নির্বাচন কমিশন থেকে পৌর নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পরপরই টেকনাফ পৌরসভায় আগাম নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নড়েচড়ে সময় কাটাচ্ছেন সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।তৎপর হয়ে ওঠেছেন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরাও। তাদেরকে বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামি আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মাঠে নেমেছেন। পথে ঘাটে, বাড়ি বাড়ি কুশল বিনিময়ও করছেন তারা। চায়ের দোকানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে আলোচনা-সমলোচলার ঝড়। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কারোনাকালে স্থানীয় লোকজনের সেবার মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এছাড়াও নানা সমীকরণে ভোটের মাঠে প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকে এমন ভোটারদের বাড়িতে স্ব-শরীরে বা সমর্থকদের মাধ্যমে গিয়ে তাদের মন কাড়ার চেষ্টা করছেন। এখানেই থেমে থাকছেন না সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তাদের তৎপরতা দেখে মনে হয় আর ক’দিন পরেই যেন ভোট। নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ সরগরম বাড়ি,পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার ও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো। পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাধারণ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন উন্নয়নমুখী নানা আশ্বাস ও উন্নয়নের আশার বাণী। সাথে দলীয় সমর্থন পাওয়ার আশায় উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতাদের সমর্থন আদায়ের জন্য জোর লবিং শুরু করেছে দলীয় মনোয়ন প্রত্যাশী সমর্থকরা। মাঠে বেশিসংখ্যক প্রার্থী তৎপর হলেও ভোটযুদ্ধে এই সংখ্যা অনেকটা কমে যাবে। বিশেষ করে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধে নামার আগে দলীয় মনোনয়ন লাভের লড়াইয়ে নামতে হবে।
পৌরসভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন। তাদের অনেকেই দলীয় মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন থেকে সরে যাবেন। এর মধ্যে কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন। গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জয়যুক্ত হন বর্তমান মেয়র হাজী মোঃ ইসলাম। গত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে কয়েকজন নামে মাত্র ভোট যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের কাউকে মাঠে দেখা যায়নি নৌকার প্রার্থী ছাড়া।
সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে এখনো যাদের নাম লোক মুখে আলোচনা হচ্ছে তারা হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী নুরুল বশর, সাবেক পৌর প্রশাসক এসমএম ফারুক বাবুল, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি সাংবাদিক জাবেদ ইকবাল চৌধূরী, এমপি বদির ছোট ভাই, বর্তমান প্যানেল মেয়র-১ মাওঃ মুজিবুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর, বিএনপি নেতা হাসান আহমদ, জামায়াত নেতা (সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র) মোঃ ইসমাইল, সাবেক এমপি মৃত আবদুল গণির পুত্র সাইফ উদ্দিন খালেদ, পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুর রজ্জাক ও জাতীয় পার্টির উপজেলা সাধারন সম্পাদক হেলাল উদ্দিন মুন্সিসহ অনেকে ইতি মধ্যে অনানুষ্ঠিক নির্বাচনী প্রচারণা করে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন বিয়ে শাদি, খেলাধুলাসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে শতাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
এদিকে সর্বত্র সাধারন ভোটারদের মধ্যে আসন্ন পৌর নির্বাচন নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। নির্বাচনের কথা শুনে সাধারণ ভোটাররা বিভিন্ন চায়ের স্টলে দিচ্ছেন নির্বাচনী আড্ডা। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন, তাই দলীয় মেয়র পদ প্রার্থীকে প্রাধান্য দেবেন ভোটাররা। তবু টেকনাফ পৌরসভার সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন কলা-কৌশলে পৌর বাসীর সামনে নিজেদের উপস্থাপন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন খেলাদোলা, সামাজিক অনুষ্ঠানকে বেছে নেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৫ মে টেকনাফ পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। শপথ গ্রহণ হয় জুন মাসে। শপথ নেয়ার পর জুলাই মাসে তাদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই হিসাবে আগামী বছর টেকনাফ পৌরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। পৌরসভা আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গত ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার কমিশন ভবনে এক বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ২৫০টির বেশি পৌরসভায় শুরু হবে ভোটগ্রহণ। প্রথম ধাপে কয়েকটি পৌরসভায ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি।
Developed By Muktodhara Technology Limited