image

পানির স্তর সংকটে উখিয়ায় আমন চাষাবাদ হুমকির মুখে

image

মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচূত্য প্রায় ৮লক্ষ রোহিঙ্গাদের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন এনজিও সংস্থা উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে যত্রতত্র অগভীর গভীর নলকূপ স্থাপন করে মারাত্বকভাবে পানির অপচয় করছে। যে কারনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশংকাজনক নিচে নেমে গেছে। পরিবেশ দূষনে অনাবৃষ্টির ফলে বিপর্যস্থ আমন চাষাবাদ, হুমকীর মুখে পড়েছে আসন্ন বোরো আবাদ। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকেরা আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা বলছে, একমাত্র রোহিঙ্গার কারনে আমন চাষাবাদ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে আমন চাষাবাদের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে আলাপ করে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সারে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই বসত বাড়ির আশেপাশে আমন চাষাবাদ করে থাকেন। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারনে অনেকেই এখনও পর্যন্ত জমিতে লাঙ্গল ফেলতে পারেননি। আমনের জন্য রোপিত বীজতলা পানির অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। খয়রাতি পাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম, মোকবুল আলী ও শামসুল আলমসহ একাধিক কৃষক জানান, তারা বাসা-বাড়ির ব্যবহৃত টিউপওয়েলের পানির সাহায্যে বীজতলা তৈরি করতেন। এখন টিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পানি না আসার কারনে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফুল ইসলাম জানান, যেকোন উপায়ে আমন চাষাবাদ হয়ে যাবে কিন্তু আগামী বোরো উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে হবে। যেভাবে ফলন উৎপাদন সম্ভব হয় যেহেতু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসানোর গভীর নলকূপের কারনে বোরো উৎপাদন মারাত্বকভাবে যুকির মুখে পড়তে হবে। এমনটি আশা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

শুক্রবার ১৮ অক্টোবর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৮ম সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় রোহিঙ্গা শরনার্থীদের পানি সরবরাহের জন্য জন্য ১০ হাজারেরও অধিক গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। আরো কিছু গভীর নলকূপ বসানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য হাজার হাজার গভীর নলকূপ দিয়ে এভাবে পানি উঠাতে গিয়ে ভূর্গভস্থ পানির স্থর (ওয়াটার লেয়ার) অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে। এখনি এসব গভীর নলকূপ বসানো সম্পূর্ণ বন্ধ না হলে উখিয়া-টেকনাফ এলাকা হয়ত একসময় মরুভূমিতে রূপান্তর হবে। এই এলাকার মানুষ সহ সমস্ত প্রাণীকূল বসবাসের পরিবেশ হারিয়ে মারা পড়তে পারে। এখানে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। তাছাড়া, এখানকার পাহাড় গুলো বৃক্ষশূন্য হওয়ায়, পাহাড়ের শ্রেনি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় ও অবাধে পাহাড় কাটার ফলে সেখানকার ভূমিও বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারছেনা। তাই ভূগর্ভ থেকে গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উঠানো বন্ধ করে দিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য সুপেয় পানির অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উক্ত সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন আহমদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও একই কমিটির সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম, বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

উখিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, কৃষি নির্ভরশীল উপজেলা উখিয়ার ৮০ শতাংশ পরিবার বিভিন্ন উপায়ে চাষাবাদের মাধ্যমে জীবন ধারন করে আসছেন। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে বিভিন্ন কারনে কৃষি শাকসবজি উৎপাদনের উপর প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানির অপচয় করা হচ্ছে তা অব্যহত থাকলে আগামী বোরো উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের পস্তাাতে হবে।