image

সুস্থ আছেন মানে আপনার মাথায় রাজমুকুট

image

‘সুস্থ শরীর’—মানবজীবনের অন্যতম বড় ধন। হয়তো এটিই সেরা দৌলত। করোনাকালে এসে এই নেয়ামতের কথা পদে পদে টের পাচ্ছে মানবজাতি।

সুস্থ থাকতে বিরল ঘরবন্দী জীবনকে মেনে নিয়েছে মানুষ। অনেক সাধ-আহ্লাদ ত্যাগ করে 'পানসে' লাইফস্টাইলকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। এরপরও অদৃশ্য শক্তির কাছে বিশ্বভরা অসহায় মুখের ছড়াছড়ি।

তাই এই সময়ে এসে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটু সচেতন হয়ে যদি হাতেগোনা গুটিকয়েক নিয়ম মেনে রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট হই, তবেই জীবনকে আমরা সত্যি সুস্থ-সুন্দর রাখতে পারি। ফিট থাকতে গেলে আমাদের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতেই হবে। তেমন কিছু সুস্থতার সূত্র একটু খতিয়ে দেখি।

শারীরিক সূত্র : দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ এর মতে, "সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ও পরিমিত ঘুম প্রয়োজন। দিবানিদ্রার অভ্যাস কমিয়ে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস ভালো। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস সুস্বাস্থ্যের সহায়ক। সকালে স্কুল-কলেজ বা অফিসে যাওয়ার আগে গোসল সেরে নিন। প্রতিদিন সমতল জায়গায় হাঁটার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন হাঁটা সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম। নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিটা থেকে ঘণ্টাখানেক হাঁটার অভ্যাস করুন। যাদের মেদ-ভুঁড়ি আছে, তারা নিয়মিত ও সঠিক ব্যায়াম করতে পারেন। তবে, ভুল ব্যায়াম ও অনিয়ন্ত্রিত ‘জিম এক্সারসাইজ’ সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। নিয়মিত ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার বাড়ান। আমিষ ও চর্বিজাতীয় খাবার কমিয়ে আনুন। ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। লাল মাংস (চার পা বিশিষ্ট পশুর মাংস), মিষ্টি, ঘি, ডালডা, চর্বি জাতীয় খাদ্য কম খান। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খাদ্য তালিকায় রাখুন। একবারে বেশি করে খাওয়ার চেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খেতে পারেন। যাদের শরীরের ওজন বেশি তারা খাবার গ্রহণের আগে শসা, টমেটোসহ সালাদ জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন, এতে খাবারের পরিমাণ কম লাগবে। খাবার সময় মাঝে মাঝে পানি পান না করে শেষে অন্তত আধা ঘণ্টা পর পানি পান করবেন। ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য, এলকোহল এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য পরিহার করুন।

মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেট ব্যবহারে সংযত হোন। এতে শারীরিক অলসতা যেমনি তেমনি মানসিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করুন। স্ত্রী-পুত্র, বাবা-মাকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাদেরও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। কাজে ব্যস্ত থাকাটা শরীর ও মন দুয়ের পক্ষে ভালো। পেশাগত কোনো সমস্যা থাকলে সে সমস্যাকে জিইয়ে না রেখে তা মেটানোর চেষ্টা করুন। পজিটিভ চিন্তা করুন, বই পড়ুন। কোনো শখ গড়ে তুলুন, নতুন কিছু করুন। অতিরিক্ত টেনশন, বিষণ্নতা, মানসিক চিন্তা পরিহার করুন ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন এবং সুকর্মে সক্রিয় থাকুন। নিজের কাছে সৎ থাকুন। নিজ নিজ ধর্মীয় চর্চায় মনোনিবেশ করুন। সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করুন, নিজের ওপর ভরসা রাখুন। কথার ওপরে সংযম রাখুন। আপনার কথায় কেউ যেন মানসিক দুঃখ না পায়। সেটা মাথায় রেখে কথা বলুন। তাই এসব বিষয়ে আরও সচেতন হোন।"

মানসিক সূত্রঃ এটা কঠিন কোনো সূত্র নয়। শুধু কথা দিয়েই সুস্থভাবে বেঁচে থাকা যায় অনেক বছর। একথা, জানালেন ইউনিভার্সিটি অব জুরিখের একদল গবেষক।

