image

অযত্ন অবহেলায় শ্রীহীন জামিজুরী বধ্যভূমি

image

পাক হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক নৃশংসতার সাক্ষী চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় দোহাজারী পৌরসভার জামিজুরী গ্রামের বধ্যভূমিটি। ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী তৎকালীন পটিয়া (বর্তমানে চন্দনাইশ) থানার দোহাজারীর জামিজুরী গ্রামে নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালিয়ে ১৩ জন নিরপরাধ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।

এতে শহীদ হন- ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য, কবিরাজ তারাচরণ ভট্টাচার্য, মাস্টার প্রফুল্ল রঞ্জন ভট্টাচার্য, মাস্টার মিলন ভট্টাচার্য, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, রেনু বালা ভট্টাচার্য, ডা. করুনা কুমার চৌধুরী, হরি রঞ্জন মজুমদার, মহেন্দ্র সেন, নগেদ্র ধুপী, রমনী দাশ ও অমর চৌধুরী।

স্থানীয় এলাকাবাসী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশগুলো একত্রিত করে একটি গর্তে সমাধিস্থ করে। পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা সুভাস মজুমদার (আমিরাবাদ), মুক্তিযোদ্ধা বিমল দাশ (নলুয়া), মনীন্দ্র দাশের (মুজাফরাবাদ) দেহাবশেষও এখানে সমাধিস্থ করা হয়। স্বাধীনতার পর শহীদ পরিবার ও স্থানীয় কয়েকজন প্রগতিশীল তরুণের অক্লান্ত পরিশ্রমে সমাধিস্থলে গড়ে তোলা হয় বধ্যভূমি। 

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দীর্ঘদিন অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকার পর ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ রহিম জামিজুরী বধ্যভূমির ফলক উন্মোচন করেন। এরপর ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে বধ্যভূমি স্থলে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তবে স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি বধ্যভূমিতে যাওয়ার জন্য সড়ক নির্মাণ না হওয়ার ফলে শহীদ পরিবারের বাড়ির আঙিনা দিয়ে দর্শনার্থীদের যেতে হয়। যদিও শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে দৈর্ঘ্যে ২০০ ফুট ও প্রস্থে পাঁচ ফুট জায়গা দেওয়া হয়েছে। 

রবিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে জামিজুরী বধ্যভূমি পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় শহীদ ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্যের ছেলে চাগাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (অব.) প্রধান শিক্ষক সুশীল কান্তি ভট্টাচার্যর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর কেটে গেলেও ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবাররা আজও পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা। পায়নি সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্য কিংবা অনুদান।’

জামিজুরী শহীদ স্মৃতিসৌধ সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে স্মৃতিসৌধ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় বলেও জানান তিনি। 

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানে না জামিজুরীতে একটি বধ্যভূমি আছে। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন অগ্রজদের। বধ্যভূমিতে যাওয়ার জন্য সড়ক নির্মাণের লক্ষে জায়গা দিলেও অদৃশ্য কারণে সড়ক নির্মাণ করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সড়ক না থাকায় দর্শনার্থীদের আমার বাড়ির উঠান দিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে বাড়ির নারী সদস্যরা প্রায় সময় বিব্রত বোধ করেন।’