image

আলোচনা-সমালোচনায় ঢাকাইয়া ব্রান্ড হাজী সেলিম 

image

আলোচনা সমালোচনাসহ নানা কারণেই তিনি মিডিয়ার বিষয় হয়ে উঠেন। প্রায় তিন দশক ধরেই পুরনো ঢাকার আদিবাসিন্দা হাজী মোঃ সেলিম সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে উঠেন। এ যেন একটি ব্রান্ড হাজী মোঃ সেলিম। ঢাকাইয়াদের এই নেতা কেন বার বার আলোচনায়? তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দখলবাজ, সন্ত্রাসী, তার রয়েছে ক্যাডার বাহিনী। আসলেই কি তাই? যদি দখলবাজ, চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসী হয়ে থাকেন তবে কেন তিনি বার বার নিবার্চিত হন?

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া হাজী সেলিম। ব্যবসায়ীক নানা কারিশমায় সোয়ারীঘাটের দেবীদাসঘাটের ছোট কিশোর সেলিম বাবা চান সর্দারের সঙ্গে ছোট পান দোকান করলেও একদিন বড় ব্যবসায়ী  হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। যিনি যেভাবে অর্থ উপার্জন করতে চান মহান আল্লাহ তাকে সেভাবেই সুযোগ দেন। সত্তুর দশকের সেই কিশোর সেলিম নানা কারিশমায় আস্তে আস্তে নিজের ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে হয়ে উঠেন ঘাট ব্যবসায়ী। সোয়ারীঘাট-বাদামতলি এলাকার ঘাটগুলো ইজারা নিয়ে শুরু করেন ঘাট ব্যবসা। তৎকালে ফল, সিমেন্টসহ নানা পণ্য এই ঘাটগুলো দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতো। আমদানি- রপ্তানির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মদিনা ট্রেডিং প্রতিষ্ঠা করে সিমেন্ট ও ফল আমদানি শুরু করেন। ঢাকার বহুল প্রচারিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকাসহ দেশের শীর্ষ সকল কাগজের লেটার হেডের পাশে থাকতো প্যানেল বিজ্ঞাপন মদিনা ট্রেডিং। ঘাট ও কমিশন ব্যবসায় প্রতিদিন লাখ লাখ কাচা টাকা আয় যেন সেলিমের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়।এভাবেই আশির দশকে পুরান ঢাকার বাদামতলি, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, সোয়ারীঘাট থেকে পাগলা ঘাট পর্যন্ত মোঃ সেলিম হয়ে উঠেন একজন সফল আমদানিকারক ও ঘাট ব্যবসায়ী। অর্থসম্পদের পাশাপাশি হজ্ব করার কারণে পুরান ঢাকায় হাজী সেলিম নামেই তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন। চাল, সিমেন্ট আর ফলপট্টি মানেই হাজী সেলিম। নব্বই দশকের শুরুতেই হাজী মোঃ সেলিম ব্যবসায়ী থেকে জনসেবা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া শুরু করেন। পাড়া-মহল্লার ক্লাবগুলো হাজী মোঃ সেলিমকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি বা ক্লাবগুলোর পৃষ্ঠপোষক করতে শুরু করেন।

দেবীদাস ঘাটের রহমতগন্জের সূর্যোদয় বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত হন। সমাজ কল্যাণ মূলক সংগঠন সূর্যোদয় বহুমুখি সমাজ কল্যাণ সমবায় সমিতি তার জীবনের প্রথম আর্থসামাজিক ক্লাব। ধীরে ধীরে হাজী সেলিম একজন দানবীর ব্যবসায়ী হিসেবে পুরান ঢাকাবাসীর কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন। অর্থ সংকটে দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখায়, দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বিয়ে দেয়ায় অর্থ সহায়তা, মসজিদ-মাদ্রাসায় অর্থায়নে তিনি এগিয়ে আসেন।

হাজী সেলিমের রাজনৈতিক উত্থানঃ নব্বইয়ে এরশাদ সরকারের পতনের পর তৎকালীন ঢাকা-৮ এর সংসদীয় নির্বাচনী (লালবাগ-হাজারীবাগ- কামরাঙ্গীরচর) এলাকায় লেঃ জেনারেল মীর শওকত আলী বীর উত্তম বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচন করাকালীন সময়ে স্হানীয় তরুণরা ব্যবসায়ী হাজী মোঃ সেলিমকে যুক্ত করেন জেনারেল শওকতের নির্বাচনী প্রচারনায়।ব্যবসায়ী হিসেবে থানা পুলিশের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা, পোস্টার এবং অর্থ সহায়তায় কারণেই মূলত হাজী মোঃ সেলিমকে যুক্ত করা হয়। নির্বাচনে জেনারেল শওকত জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে পরাজিত করে জয়ী হন। হাজী মোঃ সেলিম একজন ব্যবসায়ী হলেও তারই পাড়ার একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী শিল্পপতি হাজী মোঃ সেলিমের এই উত্থানকে ভাল চোখে দেখতেন না। বিএনপি ৯১ এর সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করায় হাজী মোঃ সেলিমের গায়ে ক্ষমতার হাওয়া লাগে।

