশ্বে কোন নদী দিয়ে সর্বাধিক পানি প্রবাহের ঘটনা। সেইসঙ্গে প্রমত্তা পদ্মার তলদেশে বিভিন্ন জায়গায় লুকানো খাড়ি থাকা এবং সেতু হওয়ার পর স্রোতের ঘূর্ণিপাকে নদীর তলদেশের মাটি অনেক গভীর পর্যন্ত ক্ষয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, পরবর্তী একশ’ বছর পর সেটা কেমন থাকবে, ভূমিকম্প প্রতিরোধে কোন ধরনের ব্যবস্থা থাকবে? পুরো সেতুটির অবকাঠামো ও ভিত স্টিলের তৈরি বিধায় এখানে বাতাসের লবণাক্ততার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়েছিল। সমীক্ষায় দেখা গেছে, পরবর্তী একশ’ বছরে নদীর তলদেশের ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যেতে পারে। আরও ৫৮ মিটারসহ মোট ১২০ মিটার গভীরে গিয়ে পাইলিং করতে হচ্ছে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর পদ্মা সেতু একটু বাঁকানো। কাজেই কাজটি আরেকটু কঠিন। এছাড়া আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নদীশাসন। তাই নদী শাসনে ব্লকের পাশাপাশি জিয়ো টেক্সটাইলের বস্তা ব্যবহার করার হয়েছে। নদীশাসন, সার্ভিস এরিয়া টু এ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে চলছে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদীশাসনের কাজ চালাচ্ছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। মূল সেতুর নির্মাণকাজ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। সেতুর দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যৌথভাবে আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার হাইওয়ে কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট কাজ করছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। সবকিছু মিলে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বাংলাদেশের অহংকার হিসেবে জেগে উঠেছে সেতুর পিলারের ওপর ১ কিলোমিটার সুপারস্ট্রাকচার। নদীর মধ্যে থাকা ৪০টি পিলারের মধ্যে ২২টির নকশা পরিবর্তন করায় নির্মাণ কাজে কিছুটা ছন্দপতন ঘটলেও পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ২২টি পিলারের নতুন নকশা চূড়ান্ত করে মূল সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কাছে পাঠানো হয়েছে। নদীর তলদেশের গভীরে নরম মাটির স্তর থাকায় হ্যামার দিয়ে পাইল বসাতে গিয়ে ১৪টি পিলারের নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই ইউকে লিমিটেড। কাউই ইউকের বিশেষজ্ঞরা মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকটি বিদেশী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের কয়েক দফা বৈঠক হয়। কাদামাটির পর শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ২২টি পিলারে একটি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ২২টি পিলারে পাইলের সংখ্যা বাড়লেও এগুলোর দৈর্ঘ্য হবে ৯৮ মিটার থেকে ১১৪ মিটার পর্যন্ত। নদীর তলদেশের মাটির স্তর ছাড়াও ভূমিকম্প, সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন ও যানবাহনের চাপ, বাতাসের চাপ ও নৌযান চলাচলের চাপ বিবেচনা করে পাইলগুলোর গভীরতা ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব খুঁটিতে ছয়টি পাইল অন্যান্য পিলারের মতোই রেকিং বা কিছুটা বাঁকা করে বসানো হচ্ছে। এই ছয়টি পাইলের মধ্যে ৭ নম্বর পিলার ভার্টিক্যাল বা সরাসরি সোজাভাবে বসানো হবে। এ জন্য পদ্মা সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ২৪০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬২টিতে। পুরো সেতুতে মোট পিলার হবে ৪২টি। এর মধ্যে নদীতে থাকবে ৪০টি পিলার। এক পিলার থেকে আরেক পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বে লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। ৪২টি পিলারের ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হচ্ছে বাংলাদেশে। স্প্যানের অংশ সংযুক্ত করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। ইতোমধ্যে জাজিরা প্রান্তে ৩৭, ৩৮, ৩৯ ৪০,৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারে পাচটি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৭৫০ মিটার এখন দৃশ্যমান হয়েছে। এ ছাড়া ২৬২টি পাইলের মধ্যে আগস্ট পর্যন্ত ১৬৯টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া মাওয়া প্রান্তে ২ নম্বর পিলারও দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে ২০১৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৬৬ শতাংশ এবং শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত ও মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ভায়াডাক্ট (সেতুর গোড়া) কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকায় নির্মিতব্য স্বপ্নের এই সেতুটি ২০১৯ সালের মধ্যে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা : পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে, এই সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে প্রথম কোন সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে। পদ্মা সেতুর বদৌলতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষের জীবনধারা পাল্টে যাবে। বদলে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। তাদের কৃষিপণ্য খুব সহজেই ঢাকায় চলে আসবে। মংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। কৃষি-শিল্প-অর্থনীতি-শিক্ষা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই এই সেতুর বিশাল ভূমিকা থাকবে। পদ্মার দুই পাড়ে সিঙ্গাপুর ও চীনের সাংহাই নগরীর আদলে শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে। নদীর দুই তীরকে কেন্দ্র করে আধুনিক স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলা সম্ভব। তবে সে জন্য এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা খুলনা-যশোর অঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়নের সম্ভাবনা দেখছেন। এর সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রয়েল বেঙ্গল টাইগার সমৃদ্ধ সুন্দরবন ও সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অভাবনীয় সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে বিশাল পর্যটন শিল্প। শিল্পায়ন ও পর্যটনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে আধুনিক নগরায়ন। পদ্মা পাড়ে গড়ে উঠবে বিশ্বমানের প্রজাপতি জাদুঘর, সিঙ্গাপুরের আদলে অলিম্পিক ভিলেজ। সেতুর পাশেই সরকার ক্রীড়াপল্লী ও অলিম্পিক কমপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মার চরে সবরকম সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ক্রীড়াপল্লী নির্মাণসহ সুবিশাল অলিম্পিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আমাদের ক্রীড়া প্রশিক্ষণ আরও এগিয়ে যাবে। স্থানীয়রা পদ্মাপাড়ে আধুনিক শহর গড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এছাড়া সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কারণে বাস্তুচ্যুত ক্ষতিগ্রস্তরা পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে আধুনিক শহরের সুবিধা ভোগ করছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণকে আশপাশের এলাকাবাসীর জন্য আশীর্বাদ বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ২০১৯ সালে পদ্মা সেতু চালু হলে ২০২১ সালের মধ্যেই এসব সম্ভাবনার গল্প বাস্তবে পরিণত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

sumahmud78@gmail.com