image

“কালুরঘাটে নতুন সেতু দেখার আক্ষেপ নিয়ে পরপারে চলে গেলেন এমপি বাদল”

image

সাংসদ বাদলের চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় অবস্থিত পশ্চিম সারোয়তলীর গ্রামের বাড়ি খাঁন মহলে এখন চলছে স্বজনদের কান্না। খাঁন মহলে চলছে শেষ বারের মত প্রিয় মুখ বাদলকে শ্রদ্ধার সাথে বিধায় জানানোর প্রস্তুতি।  খাঁন মহলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন তার ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনরা। ৫ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে বাদল ৩য়। কথা হয় সাংসদ বাদলের ছোট ভাই মনির উদ্দীন আহম্মদ খাঁনের সাথে। তিনি কান্নায় জড়িত কন্ঠে বলেন, বাড়িতে আসলে ভাই ড্রয়িং রুমে চেয়ারে সেই চেয়ারে আর বসবেন না। ভাইটি কর্ণফুলী সেতুর জন্য পদত্যাগ করবেন বলেছিলেন। পদত্যাগের আগেই তিনি পরকালে চলে গেলেন। বলেছিলেন কর্ণফুলীর উপর নতুন কালুরঘাট সেতুর ঘোষণা না দিলে আগামী ডিসেম্বরে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। তিনি বলেছিলেন প্রয়োজনে নিজের রাজনৈতিক দল জাসদ ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগ দেবেন। তবুও যেন কালুরঘাট সেতু হয়। কিন্তু তার আগেই চিরদিনের জন্য পরপারে পারি জমালেন তিনি।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম -৮ আসন থেকে জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি সাংসদ মঈনউদ্দীন খাঁন বাদল প্রথম সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হন। সংসদের অনর্গল বক্তা হিসেবে দেশের জনসাধারণের হৃদয় জয় করে নেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনীয় সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। শুরু থেকেই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীকে স্বপ্নের উপজেলা গড়ার স্বপ্ন দেখেন। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় বাধা কর্ণফুলী নদীর উপর বিট্রিশ আমলে নির্মিত জরাজীর্ন কালুরঘাট সেতু। সংসদে বারবার তিনি সড়ক সেতু নির্মাণের দাবি তুলেছেন। গত দুই বছর আগে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি সরকারকে জানিয়ে দেন কালুরঘাটে সেতু দেখে যেতে না পারলে মরেও শান্তি পাব না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের জাতীয় সংসদের অধিবেশনে চলতি বছরে  ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু বিষয়ে সুরাহা না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষনা দেন তিনি। যে কোন কিছুই বিনিময়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে সড়ক কাম রেল সেতু নির্মানের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামবাসির প্রাণের দাবি পূরণ করতে চেয়েছিলেন এবং এই সড়ক কাম রেল সেতু জননেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নাম করণের প্রস্তাব রেখেছিলেন জাতীয় সংসদে। সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কালুরঘাটে সড়ক কাম রেল সেতু নির্মাণের দাবিতে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাসদ আয়োজনে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছিলেন, সেতু নির্মাণের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। এছাড়াও বোয়ালখালী পৌর এলাকার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশে একটি কারিগরি বিদ্যালয় করার ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়াও বিগত দিনের স্বপ্ন অপূরণ থাকার কথা পূনব্যক্ত করেছিলেন তিনি। তিনি বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে অবস্থিত তিন ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান ঘিরে পর্যটক কেন্দ্র ও কমপ্লেক্স ভবন গড়ার স্বপ্ন দেখে ছিলেন তিনি। এ স্বপ্নের কথাগুলো তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলেছিলেন তিনি। তিনি উপজেলা কড়লডেঙ্গা পাহাড়ের পাদদেশে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারসহ ডাক বাংলো করার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েও জঠিলতার করণে সে স্বপ্নটি পূরণ হয়নি।

বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) ভোরে ৬৭ বছর বয়সে ভারতের বেঙ্গালুর নারায়ণা হৃদয়ালয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাংসদ মঈন উদ্দীন খাঁন বাদল। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম সারোয়াতলী গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে ০১ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সাংসদের মৃত্যুতে বোয়ালখালীাবাসী একজন গুণীব্যাক্তিকে হারালো। তাকে আরোও বেশ কিছুদিন বোয়ালখালী বাসীর প্রয়োজন ছিল। তার চির বিধায়ে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।