image

শিক্ষক দিবস ও আমার প্রিয় শিক্ষক

image

৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে সকল স্যারের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। আমি সৌভাগ্যবান যে আমার শিক্ষাজীবনে বেশ কিছু ভালো শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পেরেছি। সকল শিক্ষকের প্রতিই আমি শ্রদ্ধাশীল। মাত্র একজন শিক্ষককে বাছাই করা আসলেই কঠিন। তবে আমার জীবনে যে সকল শিক্ষকের আদর্শ ও শিক্ষা খুব গভীরভাবে ছাপ ফেলেছে তাদের মাঝে অন্যতম হলেন বাবু অমুন কুমার সরকার।

বাবু অমুন কুমার সরকার বখতপুর দায়রাবাড়ী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের গনিত বিষয়ের শিক্ষক। গনিতের শিক্ষকের কথা ভাবলেই অনেকের মাথায় যে রাগী ও বেত হাতে দাঁড়ানো একজন শিক্ষকের চিত্রটি আসে অমুন কিন্তু মোটেও এমন ছিলেন না। উনি ছিলেন ছাত্রদের প্রতি সর্বদা আন্তরিক এবং সবাইকে সাহায্য করতে উৎসাহী। গণিতের শিক্ষক হিসাবে উনি আসলেই অতুলনীয়। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন সৎ চরিত্রের সহজ সরল জীবনে বিশ্বাসী মানুষ যাকে দেখে ছাত্ররা নীতিবান হতে উৎসাহী হত।

স্যার তার ছাত্রদেরকে খুব সহজভাবে বোঝাতে পারতেন, যা একজন আদর্শ শিক্ষকের অন্যতম গুণাবলি। গণিতের মতো কঠিন বিষয়, যা অনেকের কাছেই আতঙ্কের, এমন একটি বিষয়ও স্যার আমাদেরকে এতো উৎসাহ এবং দক্ষতা নিয়ে পড়িয়েছেন যে তার সকল ছাত্রই তার কাছে চিরমুগ্ধ থাকবে। স্যারের সুদীর্ঘ সময়ের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছিল। আমার মনে আছে যে, তাঁর কাছে পড়ার সময় স্যার বলতেন যে, এখন এত নাম্বার পেজ খুলে এত নাম্বার অঙ্কটা করে দেখাও তো! একবার আমার এক সহপাঠী স্যারকে প্রশ্ন করেছিল যে স্যার আপনি কোন পেজে কোন অংক আছে তা মুখস্ত কিভাবে করলেন? জবাবে স্যার হেসে বলেছিলেন, “আরে, আমি অংক মুখস্ত করি নাই। তবে দীর্ঘ ২৫ বছর একই বই পড়াতে থাকলে এর কোথায় কি আছে তা এমনিতেই মনে থাকে!”

স্যার কখনই তার কোন ছাত্রকে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে চাপ দেন নাই, আর দিবেনই বা কেন উনি তো টাকার জন্য পড়াতেন না।প্রতিদিনই তিনি প্রতিনিয়ত প্রাক্তন ছাত্রদের খোঁজ খবর নিয়মিত নেন। উনি এমন এক শিক্ষক জিনি সকলের মন জয় করে নিতে পেরেছিলেন।

এবার আসি স্যারের জিবন বৃত্তান্ত নিয়ে......
বাবু অমুন কুমার সরকার ফটিকছড়ির রোসাংগীরীর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ৩১ অক্টোবর ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এস এস সি ১৯৮০ সালে রোসাংগীরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক, ১৯৮২ সালে নাজিরহাট কলেজ থেকে আইএসসি , ১৯৮৪ সালে নাজিরহাট কলেজ থেকে বিএসসি,১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম বিএড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিএড পাস করেন। তিনি চাকরী জীবনে পদার্পণ করেন। ৭ জানুয়ারী ১৯৮৫ সালে মাইজভান্ডার আহমাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে! এরপর ৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৭ সালে বখতপুর দায়রাবাড়ী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বখতপুর দায়রাবাড়ী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এখনো তিনি সৎ , নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

আজকে শিক্ষক দিবসে স্যারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

লেখক : প্রাক্তন ছাত্র, বখতপুর দায়রাবাড়ী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়।