image

দক্ষিণ যুবদলের ভাগ্যবরণ করতে যাচ্ছে উত্তর ছাত্রদল

image

দক্ষিণ জেলা যবুদলের কমিটি ঘোষণা ও পরবর্তীতে ২৪ঘন্টা যেতে না যেতেই কমিটি স্থগিতাদেশের নাটকীয়তার রেশ ধরে এবার চট্টগ্রাম উত্তর ছাত্রদলেও চলছে রশি টানাটানি ও অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের তীর ছুড়াছুড়ি। এ যেন দলে কমিটি কমিটি খেলায় সবাই শরীক হচ্ছেন সমানতালে, কেউ কারো চেয়ে কম নাহি যায়। ছাত্রদল, যুবদলসহ সকল অংগ সংগঠনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংসদসহ মুরব্বীসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও অর্থনৈতিক লেনদেন, নিজেদের পছন্দনীয় লোকজনকে নেতৃত্ব বসাতে গিয়ে উভয় সংগঠনে তৈরী হয়েছে বিরোধ। ফলে কমিটি গঠন ও তা বহাল রাখার ক্ষেত্রে কেউ কাউকে নিশ্চয়তাও দিতে নারাজ এখন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিদের্শে দলকে শক্তিশালী ও আন্দোলনমুখী করে গড়ে তোলার জন্য সারাদেশব্যাপী বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের কমিটি পূণর্গঠনে তৎপর দলীয় হাইকমান্ড। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চট্টগ্রাম বিভাগের উপজেলা, পৌরসভা, কলেজ কমিটিগুলোর ২১জন বিশিষ্ট আহŸায়ক কমিটি গঠন করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ৫জনের টিম ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ঐ টিম জেলা, মহানগর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করে ছাত্রদলের কমিটিতে যারা নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী তাদেরকে ফরমের মাধ্যমে আবেদন করতে নিদের্শ দেন। তাতে ছাত্রদলের কমিটিতে বিবাহিত, অছাত্র, মাদকাশক্ত, পেশাজীবিদের অন্তর্ভূক্তি না করার নির্দেশনাও দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। সেখানে ২০০৫ সালের পর থেকে এসএসসি পাশ  ও বর্তমানে অধ্যায়নরত ছাত্র, মেধাবী ও সাংগঠনিক গুণাবলী সম্পন্ন কর্মীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব বাছাই করতে বলা হয়। সেই সাথে স্থানীয় সাবেক এমপি, বিএনপি’র দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

কমিটি গঠনকল্পে যাচাই বাছাই তদারকির জন্য চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় সাংগঠনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাফি, য্গ্মু সম্পাদক মাহমুদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক নিলয়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির এবং জেলা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির দায়িত্বশীল সুপার ফাইভ। তাদের মতামতের ভিত্তিতে শীঘ্রই উত্তর জেলার আওতাধীন বিভিন্ন সাংগঠনিক এলাকায় কমিটি হবে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে কোন আলাপ আলোচনা বা পরামর্শ না করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভুমিকা রেখে মামলা, হামলা, গ্রেফতারের শিকার হওয়া মেধাবী, দক্ষ সংগঠকদের বাদ দিয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহিদুল আবছার জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনি নিজেদের মন মতো তাদের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটির তালিকা তৈরি করে টিম নেতাদেরকে ম্যানেজ করে কমিটি চুড়ান্ত করেছে। 

৭ সেপ্টেম্ব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবরে হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোলাইমান মঞ্জুসহ সাবেক ও বর্তমান বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকারী ১৫ নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষরিত অভিযোগে বলা হয়, ছাত্রদলর কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সুন্দর ও সুশৃংখলভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আওতাধীন হাটহাজারী উপজেলা, পৌরসভা ও কলেজ ছাত্রদল কমিটিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মীর হেলাল সাহেবের সরাসরি হস্তক্ষেপ ও গায়েবী নিদের্শনার মাধ্যমে এবং চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনির যোগসাজশে ছাত্রদল কমিটির চুড়ান্ত তালিকা কেন্দ্রীয় কার্য্যালয়ের দফতরে জমা করা হয়েছে। 

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এ তালিকা অনুযায়ী কমিটি হলে দলের মধ্যে কোন্দল ও হতাশার সৃষ্টি হবে। প্রৃকত কর্মীরা দল বিমূখ হয়ে পরবে। বিগত আন্দোলন, সংগ্রামে যারা নেতৃত্ব দিয়ে মামলা, হামলার শিকার হয়ে বারবার জেলে বন্দি হয়েছিল তাদের অবমূল্যায়ন করে সরাসরি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। 

একই ধরনের অভিযোগ করেছে মিরসরাই উপজেলা, পৌরসভা, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা। 

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দায়েরকৃত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মহসিন, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আহমেদ হাসনাত, জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধূরী, পৌর বিএনপির আহবায়ক মাহবুব ছাফা, পৌর যুবদলের আহŸায়ক আব্দুর শুক্কুর, যুগ্ম আহŸায়ক মুজিব, পারভেজ মোশারফ, ছাত্রদল নেতা  আব্দুল হালিম, আবু সাঈদ, শোয়াইব কাদের, মহসিন, ইসমাঈল। 

মিরসরাই উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দায়েরকৃত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আলমগীর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গাজী নিজাম উদ্দিন, পৌর বিএনপির আহবায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী।

লিখিত অভিযোগসমূহে বিএনপি নেতাদের অন্ধকারে রেখে কোন কোন মহলকে খুশি করার লক্ষে চুপিচুপি কমিটি গঠনের এ প্রক্রিয়া উত্তরের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে দাবী করা হয়। অর্থনৈতিক লেনদেন, নিজেদের বলয়ের লোকজনকে স্থান করে দেয়ার অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে তা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের কমিটির মতো পরিনতি হবে বলেও নেতারা আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

দক্ষিণ জেলা যুবদলের ঘোষিত কমিটি নিয়ে এত সমালোচনার পরও নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অপচেষ্টা মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় সুফল আসবেনা বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।