তাদের একটি জরিপে দেখা গেছে, যারা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করে এবং শত অসুবিধা থাকার পরও নিজেকে সুস্থ মনে করে, তারা অন্যদের চেয়ে বেশিদিন বাঁচেন। আর যতোদিন তারা বেঁচে থাকেন সুস্থভাবেই বেঁচে থাকেন।

ড. ডেভিড ফাহ’র নেতৃত্বে একদল গবেষক সত্তর দশকের শেষ দিকে একটি জুরিখের আট হাজার বিভিন্ন বয়সী ব্যক্তির ওপর স্বাস্থ্য জরিপ চালান। যেখানে সবাইকে নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে শুধু একটি ছোট প্রশ্নই করা হয়। ‘আপনি কেমন আছেন?’

ব্যস, এতোটুকুই। এরপর ড. ফাহর দল ওই জরিপের আট হাজার জুরিখবাসীর সঙ্গে আবারো যোগাযোগ করেন এবং তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তারা দেখতে পান, যারা নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন তারা আসলেই অন্যদের চেয়ে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। যারা নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে হীনমন্যতায় ভোগেন তাদের শুধু মনেই নয়, দেহেও ভর করেছে অনেক রোগ।

এই জরিপের ফলাফলের ব্যাপারে ডেভিড ফাহ বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, মানসিকতা কিভাবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে তা পর্যবেক্ষণ করা। এবং আমরা জানতে পেরেছি, আসলেই আমাদের চিন্তাও আমাদের সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। ‘ভালো আছি’ বললেই ভালো থাকা যায়।”

বিচারপতি এ কে এম সাদেক ‘মুক্ত বিশ্বাস বদলে দেয় জীবন’ নামক নিবন্ধে বলেন, এ শরীর নিয়েই এত দিন দিব্যি ছিলাম। যে দিন টেনশন করলাম, মনে কষ্ট পেলাম, সে দিনই অসুস্থ হলাম। তার মানে অসুখটা মনে, হৃৎপিণ্ডে নয়; সমস্যাটা ব্রেনের চিন্তায়, স্নায়ুতে নয়। তাই সমাধানের সূত্রও রয়েছে মনে আর দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে।

গত শতকের শুরুতে ফরাসি সাইকোথেরাপিস্ট এমিল কুয়ে শুধুমাত্র অটোসাজেশনের মাধ্যমেই শত শত রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন, উজ্জীবিত করেছেন মনোদৈহিকভাবে। সেসব রোগীরা সারাদিনে অসংখ্যবার বলতেন- Day by day in every way I am getting better and better.

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এভাবে একটি ইতিবাচক বাক্য ক্রমাগত বলতে থাকলে মস্তিষ্ক উদ্দীপিত হয়ে ওঠে এবং শরীরকেও সেভাবেই পরিচালিত করে নিরাময় ও সুস্থতার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।

শতবর্ষ সুস্থ থাকার সূত্রঃ পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসন কারো সাথে হাত মেলাবার সময় দস্তানা পরতেন, মুখে মাস্ক লাগাতেন। তার মানে জ্যাকসনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শংকা ছিলো না। আসলে জ্যাকসন ১৫০ বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন।

নিজের দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতে ১২ জন ডাক্তার নিযুক্ত করে ছিলেন,যারা তার মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত প্রতিদিন পরীক্ষা করতো।খাবার ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে খাওয়ানো হত।

প্রতিদিন ব্যায়াম করানোর জন্য ১৫ জন লোক ছিল। Oxygen যুক্ত বেডে ঘুমাতেন। নিজের জন্য Organ Donar রেডি করে রেখেছিলেন। যাদের সমস্ত খরচ নিজে বহন করতেন,যাতে হঠাৎ দরকার পড়লেই তারা Kidney, Lungs,Eye etc organ মাইকেলকে দিতে পারে। জীবনের শেষ ২৫ বছর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একপাও চলতেন না। একবার তিনি দাবি করেছিলেন, অক্সিজেন চেম্বারে ঘুমানোর জন্য অন্তত ১৫০ বছর বাঁচবেন তিনি।

