image

পরিকল্পিত পরিকল্পনায় আমূল বদলে যাওয়ার হাতছানি পর্যটন নগরী টেকনাফ’র

image

বৃহত্তম বৈচিত্রময় বনজঙ্গল ও আঁকাবাঁকা নদনদীর ঢেউয়ের কোলাহলে বিস্তীর্ণ উঁচু নিচু পাহাড় আর আকর্ষনীয় একটি অঞ্চলের নাম টেকনাফ। দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস রয়েছে এখানে। এসব মানুষের জীবন সংগ্রাম কৃষ্টি-সংস্কৃতি বৈচিত্র পাহাড়ের ডানায়, নাফনদী ও বঙ্গোপসাগর এবং মিয়ানমার সীমানা ঘেষা হওয়ায় যুক্ত করেছে নতুন পর্যটন সম্ভাবনা। অসংখ্য  পেশার শ্রমজীবি মানুষের সমন্বয়ে এক জানা-অজানা রহস্য রয়েছে টেকনাফে। এখানে রয়েছে আকাশ-পাহাড় ও সাগরের সাথে অন্যতম মিতালী। এসব এলাকায় হোয়াইক্যং পাহাড়ে অবস্থিত কুদুমগুহা, নোয়াখালিয়া পাড়ার ঝর্ণা, পৌরসভার নাইট্যং পাড়ার ঝর্ণা, পৌরসভার চৌধুরী পাড়ায় নির্মিত ৫’শ ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি, শাহপরীর দ্বীপের জেটি, দমদমিয়া জালিয়ার দ্বীপ, ন্যাচার পার্ক, লেদার সোলার ষ্টেশন ও টেকনাফ মডেল থানা প্রাঙ্গনের ঐতিহাসিক মাথিন কূপ, খুরের মুখ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। 

টেকনাফের বিপুল সম্ভাবনাময় এসব পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে খুরের মুখ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও দমদমিয়া জইল্যার দ্বীপ এর পাশাপাশি অন্যান্য পর্যটক স্পট গুলোও সরকারের মেগা প্রকল্পের আওতায় এসেছে। শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে, বাংলাদেশের দক্ষিন দ্ধার নামে পরিচিত পর্যটন উপ শহর টেকনাফ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবে। হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। টেকনাফ হয়ে উঠবে, বিশ্বের মধ্যে পরিচিত পর্যটন স্থান। প্রতি বছর দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক টেকনাফে ভ্রমনে আসবে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর্যটন খাতকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। দেশের অন্যতম পর্যটন রাজধানী নামে পরিচিত কক্সবাজার জেলাকে পুর্নাঙ্গ পর্যটন রাজধানী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মহেষখালী উপজেলা মাতার বাড়ী, সোনাদিয়া, উখিয়া ও সর্বশেষ টেকনাফের পর্যটন খাতকে চিহ্নিত করে মেগা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে এসেছেন। টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের খুরেরমুখ ও হ্নীলা ইউনিযনের দমদমিয়া জইল্যারদ্বীপকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষনা করা হয়েছে। এর জন্য দু’হাজার কোটি টাকা চলতি অর্থ বছরে সরকার বরাদ্ধ প্রদান করেছেন। চলতি অর্থবছরে এর অবকাঠামো গত নির্মান কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

দমদমিয়া ১৬’শ একর, খুরের মুখ ১ হাজার ৪৫ একর জমিতে প্রকল্প দু’টো প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে শিল্প কারখানা, বিশ্ব মানের হোটেল, মোটেল পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, হেলিপ্যাড, আধুনিক মানের পর্যটন সেতু কেবল কার যাতায়াত সড়ক, স্প্রীট বোটসহ নানা ধরনের পর্যটক সুবিধা ও ভ্রমণ। এছাড়া সেন্টমার্টিনে গড়ে তোলা হবে আধুনিক মানের হোটেল মোটেল, পর্যটকদের যাতায়াতের জাহাজ ও সামুদ্রীক, প্রাকৃতিক যাদুঘর। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সেন্টমার্টিন ছাড়াও কক্সবাজার জেলার সদর থেকে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত দেশি বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য একশত কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সড়ক বর্তমানে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত লাভ করেছে। এ সড়ক দিয়ে যাতাযাতের সময়, সমুদ্রের নীল সাগরের ঢেউ, রাশি রাশি জল রাশি, প্রবাল পাথর, স্বর্ণ খচিত সৈকতের বালুকনা, লাল কাঁকড়ার ঝাঁক ইত্যাদি ভ্রমণকৃত পর্যটকদেরকে মুগ্ধ করে।

আরও রয়েছে উখিয়া উপজেলার ঘুমধুম হয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য সীমান্ত সড়ক (বর্তমানে নির্মানাধীন) এসড়ক নির্মিত হলে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও নাফ নদীর রাশি রাশি নীল পানির ঢেউ উপভোগ করা অতি সহজ হবে।

টেকনাফে পর্যটকদের রয়েছে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমা পাড়া, কুদুম গুহা, রয়েছে হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া বনবিভাগের ন্যাচার পার্ক, বাহার ছড়া, ইউনিযনের শীলখালি বন রেঞ্জের আওতাধীন, জাহাঁজপুরাই গর্জন বাগান। সেখানে রয়েছে বিশাল আকৃতির প্রাচীনতম গর্জন গাছ। যে গাছ প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে আকাশকে উঁকি মারে।

টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ায় নাফ নদীতে নির্মিত হয়েছে আরো একটি আকর্ষনীয় ৫’শ ৫০ মিটার দৈর্ঘ পর্যটক ও বাংলাদেশ মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি। দেশি বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য যেমনি রয়েছে অপূর্ব সুযোগ, তেমনি রয়েছে থাকারও খাবারের আধুনিক মানের হোটেল মোটেল ও রেঁস্তোরা। এর পাশাপাশি রয়েছে নিরাপত্তার ব্যবস্থা। সৈকত পুলিশের পাশাপাশি, থানার পুলিশসহ বিজিবি কোস্টগার্ড র‌্যাব সদস্যরা। এক কথায় বলতে গেলে টেকনাফের মনোমুগ্ধকর পর্যটক স্পট, হাতছানি দিয়ে ডাকছে দেশি বিদেশী পর্যটকদের। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক উদ্যোক্তাগণ উন্নত মানের হোটেল মোটেল শিশু পার্ক, ন্যাচার পার্ক ইত্যাদি গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আশা করা যাচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার এর সর্বদক্ষিন পর্যটন উপ শহর টেকনাফ দেশি বিদেশি পর্যটক খাতে খ্যাতি অর্জন করবে এবং সর্বোচ্চ রাজস্ব পর্যটক খাত থেকে অজর্ন করবে বলে এলাকার সচেতনমহল মনে  করেন।