image

চুপকথা’র ক্ষমতা…

image

"যে তোমার নীরবতার ভাষা বুঝে না, সে তোমার চিৎকারের ভাষাও বুঝবে না।" বাক্যটি বেশ সত্য, সজীব এবং প্রমাণিত। এজন্যই তো ‘বিপিনের সংসার ‘-এ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখে গেছেন-‘তারপর দুজনেই চুপচাপ। নীরবতার ভাষা আরও গভীর হয়, নীরবতার বাণী অনেক কথা বলে’। হিন্দিতে একটা গান আছে- "খামসিয়া এক আওয়াজ হতি তুম সুননে তো আও কাভি",  বাংলায় যার অর্থ করলে ‘নীরবতাও এক ভাষা, তুমি কখনো শুনতে আসিও’। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এর কথায় মান্না দে সুর বসিয়ে বলেছেন ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে,আমার বলার কিছু ছিল না’। আর রবীন্দ্রনাথ তো বরাবরের মতো সরস ও সহজভাবে বলেছেন, ‘অনেক কথা যাও যে ব’লে, কোনো কথা না বলি’। আসলে এই চুপ থাকাটাই অনেক ‘চুপকথা’ বলে যায়।

পৃথিবীতে কোন ভাষাটি  সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়? উত্তরে আসলে বাংলা, ইংরেজি নয়, স্প্যানিশ-ফরাসি-হিন্দী নয়, বরং নীরবতা।  জানা যায়, প্রাচীন গ্রিসে বালক-বালিকাদের নীরবতার ভাষা ব্যবহারের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রতিদিনকার জীবনযাপনে নীরবতার ভূমিকা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হতো তাদের। কারণ, এই নীরবতা কখনো কৌশল, কখনো অভিমান, কখনো প্রজ্ঞা, কখনো প্রতিবাদের অর্থ বহন করতে পারে। তখন বালক-বালিকাদের বিশেষভাবে শিক্ষা দেওয়া হতো, কী করে নীরব থেকে অন্যের কথা শুনতে হয়। তাদের বলা হতো সারা দিন তুমি যত কথা বলবে, তার অন্তত দ্বিগুণ অন্যের কথা শুনবে। সক্রেটিসের শিক্ষার মূল পদ্ধতিটিই ছিল ছাত্রকে টুকরো কোনো প্রশ্ন করে করে মূলত তাকে বলার সুযোগ করে দেওয়া এবং তার কথা শোনা। প্রাচীন গ্রিস জগৎসংসারের কথা শুনেছে এবং তা প্রয়োগ করেছে নিজেদের সমাজে। এভাবে সভ্যতার পীঠস্থানে পরিণত হয়েছিল তারা। প্রাচীন ভারতীয় সাধুরাও মৌনব্রত পালন করতেন। দিনের পর দিন নীরব থেকে তাঁরা খোলা রাখতেন কেবল

লেখক : ফজলুর রহমান, প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক এবং সহকারী রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।