image

প্রশাসনিক কঠোর এ্যাকশনে তটস্থ ইয়াবা খনি কক্সবাজার

image

ইয়াবা খনি খ্যাত কক্সবাজারকে আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মাদকমুক্ত জেলা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।

এ লক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি বেনজির আহম্মেদের নির্দেশে জেলাকে পুরোপুরি মাদকমুক্ত করতে হার্ডলাইনে রয়েছে জেলা পুলিশ।

কক্সবাজার থেকে পুরোপুরি মাদক নির্মূলে ২০ জুলাই থেকে জেলাব্যাপী চলছে মাদক বিরোধী অভিযান। এতে করে ইয়াবার অভয়ারণ্য কক্সবাজার কাঁপছে।

পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন বলেছেন, শুধু মাদক ব্যবসায়ী নয়,মাদকসেবী, খুচরা ব্যবসায়ী, মাদকের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তি, পরোক্ষ ভাবে মাদকের সুবিধাভোগী, মাদকের সাথে বিন্দু মাত্র সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ও তদবিরকারী ব্যক্তিদের ছাড় দেয়া হবে না। তবে অভিযানে কিছু মাদক ব্যবসায়ী এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে। সেই সাথে বারবার কৌশল পাল্টাচ্ছে মাদক কারবারীরা। নিরাপদ জোনে পরিণত করেছে নৌপথকে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেফতার করছে মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের। বন্দুক যুদ্ধে নিহতও হয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে থাকা বড় বড় ইয়াবা কারবারিরাও এখন ধরা পড়ছেন। একেরপর এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। এই অভিযানের ফলে ইয়াবার বুক রীতিমত কাঁপছে।  

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পরও বন্ধ হচ্ছে না এ ব্যবসা। উল্টো নতুন নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে মাদক কারবারীরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে এমন তথ্যই ওঠে এসেছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি বেনজির আহম্মেদের নির্দেশে জেলাকে পুরোপুরি মাদকমুক্ত করতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। ২০ জুলাই থেকেই সারা জেলায় অভিযান শুরু হয়। ওই অভিযানে ইতোমধ্যে অনেক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক শত চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীকে। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন কৌশলে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। 

আকাশ ও নৌপথকে মাদক কারবারীরা ব্যবহার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যাত্রীবাহি বাসে, শরীরে পাকস্থলি,লবণ বস্তার ভিতর, কাভার্ড ভ্যানেসহ বিভিন্ন কৌশলে মাদক পাচার করে আসছে। পরে একাধিক অভিযানে যাত্রীবাহি বিভিন্ন পরিবহন থেকে মাদক ও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ইয়াবা।

এক পর্যায়ে ওই কৌশল পাল্টে ফেলে তারা। এবার কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক শুটকি মহাল এলাকা থেকে শুটকির গুড়া ভর্তি বস্তার ভিতর লুকিয়ে ট্রাক যোগে পাচারের সময় ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় আবদু রহিম নামের এক ব্যবসায়ীর ৬০ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আটক করেছে র‍্যাব। এসময় দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।

নাজিরার টেক থেকে শুটকির গুড়া ভর্তি ট্রাক যোগে ইয়াবাগুলো ময়মনসিংহে পাচার করছিল। মাদক ব্যবসায়ীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে এমন কৌশল অবলম্ভন করলেও ওই চক্রের সদস্যদেরও গ্রেফতার করা হয়।

একটি সুত্র জানিয়েছেন,আসছে ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ইয়াবা পাচারের কৌশল হিসেবে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত লবণ বহনকারী পরিবহনগুলোকে মাদক কারবারীরা টার্গেট করে। এ সময় তারা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সামনের অংশের গোপন প্রকোষ্ঠে ইয়াবা ঢাকায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। 

এরপর আবার কৌশল পাল্টায় মাদক ব্যবসায়ীরা। এবার তারা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সারা দেশে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। সুন্দরবন ও এসএ পীিবহণ নামের কুরিয়ার সার্ভিসে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

এ অভিযানের পর ফের কৌশল পাল্টায় মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা সিকিউরিটি সার্ভিসের আড়ালে ইয়াবা পাচার করছে বলে জানা যায়।

মাদক ব্যবসায়ীদের দমন করতে টেকনাফ ও কক্সবাজার এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করেছে র‌্যাব।

পুলিশের পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীও সড়কগুলোতে চেক পোস্ট বসিয়ে করা হচ্ছে গাড়ি তল্লাশি। তারপরও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে। 

১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণার পর থেকে পুলিশ জেলাব্যাপী ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। গত ২৩ জুন রাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহতে হয়েছেন উখিয়ার কুতুপালং এর প্রভাবশালী ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমেদ প্রকাশ বখতিয়ার মেম্বার। বখতিয়ার মেম্বার রোহিঙ্গা ভিত্তিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে এতদিন আলোচিত ছিলেন। কুতুপালং এর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিলো এই বখতিয়ার মেম্বারের হাতে। খুব বিচক্ষণতার সাথে গত কয়েক বছর ধরে সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলো। 

ডিসেম্বরের কক্সবাজার জেলাকে পুরোপুরি মাদক মুক্ত করতে অভিযান জোরদার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশও। গত ২০ জুন রাতে কক্সবাজার শহরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও এককোটি পিস ইয়াবা ছিনতাইকারী মিজান ডিবি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। উদ্ধার হয় ১০ হাজার ইয়াবা। অথচ একসময় এই মিজানও ছিলো ধরাছোয়ার বাইরে। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মো.শাহজাহান কবির বলেন, কক্সবাজার শহরের চিহ্নিত মাদক কারবারি মিজানুর রহমান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী এড়িয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গত ১৭ জুলাই যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একটি দলের কাছে তাকে হস্তান্তর করে।

ওসি শাহজাহান বলেন,পর্যটন শহরকে মাদকমুক্ত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশও।

এভাবে প্রতিদিনই ইয়াবা বয়বসায়ী আটক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা পড়ছে ইয়াবা কারবারীরা।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, ১০২ জন আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তথ্যে ৬৬৭ জনের নাম পাওয়া গেছে যাদের নাম কোন তালিকায় ছিলো না। ওই সকল ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।