ব্যবসায়ী থেকে জনপ্রতিনিধিত্বের স্বপ্ন দেখতে থাকেন হাজী মোঃ সেলিম। সেনা অফিসার জেনারেল শওকত তা সহজেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই দুই বছরের মধ্যেই জেনারেল শওকত হাজী সেলিমকে সাইজ করা শুরু করেন। তিনি হাজী সেলিমকে বিএনপির কোন পদেই স্হান দেননি। এমনকি ৯৪ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হাজী সেলিম ওয়ার্ড কমিশনার পদে নির্বাচন করতে চাইলেও তার প্রতি বিএনপি ও সংসদ সদস্য জেনারেল শওকত সমর্থন দেননি। ফলে হাজী সেলিম স্বতন্ত্রভাবে তৎকালীন৬৫-৬৬ দুটি ওয়ার্ডে নির্বাচন করে দুটিতেই জয়ী হওয়ার রেকর্ড গড়েন।

ঢাকার ইতিহাসে দুটি ওয়ার্ডে একসঙ্গে নির্বাচন করে জয়ী হওয়া তিনি প্রথম ব্যক্তি। জনপ্রতিনিধিত্বে হাজী মোঃ সেলিমের অভিষেক এভাবেই। তার স্বপ্ন আরো বড় হতে থাকে। এবার সংসদের পালা। জেনারেল শওকত তা বুঝতে পেরেই তাকে বিএনপির রাজনীতিতে প্রবেশ করতে দেননি। নবাবগন্জে সাত খুনের কারনে ৯৬ এর সংসদ নির্বাচনে জেনারেল শওকতকে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে মনোনয়ন দেয়া হলেও হাজী সেলিমকে বিএনপির পদে না থাকায় দলীয় মনোনয়ন দিতে দেননি জেনারেল শওকত ও নাসির উদ্দীন পিন্টু। জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে ফিরিয়ে এনে সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক মেয়র ঢাকার সন্তান ব্যারিস্টার আবুল হাসনাতকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। হাজী সেলিম মেয়র হানিফের হাত ধরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে। ঢাকার ছেলে হিসেবে আরেক ঢাকাই ব্যারিস্টার হাসনাতকে পরাজিত করে এই সিট নেত্রীকে উপহার দেয়ার গ্যারান্টি দিয়ে আওয়ামীলীগের নৌকার যাত্রী হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতির যাত্রা শুরু করেন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে হাজী সেলিম তার জনপ্রিয়তার প্রমানও দেন নেত্রীকে। সেই থেকেই তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গেই আছেন। এরপর পুরান ঢাকায় বিএনপির মিছিল মিটিং হলেই হাজী সেলিম স্বশরীরে দলবল নিয়ে বিএনপির মিছিল মিটিং তছনছ করে দিতেন। বিভিন্ন মিছিলে ব্যানারের সামনে একা দাড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়ে সবার আলোচনায় চলে আসেন। মূলত ৯৬ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই বাদামতলীর ঘাট ব্যবসায়ী হয়ে উঠেন পুরান ঢাকার ঢাকাইয়া রাজনৈতিক নেতা। একাধারে গড়ে তোলেন একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান। পুরান ঢাকার দেবীদাস ঘাট এর কিশোর সেলিম হয়ে উঠেন রাজনৈতিক শিল্পপতি, ঢাকাইয়াদের জনপ্রিয় নেতা হাজী মোঃ সেলিম।

নৌকার যাত্রী হাজী সেলিমের ওপর জেল জুলুৃম হামলা-মামলা : হাজী সেলিম ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নাসির উদ্দীন পিন্টুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০৩০ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। তার এই পরাজয়ের মুল কারণ হিসেবে তার অনুসারীরা মনে করেন দলীয় গ্রুপিং। আওয়ামীলীগের একটি গ্রুপ বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে তাকে ফেল করিয়েছিলো। তার এই পরাজয়ই যেন জীবন ও ব্যবসার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে হাজী সেলিমের নামে ১৫৯টি মামলা হয়। তিনি দেশে না থেকেও হত্যা মামলার আসামী হন। একাধিকবার জেলেও যান। তার ব্যবসা বাণিজ্যে অবরোধ তৈরী করা হয়। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট ফ্রীজ করা হয়। একাধিকবার তাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়।

