করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে সরকার আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদ মওকুফ করলে ব্যাংকগুলোকেও ভর্তুকি দিয়ে সহায়তা করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ৯ মাস সুদ মওকুফ চান। এটা করলে তারল্য সংকট বাড়বে। আবার ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে হবে। সুদ মওকুফ করতে হলে সরকারকে অবশ্যই ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিতে হবে। এটা সরকারের জন্য সম্ভব হবে কিনা দেখার বিষয়।
একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, করোনার আগের পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোতে নিয়মকানুন ও আইন মেনে ঋণ দেওয়া হয়নি। আইন ও নিয়ম ভেঙে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এখন ব্যাংকিং খাত সংগ্রাম করছে নিয়মের মধ্যে আসতে। করোনা পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে দুই মাসের সুদ স্থগিত করা হয়েছে।
এটা কিন্তু চূড়ান্ত সুদ হিসেবে মওকুফ করা হয়নি। এটা করতে হলে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রভাব পড়বে। আর ব্যবসায়ীরা চান আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদ মওকুফ। এটা করা হলে তারল্য সংকটে পড়বে ব্যাংকিং খাত। তিনি বলেন, ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে হবে। দেশের স্বাভাবিক কর্মকান্ড সচল রাখতে হবে। অর্থনীতির চাকা বন্ধ থাকলে বিপদ বাড়বে। একজনের আয় দিয়ে অন্যজন খরচ করেন, এভাবেই চলে অর্থনীতি। তাই মানুষের জীবন-জীবিকা সচল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু করা উচিত।এটা না করতে পারলে অর্থনীতির রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হবে। ফলে অর্থনীতি বিশাল ক্ষতির দিকে যাবে।
অর্থনীতি সমিতির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে, তাদের সুদহার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে এনে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়া। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ কার্যকর সম্ভব হবে। তাই পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই পরিচালক বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নগদ মুদ্রা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ছয় মাস মেয়াদি মুদ্রানীতি এখন তিন মাস অন্তর অন্তর করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে তাৎক্ষণিক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা। এই মুদ্রানীতিতে করোনা সংকট থেকে উদ্ধার পেতে প্যাকেজ থাকা উচিত।
হিসাববিদদের সংগঠন দি ইনস্টিটিউটি অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সাবেক এই সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সাময়িক পদক্ষেপ নিতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থাৎ সরকার যে সহায়তা দেবে তা আগেভাগেই দেওয়া উচিত। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে মানুষের পাশে থাকা উচিত। এতে মানুষ আত্মবিশ্বাসী হবে। পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
Developed By Muktodhara Technology Limited