তারপরও পারলেন না। হেরে গেলেন। মাত্র ৫০ বছরের জীবন পেলেন এই ধনবান শিল্পী।

তবে এবার ১০১ বছর সুস্থ থাকার তরিকা নিয়ে এলেন যুক্তরাজ্যের অত্যন্ত সুপরিচিত একজন চিকিৎসক ড. ডন হারপার। মানুষের স্বাস্থ্যের উপর টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞান দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি একটি বই লিখেছেন। বাইটির নাম "১০১ বছর সুস্থ হয়ে বাঁচুন।"

নীরোগ দীর্ঘ আয়ুর জন্যে এখানে তার দেওয়া সাতটি টিপস তুলে ধরা হলো:

১. ঠিক মতো ঘুমান : দিনে ঠিক কতোটুকু সময় ঘুমাচ্ছেন এবং সেই ঘুম কেমন হচ্ছে সেটা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি ঘুম যেমন খারাপ তেমনি খারাপ অল্প ঘুমও। ড. হারপার বলছেন, সেকারণে ঠিকঠাক মতো ঘুমাতে হবে।

ফলে আমরা যারা ঘুমের চাহিদা মিটিয়ে নিতে অল্প একটু সময় চোখ বন্ধ রেখে ভাবছি যে আমাদের ঘুম হয়ে গেছে, তাদেরকে একটু সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, "দিনের বেলা অল্প কিছুক্ষণের জন্যে ঘুমিয়ে নেওয়া, যেটাকে আমরা ক্যাটন্যাপ বলি, সেটার কথা আমরা জানি। তবে সেটা ঠিকঠাক মতো হতে হবে। যেমন একটা ব্যাটারিকে পুরোপুরি চার্জ দেওয়া হয়। আমরা যদি শুধু ক্যাটন্যাপ দিয়ে চালিয়ে নেবার চেষ্টা করি তাহলে সেটা স্বাভাবিক হবে না। রাতের বেলা আমরা বেশ কয়েকবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই।"

২. হাঁটাচলা করুন : আমাদের অনেকেই প্রচুর সময় বসে থেকে কাটাই। এবং এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো নয়। সুসংবাদ হচ্ছে যে এজন্যে আমাদের ম্যারাথন রানার হতে হবে না। যেটা করতে হবে সেটা হলো শরীরটাকে একটু নাড়ানো- মানে হাঁটাচলা করা।

ড. হারপার তার বই লিখতে গিয়ে এরকম বহু মানুষের সাথে কথা বলেছেন যারা এক শতাব্দী কাল ধরে বেঁচে আছেন। তিনি দেখেছেন, তাদের সবার মধ্যেই একটি জিনিসের মিল আছে। সেটা হলো তারা কিন্তু কোন অ্যারোবিকসের ক্লাসে যায়নি, কিম্বা স্কোয়াশ খেলতেও যায়নি, কিন্তু তারা প্রচুর হেঁটেছেন।"

৩. আপনার লিভারকে একটু বিশ্রাম দিন : এক গ্লাস রেড ওয়াইন হয়তো অনেকের কাছে খুব আনন্দের কিছু। কিন্তু ড. হারপার বলছেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় পান করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, "অবশ্যই প্রত্যেক রাতে পান করা যাবে না। আপনার লিভারকে একটু বিশ্রাম দিতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দু'দিন।"

৪. আপনার জিন সম্পর্কে জানুন : বিশেষ কোন অসুখে পড়ার প্রবণতা হয়তো আপনার মধ্যে বেশি থাকতে পারে। কিন্তু ড. হারপার বলছেন, আপনার পরিবারের বা বংশের অন্যান্য সদস্যদের অসুখ বিসুখের ইতিহাস জানা থাকলে সেটা আমাদেরকে সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে সাহায্য করতে পারে।

তিনি বলেন, "জিন যে শরীরে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই মুহূর্তে হয়তো আমি আমার জিন নিয়ে বেশি কিছু করতে পারবো না। কিন্তু কোন কোন জিনের কারণে আমরা বিশেষ একটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছি সেটা জানলে আমাদের সুবিধা হবে। হৃদরোগের কথাই ধরুন। আমি তো আর আমার জীবন নিয়ে যন্ত্রণায় ভুগতে চাই না। কিন্তু আমি হয়তো এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজোম সম্পর্কে আরো একটু সচেতন হতে পারি।

