image

ক্যান্সারের ঔষধ দিয়ে অকেজো যকৃতের চিকিৎসা?

image

শিক্ষানবিস সেবিকা কারা ওয়াট একটি বৃদ্ধ নিবাসে কাজ করতেন। বছর দুয়েক আগে হঠাৎ অসুস্থ হতে শুরু করলেন।

তার মুখ ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে উঠছিল। লিভারের অসুখের অন্যতম লক্ষণ এটি। পরীক্ষায় দেখা গেলো তার যকৃত ঠিকমতো কাজ করছে না।

দিন দিন তার অবস্থা এতটা খারাপের দিকে যাচ্ছিলো যে একপর্যায়ে তাকে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হল।

চিকিৎসকেরা তাকে জানালো তার যকৃত প্রতিস্থাপন করতে হবে।

কারা বলছিলেন, তার জন্য বিষয়টি ছিল এক ভয়াবহ খবর। এমন খবর কেউ শুনতে চায়না।

কারা'র বয়স এখন একুশ বছর। দুই বছর আগে তার যকৃত প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

মানবদেহের যকৃতের রয়েছে নিজেকে সারিয়ে তোলার অসাধারণ ক্ষমতা। দরকারে সে নিজেকে মেরামত করে নেয়।

কিন্তু আঘাত বা কোন ধরনের ঔষধ বা মাদকের অপরিমিত মাত্রায় সেবনের কারণে অনেক সময় যকৃত হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানব দেহের লিভার বা যকৃৎ হঠাৎ কাজ করা বন্ধ হয়ে গেলে প্রতিস্থাপনের বদলে বরং ঔষধ দিয়ে যকৃত সারিয়ে তোলা সম্ভব হতে পারে।

তারা বলছেন, ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এমন একটি ঔষধ ইঁদুরের শরীরে ব্যবহার করে তারা সফল হয়েছেন।

এটি দিয়ে যকৃতের নিজেকে সারিয়ে তোলার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গবেষণাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি পুরো সফল হলে যকৃত প্রতিস্থাপন না করে বরং ঔষধ দিয়ে বিকল যকৃত সারিয়ে তোলা যাবে।

যার ফলে বিশাল খরচ, প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গ দানকারী অনুসন্ধান, লম্বা সময় ধরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের তালিকায় ঝুলে থাকা এসব নানা জটিলতা থেকে একজন অসুস্থ ব্যক্তি মুক্তি পাবেন।

গবেষকরা প্রথমে মানুষের যকৃতের উপর কাজ করে বোঝার চেষ্টা করেছেন কেন হঠাৎ সেটি নিজেকে মেরামত করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

তারা দেখলেন ভয়াবহ আঘাতে যকৃতে এক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয় যাকে বলা যেতে পারে বার্ধক্যকে অগ্রসর করা।

মানবদেহের যখন বয়স হয়ে যায় তখন তার শরীরের কোষগুলো দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পরে, সে আর নূতন কোষ সৃষ্টি করতে পারে না।

যার ফলে মানবদেহ নানা অঙ্গকে আর পুনরুজ্জীবিত বা তাজা করতে পারে না। যে কারণে বুড়ো হয়ে যায় মানুষ।

আঘাতে ফলে যকৃতেরএই প্রক্রিয়া খুব দ্রুত বাড়ে এবং যকৃতের নিজেকে সারিয়ে তোলার ক্ষমতা আর কাজ করে না।

যকৃত যেন হঠাৎ ভয়াবহ রকমের বুড়ো হয়ে যায়। এর জন্য এক ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়া শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

তারা এর পর ইঁদুরের উপরে গবেষণা শুরু করেন। ল্যাবে ইঁদুরের শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় মাদক দেয়া হয় যা সাধারণত যকৃতকে অকার্যকর করে দেয়।

এরপর তারা এক ধরনের ক্যান্সারের ঔষধ ব্যবহার করে ইঁদুরের শরীরে ঐ রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

গবেষকরা শীঘ্রই এই ঔষধ মানবদেহে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছেন।

সেবিকা কারা ওয়াট এখন দিনে ১৩ টি করে ঔষধ সেবন করেন। নতুন যকৃতকে তার শরীর যাতে গ্রহণ করে সেজন্যেই এই ঔষধগুলো তাকে খেতে হয়।

তবে তিনি আশা করছেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সফল হলে তার মতো আরও বহু রোগীকে আর যকৃত প্রতিস্থাপনের পথে যেতে হবে না।

তার শরীরই ঔষধ দিয়ে অসুস্থ যকৃতকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলবে।

খবর : বিবিসি বাংলা