image

দোহাজারী ৩১ শয্যা হাসপাতাল এখন নিজেই রোগী

image

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এখন নিজেই রোগী। দোহাজারী পৌরসভাসহ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য একমাত্র ভরসাস্থল দোহাজারী হাসপাতাল। ১৯৬৫ সালে ১০ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চাহিদার উপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে ১৯৯০ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরেও প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের বিভিন্নস্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। এ অবস্থায় যে কোন মুহুর্তে ভবনের বিশাল অংশ খসে পড়ে প্রাণহানিসহ বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশংকা করা হচ্ছে। হাসপাতালটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ দ্বিতল ভবনটি জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয়রা।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের মূল ভবনের অনেকাংশে খসে পড়েছে ছাদের অংশ। উত্তর পাশে ছাদের বিশাল আকারের একটি অংশ খসে পড়ে রড বেরিয়ে পড়েছে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। টয়লেটের পাইপ ফেটে ময়লা-আবর্জনা বেরিয়ে সয়লাব হয়ে গেছে ভবনের চারপাশ। দুর্গন্ধে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেট ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। 

রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করায় মল মূত্রের দুর্গন্ধে ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের সারাক্ষণ নাক চেপে থাকতে হয়। পর্যাপ্ত পরিমান আলো থাকেনা অনেক সময় বাল্ব ফিউজ থাকায়, বাল্ব পরিবর্তনেও হয় গরিমসি। দরজা জানালারও ভগ্নদশা। জানালাগুলোর কোনটিতে গ্রিল রয়েছে আংশিক আবার কোনটিতে একটিও নেই। কোন কোনটি বন্ধ করার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীরা তাদের সঙ্গে থাকা পরিধেয় বস্ত্র অথবা খালি কার্টুনের অংশ জানালাতে দিয়ে বাতাস প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করেন।

দোহাজারী হাসপাতালটি ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হলেও প্রায় সময় রোগী ভর্তি থাকেন এর দ্বিগুন। করিডরে আলাদা বেডের ব্যবস্থা করে অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। অনেক সময় ফ্লোরের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা সেবা নেন অনেক রোগী এতে অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। দোহাজারী পৌরসভার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন ধোপাছড়ি, হাশিমপুর, সাতবাড়িয়া, পুরানগড়, কালিয়াইশ, আমিলাইষ ও খাগরিয়ার মধ্যবর্তীস্থানে হওয়ায় দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। এসব ইউনিয়ন থেকে আসা রোগীদের চাপ সামলাতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের হিমশিম পোহাতে হয়। হাসপাতালটি চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মহাসড়কে কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে ট্রমা সেন্টার না থাকায় আহত রোগীদের ঠাঁই হয় দোহাজারী হাসপাতালে।

প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দ্বারা রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। হাসপাতালটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭ জন চিকিৎসক। ১৩ জন নার্সের স্থলে কর্মরত আছেন ৯ জন। ৪ জনের স্থলে ওয়ার্ড বয় রয়েছেন ২ জন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন ২ জন। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ২জন ওয়ার্ড বয় এবং ২জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। আরও ২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দরকার বলে জানান চিকিৎসকেরা। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), ফার্মাসিস্ট, স্টোর কিপার ও কম্পিউটার অপারটরের পদ থাকলেও তা শূণ্যই রয়ে গেছে।  ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চালানো হচ্ছে কর্মকাণ্ড। হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি পুরাতন হওয়ায় তেমন ব্যবহার হয়না।

এ ব্যাপারে দোহাজারী  হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবু তৈয়্যব বলেন, "সম্প্রতি ভবনের দ্বিতীয় তলায় উত্তর পাশে ছাদের একটি অংশের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে।" জনবল সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, "স্বাস্থ্য সহকারী পদটি খালি থাকায় জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অনেক পদ খালি রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে অনেক কাজ।" শূণ্য পদগুলোর ব্যাপারে চাহিদাপত্র ইতিমধ্যে মন্ত্রীপরিষদে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। 

চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহীন হাসান চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, " আমি এ পদে যোগদান করেছি অল্প কিছুদিন হয়েছে। এই সমস্যাগুলো অনেক আগের। আমার আগে যারা এ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। যেহেতু আমার এলাকারই প্রতিষ্ঠান আমিও আপ্রাণ চেষ্টা করবো সমস্যাগুলো সমাধানের।"

এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ ফজলে রাব্বি দৈনিক অধিকারকে বলেন, ''এব্যাপারে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সাথে কথা হয়েছে। দোহাজারী, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী হাসপাতালে অচিরেই সংস্কার কাজ শুরু হবে। স্থাপনাগুলোতে যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন আমরা এবছর সংস্কারকাজ করতে পারবো।" জনবল সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, "জরুরী ভিত্তিতে এটা (জনবল সংকট) সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।" অচিরেই দোহাজারী হাসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শন করবেন বলেও জানান তিনি।