৫. কার্বোহাইড্রেটের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে : ভাত ও রুটির মতো কার্ব পরিহার করা আজকালকার দিনে হয়তো একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ডা. হারপার বলছেন, ব্যালেন্সড ডায়েটের জন্যে আমাদেরকে এসবও খেতে হবে। খুব বেশি আনন্দিত হবার কিছু নেই। এখানেও কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি সবসময় রিফাইন বা মসৃণ কার্ব না খেয়ে বরং একটু জটিল ধরনের (মোটা আটার) কার্ব খাওয়ার কথা বলবো। যেমন বাদামী চাল, আস্ত শস্য দানা সমেত মোটা আটার রুটি।

৬. প্রতিদিন হাসুন : সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকা অত্যন্ত আনন্দের- এটা মনে রাখতে হবে। এটাকে দৈনন্দিন টুকিটাকি কাজের অংশ হিসেবে দেখলে হবে না। এখানে মানসিকতার একটা পরিবর্তন প্রয়োজন। ড. হারপার বলেন, "এজন্যে ইতিবাচক মনোভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"

বইটি লিখতে গিয়ে গবেষণা করার সময় তিনি একজন বিজ্ঞানীর করা একটি গবেষণা খুঁজে পেয়েছেন যেখানে তিনি দীর্ঘ আয়ুর সাথে তিনি হাসিখুশির থাকার একটা সম্পর্কে খুঁজে পেয়েছেন।

"এমন কিছু করুন, যা প্রতিদিন আপনাকে হাসিখুশি রাখবে," বলেন তিনি।

৭. চাপমুক্ত থাকার রাস্তা খুঁজে বের করুন : আমাদের অনেকেই নানা রকমের স্ট্রেসের মধ্যে থাকি বা মানসিক চাপে ভুগি। এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর। সেটা শারীরিক ও মানসিক দু'ধরনের স্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করে।

"আজকের দিনে নানা কারণে স্ট্রেসের সৃষ্টি হয়। সেটা কাজের কারণে হতে পারে, হতে পারে সম্পর্কের কারণেও। পারিবারিক কারণেও হয়। কিন্তু এসব চাপ থেকে কীভাবে মুক্ত থাকা যায় তার উপায় প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে খুঁজে নিতে হবে। কারণ একেকজনের বেলায় এটা একেকভাবে কাজ করে," বলেন ড. হারপার।

আমার এক পরিচিত ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসা নিতে যান। ওখানে গেলে একটি বাড়িতে আতিথ্য নেন। ওই বাড়ির কর্তা খুব ধার্মিক। তিনি কথায় কথায় বলেন, "চেন্নাইয়ের অসুস্থ মানুষের নিত্য আনাগোনা। সবসময় অনেকের তাদের কান্নাকাটি, আহাজারি দেখি। কাউকে কাউকে ধন-দৌলত বিক্রি করে হলেও সুস্থ হতে, বেঁচে থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা যায়। এসব দেখে খোদার দরবারে দুহাত তুলে কেবলই সুস্থতা চাই। কারণ, সুস্থতার চেয়ে বড় নেয়ামত এই জগতে আর নাই। "

এটা সত্য যে, আমরা অসুস্থ হই তখন বুঝতে শুরু করি সুস্থতার গুরুত্ব কতখানি। আর আমরা যখন কোনো আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতজনকে দেখতে হাসপাতাল-ক্লিনিকে যাই এবং নিজের চোখে তার কষ্ট ও সেখানকার কঠিন পরিস্থিতি দেখি, তখন সুস্থতার গুরুত্ব আরো ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হই। অসুস্থতার পাল্লায় নিজেকেও মেপে নিতে পারি।

আসলে সুস্থতা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সেরা পুঁজিও বলা যায়। প্রাচীন গ্রিসের চিকিৎসাবিদ হিপোক্রেটিসের ভাষায় "সুস্থতা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের মুকুট এবং অসুস্থ হলেই কেবল একজন মানুষ এই মুকুটকে দেখতে পায়।"

তাহলে এখানে স্থির থাকি যে,
সুস্থ আছেেন মানে, আপনি এখন বিশ্বসেরা ধনবানদের একজন।
সুস্থ আছেন মানে, আপনার মাথায় অলিখিত এক রাজমুকুট শোভা পাচ্ছে।

লেখক : ফজলুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।