image

দোহাজারী মহাসড়কে ময়লার স্তুপ : উৎকট দুর্গন্ধে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

image

চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ ঘেঁসে হাজারী টাওয়ারের সামনে ময়লার স্তুপের কারণে জনস্বাস্থ্য এখন হুমকির মুখে। নাক চেপে ধরে এই এলাকায় পথ চলতে পথচারীদের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। আবার নাক ছাড়লেই উৎকট দুর্গন্ধে যেন পেট ফেঁপে যায়।

পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনেক বছর ধরে এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের কারণে ওই রাস্তাটি পথচারী চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরছে। উৎকট দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ থাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জনগুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তারা নাক চেপে ধরে কোনো রকমে পথ অতিক্রম করতে বাধ্য হচ্ছেন। দুর্গন্ধ সইতে না পেরে অনেকেই বমি করেন।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে দোহাজারীকে পৌরসভা ঘোষণার বিষয়টি পাশ হয়। দোহাজারী ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করে সরকারি গেজেট জারি হয় একই বছরের ১১ মে। পরবর্তীতে পৌর কার্যক্রমের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ওই বছরের ১৪ জুন পৌর প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ইতিমধ্যে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা অপসারণের জন্য ১টি গার্ভেজ ট্রাকসহ ২টি গার্ভেজ ভ্যান আনা হয়েছে। পৌরসভা ঘোষণার তিন বছর পূর্ণ হলেও বর্জ্য অপসারণের জন্য এখনো নির্দিষ্ট স্থান না পাওয়ায় বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

হাজারী শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ লোকমান হাকিম বলেন, "তিন বছর আগে খাতা-কলমে পৌরসভা হলেও দোহাজারী উপ-শহরে পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে কিছুই নেই। ফলে পুরো দোহাজারী পৌরসদরই এখন ছোট-বড় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পৌরসদরস্থ জাতীয় মহাসড়ক ও ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন সড়কসহ পুরো উপ-শহরের অলিগলি সবখানেই এখন ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। সব মিলিয়ে দোহাজারী এখন পরিণত হয়েছে ময়লা-আবর্জনার শহরে।"

চট্টগ্রাম দক্ষিণ কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী বলেন সামান্য বৃষ্টিতেই পাল্টে যায় দোহাজারী পৌরসভা সদরের চিত্র। বিভিন্ন সড়ক ময়লা পানিতে ডুবে যায়। দিন দিন এ ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে অনুকরণীয় এ উপ-শহরটির ঐতিহ্য অনেক পুরোনো। এই সবকিছুই এখন ম্লান হতে বসেছে ময়লা-আবর্জনার কাছে।

হাজারী টাওয়ার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি কাজী হাছান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দোহাজারী শুধু অবহেলিতই থেকে গেছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা।

সরেজমিন দোহাজারী পৌরসদরে ঘুরে দেখা যায়, পুরো পৌরসদর জুড়েই ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ফলে অলিগলিতে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। বর্জ্য যেখানে ফেলা হয় সেখানে পঁচে নষ্ট হয়ে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। বর্জ্য ও কাঁদা ময়লার কারণে পথচারীরা স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেনা। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে। এছাড়া মিঠা পানির মাছের প্রজননক্ষেত্র শঙ্খনদীর বিভিন্ন স্থানেও ফেলা হচ্ছে হাটবাজারসহ মানবসৃষ্ট বর্জ্য। ফলে নদীর পাড়ই পরিণত হয়েছে এখন স্থায়ী ডাস্টবিনে।

দোহাজারী পৌরসদরে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই শতাধিক সবজি, মাছ, মাংস, শুঁটকিসহ অন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রয়ের ভাসমান দোকান বসে। এ ছাড়া ৭টি বিশাল মার্কেট এবং সহস্রাধিক দোকানপাট, ব্যাংক, বীমা, ডাকঘর, রেস্তোরাঁসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও এখানে পয়ঃনিস্কাশনের কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের সমস্থ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পৌরসদর জুড়ে। দ্রুততম সময়ে হাজারী টাওয়ারের সামনের ময়লার স্তুপ অপসারণ করার পাশাপাশি পৌর সদরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ডাস্টবিন স্থাপণের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান স্থানীয় সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসক ও চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ''ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা না পাওয়াতে বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ময়লা আবর্জনা অপসারণ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য একটি ডাম্পিং ষ্টেশন করতে আমরা যায়গা খুঁজতেছি। ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান নির্ধারণ হলে খুব শীঘ্রই বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান।