image

বিআইডব্লিউটি'র খামখেয়ালিতে উন্নয়ন কাজ বন্ধ

image

প্রায় পাঁচশত কোটি টাকার বেসরকারী বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি চালু হলেও ইকোনমিক জোনের শিল্প প্লটের নির্মাণ কাজ মুখথুবড়ে পড়েছে বিআইডবিøউটিএর খামখেয়ালিপানা আর নদী দখল মুক্ত করা হাইকোর্ট এর আদেশকে বিআইডবিøউটিএর কতিপয় কর্মকর্তা নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে। 

রাজধানীর কেরানীগঞ্জ বছিলা ব্রীজের ওপারে বুড়িগঙ্গা-তুরাগ নদীর তীরে চরওয়াশপুর এবং শ্যামলাপুর মৌজায় প্রায় ৬০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মাইশা পাওয়ার প্লান্ট। একই সঙ্গে পাওয়ার প্লান্টের পাশে আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোনের ভরাট কাজ শেষ হলেও শিল্প প্লটের নির্মাণ কাজ মুখ ধুবড়ে পড়ে আছে বিআইডবিøউটিএ’র উচ্ছেদের কারনে।যার ফলে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোনে ১০০% রপ্তানীযোগ্য শিল্প কারখানা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানটির একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানান, মূলত হাইকোর্টের আদেশকে বিআইডব্লিউটিএর খামখেয়ালি ও মনগড়া সিদ্ধান্তের কারনেই কয়েক হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটির কাজই বন্ধ হয়ে আছে।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট নদী দখল মুক্ত করতে সিএস ও আরএস মুলে মালিকানার ভূমির কথা  স্পষ্টভাবে আদালতের আদেশে উল্লেখ থাকলেও  বিআইডবিøউটিএ সিএস অথবা আরএস (যাহার জন্য যাহা উপযোগী ও লাভজনক) মূলে মালিকানার দোহাই দিয়ে জটিলতা তৈরী করছে।

তিনি বলেন, এখানে অথবা বলার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া নদী দখল উচ্ছেদের পূর্বে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবগুলো বিভাগের সমন্বয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও বিআইডবিøউটিএ জেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে এককভাবে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ চালাচ্ছে বিধায় সংকট তৈরী হয়েছে।

তিনি বলেন, যেখানে বিআইডবিøউটিএ নিজেরাই একবার বলছে ১৫ একর ভূমি নদীর, আবার নিজেরাই বলছে ২একরের বেশী। অর্থাৎ বিআইডবিøউটিএ নিজেরাই বিভ্রান্তি তৈরী করছে ভূমির পরিমান নিয়ে যা আদৌ নদীর ভূমি নয়; সিএস ও আরএস জরীপে মালিকানাধীন ভূমি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বেসরকারী বিদুৎ প্লান্ট ও ইকোনমিক জোনের জন্য জেলা প্রশাসক ও বিআইডবিøউটিএ ভুমিতে অনাপত্তিপত্র ইস্যু করার ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোন লিমিটেডকে বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দেয়। এরপর ভূমি ভরাট করে বিদ্যুৎ প্লান্টটি চালু করা হয়েছে এবং বেসরকারি ইকোনমিক জোনের ভরাট কাজ শেষ করা হয়েছে।

উক্ত দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা শিফা কনষ্ট্রাকশন এন্ড ই›িজনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইকোনমিক জোনের স্থাপনা নির্মাণের কার্যাদেশও দিয়েছি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত বিআইডবিøউটিএ ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ইকোনমিক জোনের পাশে প্রবাহমান বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ তীরে শিল্প প্লটে নির্মাণ সামগ্রী লোড আনলোড এর জন্য অস্থায়ী ভাবে থ্রোয়িং ড্রেজার ও বার্থিং করার অনুমতি প্রদানের বিষয়ে অযথা বিলম্ব ও সময় ক্ষেপন করছে।

এ বিষয়ে শিফা কনস্ট্রাকশন ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর ম্যানেজার নাঈম শিকদার জানান, আমরা বিআইডবিøউটিএ চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে অনুমতি প্রদানের আবেদন করলে গত ২১ জুলাই চেয়ারম্যান মহোদয় জরুরী পরিদর্শন করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেয়া সত্বেও বিআইডবিøউটিএ’র ঢাকা নদী বন্দর অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম পরিচালক নানা অযুহাতে সময় ক্ষেপন করছেন।

নির্মানাধীন প্রতিষ্ঠান দুটির উর্দ্ধতন কর্মকর্তা আরও বলেন, হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পর প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে এবং আর্থিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এতে করে যেমন নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নতশীল রাষ্ট্র হিসেবে পৌছানোর লক্ষ্য অর্জনে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। রপ্তানিমুখী বেসরকারি ইকোনমিক জোন চালু হলে ঢাকা ও তার পাশ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ, সাভার, বছিলা, মোহাম্মদপুরসহ এই এলাকার লক্ষাধিক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভুমিকা রাখতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এছাড়া করোনা মহামারির কারনে বিশ্ব অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও বিদেশে চাকরিচ্যুত হয়ে দেশে চলে আসা লাখ লাখ বেকার প্রবাসী কর্মজীবী, ব্যবসায়ীর অর্থ বিনিয়োগে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর তীরে বেসরকারি ইকোনমিক জোন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে বলে দেশের অর্থনীতিবিদরাও মনে করছেন। এর মধ্যে সরকার দঃ কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে নদী বন্দর চালু করেছেন। ঢাকার অর্থনীতি আরও গতিশীল করতে ও ব্যবসায়ীদের সুবিধায় নদীর তীরে এই বেসরকারি ইকোনমিক জোন অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে বলে দেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক বন্দর ওয়াকিল নেওয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আরিশা ইকোনমিক জোনটি সদরঘাট নৌ বন্দরের অধীনে, তাই আমরা সদরঘাট নৌ বন্দরের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।

এ বিষয়ে সদরঘাট নৌ বন্দরের  যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ হাসনাতের মুঠো ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে আরিশা বেসরকারি ইকোনমিক জোন এর বিষয়ে কথা বলতে ক্ষুদে বার্তা তাকে প্রেরণ করেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।