image

১৯ দিনব্যাপী চুনতীর ঐতিহাসিক সীরাতুন্নবী(সা:) মাহফিল শুরু ১০ নভেম্বর 

image

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির ঐতিহাসিক ১৯ দিনব্যাপী ৪৯তম সীরাতুন্নবী(সা:) মাহফিল আগামী ১০ নভেম্বর শুরু হবে এবং শেষ হবে ২৮ নভেম্বর।

প্রতিবছরের মত এবছরও মাহফিলকে তাৎপর্যময় ও শান্তিপ‚র্ণ পরিবেশে শেষ করার লক্ষ্যে আয়োজক ও স্থানীয়রা ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছেন। 

এ উপলক্ষে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সাথে জুমাবার(৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় চুনতি শাহ মঞ্জিলে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় শাহ ছাহেব কেবলার দৌহিত্র মাওলানা আবদুল মালেক ইবনে দিনার নাজাত সভাপতিত্ব করেন।

শাহজাদা তৈয়বুল হক বেদারের সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা মাহফিল সুষ্ঠু, সুন্দর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রচার করতে সবার কাছে সর্বাত্মক সহযোগিত কামনা করেন।

সভায় মাওলানা আব্দুল মালেক ইবনে দিনার নাজাত বলেন, চুনতী সীরাত মাহফিল মহান আল­াহ তা'য়ার বিশেষ রহমত স্বরূপ। এ মাফিলে আগত ধর্মীয় বক্তাদের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের লেখনীর মাধ্যমে দেশে বিদেশে সবার কাছে তোলে ধরতে হবে। তিনি আরো জানান, এবারের ৪৯তম ১৯ দিনব্যাপী চুনতী সীরাত মাহফিলের বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। মতবিনিময় সভায় লোহাগাড়ায় কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মী ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন মাহফিল পরিচালনা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য অলিউদ্দিন মোহাম্মদ, কামরুল হুদা, আরিফুল ইসলাম, জমিল উদ্দিন, জাহেদুর রহমান, সাদুর রহমান, আবদুল মন্নান ও নজরুল হুদা প্রমুখ।

জানা যায়, কালের পরিক্রমায় মানুষ যখন ইসলামের ম‚ল শিক্ষার বিপরীতে শিরক, বিদয়াত ও কুসংস্কারের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ছিল তখন দিশেহারা মানুষদের ইসলামের সঠিক জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে হযরত শাহ সাহেব কেবলা(রা:) এই মাহফিলের গোড়াপত্তন করেন। হযরত শাহ আহমদ সাহেব কেবলা(রা:) দলমত আর সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ছিলেন। এ কারনে দেশের বিভিন্ন এলাকার বরণ্যে আলেমেদ্বীনসহ সর্বস্তরের ধর্মপ্রিয় মুসলিম জনতা দলমত নির্বিশেষে এ মাহফিলে এসে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন।

উলে­খ্য, ঐতিহাসিক এই সীরাত মাহফিল গতানুগতিক ধারার কোন মাহফিল নয় বরং এটি সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য উন্মুক্ত এক শিক্ষাকেন্দ্র। মাহফিলে দেশের বিশিষ্ট আলেমরা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কোরআন ও হাদিসের আলোকে সারগর্ভ আলোচনা করে থাকেন। এই মাহফিলে মাসয়ালা মাসায়েলসহ সময়োপযোগী যুগ জিজ্ঞাসার জওয়াব দেয়া হয়। এরমধ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা:) জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তথা হায়াতে জিন্দেগির পুরো বিষয়সহ বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়।

১৯৭২ সাল থেকে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(স.) এর জন্মের মাস পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে চুনতীর শাহ সাহেব কেবলা প্রথম সীরাতুন্নবী(স.) মাহফিলের আয়োজন করেন। সেই থেকে নিয়মিত এ মাহফিল প্রতিবছর সফলভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

১৯৭৯ সালে ১৫ দিনের কর্মস‚চির ভিত্তিতে মাহফিলে সীরাতুন্নবী (স.) এর কার্যক্রম আরম্ভ হয়। শাহ সাহেব হুজুর মাহফিলের শেষ পর্যায়ে দুই দফায় দুই দিন করে বাড়িয়ে একে ১৯ দিনের মাহফিলে রুপান্তর করেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (স.) অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

১৯৮৩ সালে শাহ সাহেব হুজুরের ইন্তেকালের পর থেকে বিভিন্ন চড়াই উৎরাই ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এ মাহফিল শান্তিপ‚র্ণ ও সফলভাবে আয়োজন অব্যাহত রয়েছে। সর্বস্তরের মুসলিম ধর্মপ্রাণ জনতা একে হুজুরের বুজুর্গীর বড় নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

প্রতি বছরের মত মাহফিলে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(স.) এর পবিত্র জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপ‚র্ণ দিক ও বিভাগ এবং তাঁর আনীত পবিত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলামের জরুরী বিভিন্ন বিষয়ের উপর সারগর্ভ আলোচনা করবেন শতাধিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ আলেমেদ্বীন।

আয়োজনকরা জানান, দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এবং দীর্ঘকাল (১৯ দিন) ঐতিহাসিক এ সীরাতুন্নবী(স.) মাহফিল আয়োজনের একমাত্র উৎস আল্লাহ ও রাসূল প্রেমিক জনতার আর্থিক ও কায়িক সহায়তা। এজন্য এবারও মাহফিল আয়োজনে সকল ধর্মপ্রিয় মানুষের সহায়তা কামনা করা হয়েছে।