image

কেমন আছেন পাথরঘাটায় আহতরা (ভিডিও)

image

চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় বিষ্ফোরণে ৭জন নিহত হয়ে বাকী ৭জন চমেকে এবং অগ্নিদগ্ধ একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চমেকে চিকিৎসাধীন ৭জনের মধ্যে ৩জনকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বাকী ৪জন ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চমেকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ৩জন হলেন রিকশা চালক নাজের আহমদ (৬৫), সিএনজি চালক মোহাম্মদ হামিদ (৪০) এবং শিক্ষিকা তৃষা গোমেজ। তিনজনের কেউই অগ্নিদগ্ধ না হলেও গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রিকশা চালক নাজের আহমদ : চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পশ্চিম পটিয়া এলাকার বাসিন্দা নাজের আহমদ (৬৫) থাকেন শহরের চাকতাই এলাকায়। ঘটনার দিন তিনি এ সড়কে রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে ধারণা করছেন তার সাথে হাসপাতালে থাকা স্বজনরা। মাথায় গুরুতর আহত নাজের আহমদ কথা বলতে পারছেন না। তাকে ইতোমধ্যে অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। তার বুকে, কাঁধে এবং মাথায় আঘাত পেয়েছেন। আজকেও তাকে একটি সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। তিনি কথা বলতে না পারলেও তার অবস্থা দিন দিন উন্নতির দিকে বলে চিকিৎসকদের দাবী।

চমেকে চিকিৎসাধীন নাজের আহমদের সাথে থাকা স্বজনরা বলতে পারছেনা সেখানে কি অবস্থায় তিনি ছিলেন। এ রিকশা চালকের সহধর্মিনীও অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে পরিবারের আপনজন কাউকে দেখা যায়নি।

সিএনজি চালক মোহাম্মদ হামিদ : দূর্ঘটনার দিন নাস্তা আনার জন্যই বের হয়েছিলেন মাহিন্দ্র (সিএনজি) চালক মোহাম্মদ হামিদ (৪০)। সাথে থাকা তার সহধর্মিনী কামরুন নাহার বলেন, আমার স্বামী সকালে নাস্তা আনার জন্য বের হয়েই দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। বর্তমানে জ্ঞান ফিরলেও তিনি কথা বলতে পারছেন না। দুই কন্যা সন্তানের জনক হামিদই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের এক মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে এবং অপর মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। 

মোহাম্মদ হামিদের সহধর্মিনী কামরুন নাহার বলেন, পরিবারে উপার্জন করার কেউ নেই। তার একার আয়েই সংসার চলে। দুই মেয়ের পড়ালেখা ও সংসারের যাবতীয় ব্যায় নির্বাহ হয় স্বামীর একজনের উপায় থেকে। এখন কি করে সংসার চলবে এ নিয়ে তিনি খুব চিন্তাগ্রস্থ। 

কামরুন নাহার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামীর কিছু হয়ে গেলে পুরো পরিবারকে নিঃস্ব হয়ে যেতে হবে। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যয় কেমনে নির্বাহ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসার পুরো খরচই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যয় করছেন। তাদের কিছু টুকিটাকি বাইরের খরচ করতে হয় বলে তিনি জানান।

হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে তাকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।

তৃষা গোমেজ : স্থানীয় সেন্ট জোসেফ স্কুলের শিক্ষিকা তৃষা গোমেজ (২২)। তিনি প্রতিদিনের ন্যায় স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন নিথরভাবে। তিনি মাথায় এবং হাতে আঘাত পেয়েছেন। জ্ঞান থাকলেও কথা বলায় ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা এবং মুখে অক্সিজেন লাগানো থাকায় কথা বলতে পারছেন না। আইসিইউ’র বাইরে উদ্বিগ্ন পরিবারের অন্য সদস্যরা। 

তৃষা গোমেজের পিতা অনল গোমেজ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল সৈকতে কর্মরত। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ঘটনার পর আমরাও বাসা থেকে বের হয়েছি দেখার জন্য। ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে বাসা হওয়ায় অন্যদের মতো আমরাও বের হয়েছিলাম।

মেয়ের দূর্ঘটনার খবর কিভাবে পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মনে করেছি মেয়ে যথারীতি স্কুলে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর খবর নেয়ার জন্য মোবাইলে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পেয়ে স্কুলে যোগাযোগ করি। স্কুলেও না যাওয়ায় আমাদের মনে কিছুটা সংশয় হয়। আমরা পরবর্তীতে চমেকে খবর নেয়ার পর মেয়ের সন্ধান মিলে।

এখন মেয়ের কি অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার’রা বলছেন অবস্থা উন্নতির দিকে। মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় কিছুটা টেনশন হচ্ছে। তবে ডাক্তার’রা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন বলে তিনি জানান। তার আরেক মেয়ে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবার। 

তিনি বলেন, আমার মেয়ের এরকম বিপদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা। তিনি চিকিৎসা ব্যয় এবং চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

আহতদের চিকিৎসার অগ্রগতি সর্ম্পকে জানতে চাইলে ইন্টেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান এসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ হারুণ অর রশিদ বলেন, পাথরঘাটা দূর্ঘটনায় আহত ১ নারী ও ২ পুরুষ এ বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনজনের অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। তিনজনকেই আশঙ্কামুক্ত বলা না গেলেও দিন দিন তাদের উন্নতি হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আহতদের চিকিৎসা ব্যায় কিভাবে নির্বাহ হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে যত সুযোগ সুবিধা ও চিকিৎসা রয়েছেন সবগুলোই আহতরা পাচ্ছেন একদম বিনামূল্যে। তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে পুরো বিভাগই সচেতন বলে তিনি দাবী করেন।

পাথরঘাটা দূর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সর্বশেষ তথ্য জানার জন্য হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনালের মোহসেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, পাথরঘাটা দূর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে চিকিৎসা প্রয়োজন এরকম ৮জনকেই মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছিল। প্রথমদিনেই অগ্নিদগ্ধ অর্পিতা নাথ (১৬) কে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে রেফার করা হয়েছিল। বাকী ৭জনের চিকিৎসা চলছে চমেকে। তাদের মধ্যে ৪জন চিকিসাধীন রয়েছেন হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে। তারা একটু আধটু আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন এবং অচিরেই চিকিৎসা শেষে বাড়ী ফিরে যাবেন।

অপরদিকে যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের চিকিৎসা চলছে আইসিইউতে। তবে আইসিইউতে চিকিৎসারতদের অবস্থাও উন্নতির দিকে বলে তিনি জানিয়েছেন। আইসিইউতে থাকলেও তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

আহতদের চিকিৎসা ব্যয় সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে বিদ্যমান সকল চিকিৎসা সেবাই তারা বিনামূল্যে পাচ্ছেন। যেহেতু অনেকগুলো মানুষ একসাথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেহেতু বিষয়টি আমরা খুব গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। তাদের চিকিৎসা সেবায় কোন ধরণের গাফিলতি নেই বলেও তিনি দাবী করেছেন।