২০০১ থকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাজী সেলিমের অনুসারীরা মামলা খেলেও আওয়ামীলীগের আরেকটি অংশের নেতাদের কারো নামে কোন তেমন মামলা হয়নি। এরপর ইয়াজউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ হাজী সেলিম ও তার কর্মীদের দখলেই ছিল। এরপর দেশে জরুরী আইন জারী হলে হাজী সেলিম চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যান। তার অনুপস্থিতিতে কথিত ক্যাঙ্গারু কোর্টে হাজী সেলিম ও তার স্ত্রীকে সাজা দিয়ে নির্বাচনের অযোগ্য করা হয়, যাতে তিনি বা তার স্ত্রীও নির্বাচন করতে না পারেন। অভিযোগ আছে, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৎকালীন পিপিকে ঘুষ দিয়ে মামলাটি একতরফা দ্রুত নিষ্পত্তি করিয়ে হাজী সেলিমকে সাজা দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচনে অযোগ্য করেছিলেন। তাই তিনি ২০০৯ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তবে তার দলীয় নৌকার প্রার্থী ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের পক্ষে তার লোকজনকে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ডাঃ জালাল পৌঁনে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন।

২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র নির্বাচন করে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে পরাজিত করে হাজী সেলিম তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেন। স্বতন্ত্র সাংসদ হলেও  ২০১৮ সালের নির্বাচনে অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় তিন মাস নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালান। যার ফলে নেত্রী তাকেই দল থেকে আবারও মনোনয়ন দেন। তিনি ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টুকে পরাজিত করে ৩য়  বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর হাজী মোঃ সেলিম অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এক সময় মহানগর আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে হাজী সেলিম ঢাকাইয়া নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি সাঈদ খোকনের সঙ্গে মেয়র প্রার্থী হওয়ার লবিং করলে শীর্ষ নেতারা তাকে মহানগরের সম্মানজনক পদ দেয়ার আশ্বাস দিলে তিনি মেয়র প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ান।

হাজী সেলিম শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও দলের প্রয়োজনে তিনি সব সময় মাঠে থেকেছেন। নগর আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জনবলের দূর্গ হিসেবে হাজী সেলিমের খ্যাতি রয়েছে। দলের বিভিন্ন সভা সমাবেশে হাজী সেলিমের চেয়ে বেশী লোক কেউ নিয়ে আসতে পারেন না এমনটাই দাবি তার অনুসারীদের।

জাতীয় সংসদে হাজী সেলিম ঢাকাইয়া ভাষায় বক্তব্য রেখে সবার নজরে আসেন। তাই ঢাকাইয়া এই নেতার নানা কর্মকাণ্ডে অনেক সময় সরকারকেও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ডে সদ্য বহিষ্কার হওয়া মেঝো ছেলে স্বতন্ত্র ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের কাছে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত আটক হওয়া নিয়ে আবারও আলোচনায় হাজী সেলিম। ছেলে ইরফান কান্ডে হাজী সেলিমের রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে পুরান ঢাকায় আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয়। পুরান ঢাকাবাসীরা মনে করেন, হাজী সেলিম ঢাকার রাজনীতির কারিশম্যাটিক নেতা। যেকোন পরিস্থিতি তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম। যত ঝড়ঝাপটাই আসুক, তিনি তা সামাল দিতে সক্ষম। ঢাকার রাজনীতিতে তার প্রভাবে কোন ভাটা পড়বেনা। সভা সমাবেশের আদম রাশি খ্যাত হাজী সেলিমকে মাইনাস করে ঢাকায় বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলা করা আওয়ামীলীগের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আপাতত তার ছেলে ক্ষমতার রাজনীতির বলি হলেও হাজী সেলিম সময় মতো ঠিক ঘুরে দাঁড়াবেন, এমনটাই মনে করেন ঢাকাবাসী।

এদিকে ছেলের আটকের পর থেকে সংবাদমাধ্যমে তার দখলদারিত্বসহ নানা বিষয় উঠে এলেও তার অনুসারীরা মনে করেন এগুলো পুরনো বিষয়। গত তিন দশক ধরেই তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে নানা সময়ে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গত ২৫ বছরে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা ছাড়া অন্য কোন অভিযোগ প্রমানিত হয়নি। দখলদারিত্ব প্রসঙ্গে তার অনুসারীরা মনে করেন, তিনি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেন বলেই অন্যায়ভাবে দখলকারীরা তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়। ছেলের উগ্রতার জন্য অনেকেই হাজী সেলিমের শারীরিক অসুস্থতার কারণকেই চিহ্নিত করছেন। এছাড়া পশ্চিমা কালচারে পড়াশোনা করে দেশে এসেই বাবা ও শ্বশুরের ক্ষমতা এবং ঢাকার সামাজিকতায় হাজী সেলিমের মতো গুণাবলির অভাব ও ভুল বন্ধু নির্বাচনের কারণেই ইরফানকে নিয়ে  আজ তাকে এই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।

ছেলে কান্ডে সক্রীয় হাজী বিরোধী জোট, চলছে নানামুখি তৎপরতা : ছেলে ইরফান সেলিম কান্ডের সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাজী সেলিম বিরোধী গ্রুপ এখন সক্রিয়। ঢাকা শহরের বাহিরের এক সংসদ সদস্য এবং হাজী সেলিমের হাতে শারীরিকভাবে হেনস্তা হয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতা মিলে যার যার অবস্থানে থেকেই হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে কাজ করছেন, এমন অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ তাদের অপমানের প্রতিশোধ আবার কেউ আগামীতে সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। ৩০ নং ওয়ার্ডের এক সাবেক কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের সকল তথ্য বিভিন্ন সংস্থায় সরবরাহ করেছেন এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।

যারা ডাঃজালালকে হারাতে কলকাঠি নেড়েছেন তারাই সক্রিয় : ২০১৪ সালে ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন একাধারে সংসদ সদস্য, সরকারে তার দল, নৌকা নিয়ে খোদ নেত্রী ডাঃ জালালের পক্ষে কেরানীগঞ্জের পানগাও বন্দর উদ্বোধন করে ফেরার পথে বাবুবাজার, নয়াবাজার ও বংশালের বিভিন্ন পথ সভায় নৌকাকে জয়ী করার আহ্বান জানান। কিন্তু ক্ষমতার কোন প্রভাব ছাড়াই নির্বাচনী কারিশমায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও হাজী সেলিম জয়ী হয়েছিলেন। ওই সময় ডাঃ জালালকে ফেল করার নেপথ্যে থানা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ও কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের খেল ছিলো বলে গুঞ্জন আছে। কারণ ডাঃ জালালকে পরাজিত করার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বে তার অযোগ্যতার বিষয়টি প্রমাণ করে আগামীতে নিজেদের পথ সুগম করতেই এই খেলা ছিলো বলে অনেক রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন। নিজ দলের নৌকা প্রার্থীদের ফেল করানোর যে ষড়যন্ত্র ২০০১ থেকে শুরু হয়েছিলো তার ধারাবাহিকতায় ওই চক্রটিই এখন আবারও হাজী সেলিমকে  সাইজ করার ষড়যন্ত্র করছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। পুরান ঢাকায় তিন তিন বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাজী মোঃ সেলিমের শারীরিক অসুস্থতা এবং ছেলে ইরফান সেলিমের ঘটনা কাজে লাগিয়ে হাজী সেলিম বিরোধীরা কতটুকু সফল হন এটাই এখন দেখার বিষয়।

কিছু সম্পদ বেহাত হওয়ার আশংকা : আইনী প্রক্রিয়ায় হেরে যাওয়ার পরও হাজী সেলিম দখলে রেখেছেন এমন কিছু সরকারি সম্পদ উদ্ধারের আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে কামালবাগ বেড়ীবাঁধ এলাকায় ঢাকা বধিরদের স্কুলটির জায়গাটিও রয়েছে। যদিও হাজী সেলিম এই জায়গা ক্রয়সূত্রে মালিকানা তার বলে দাবি করে আসছেন। বিএনপি- জামায়াতের শাসনামলে দাবি করা হাজী সেলিমের এই জায়গা খাস বলে ঢাকা জেলা প্রশাসক বধির স্কুলের নামে বরাদ্দ দেয় নামমাত্র মূল্যে। এরপর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সেনা সমর্থিত সরকারের আমল পর্যন্ত  বধির স্কুলের দখলেই ছিলো। বিএনপি আমলে তৎকালীন সাংসদ নাসির উদ্দীন পিন্টু তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হাজী সেলিমের জায়গা বলেই ডিসি অফিসে প্রভাব বিস্তার করে বধির স্কুলের নামে দিয়ে দেন, এমন অভিযোগ আছে হাজী সেলিম অনুসারীদের। এছাড়া হাজী সেলিমের কোন জায়গার কাগজপত্র ত্রুটি থাকলে সেগুলো সরকারি হলে তা চিহ্নিত করা হতে পারে এমনটাই আশংকা করছেন অনেকে। যতদুর জানা গেছে, তিনি কাগজপত্রে মজবুত না থাকলে জায়গা ক্রয় করেন না। তাই প্রভাবশালী এই নেতার বিরুদ্ধে ব্যক্তিমালিকানা কারো জায়গা দখলের অভিযোগ বাস্তবতায় খুজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।