image

দোহাজারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা : অজুহাত জনবল ও শয্যা সংকট

image

চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভাসহ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য একমাত্র ভরসাস্থল দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। ১৯৬৫ সালে ১০ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চাহিদার উপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে ১৯৯০ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হয় বলে জানা গেছে। 

দোহাজারী পৌরসভার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন ধোপাছড়ি, হাশিমপুর, সাতবাড়িয়া, পুরানগড়, কালিয়াইশ, আমিলাইষ ও খাগরিয়ার মধ্যবর্তীস্থানে হওয়ায় দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। এসব ইউনিয়ন থেকে আসা রোগীদের চাপ সামলাতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের হিমশিম পোহাতে হয়। হাসপাতালটি চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মহাসড়কে কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে ট্রমা সেন্টার না থাকায় আহত রোগীদের ঠাঁই হয় দোহাজারী হাসপাতালে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম প্রায় ভেঙে পড়েছে। তার ওপর রয়েছে শয্যা সংকট। এ সমস্যার কারণে রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে ৩শ' জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। নতুন ও পুরোনো মিলে প্রতিদিন ৩১ শয্যার বিপরীতে ৭০/৮০ জন রোগী চিকিৎসা নেন।

সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। পুরুষ ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় শিশু ও নারীসহ অনেককে মেঝেতে শয্যা পেতে থাকতে হচ্ছে।

এ ছাড়া চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংকটে এখানে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দ্বারা রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। হাসপাতালটিতে ডেন্টাল সার্জনসহ বর্তমানে ৭ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও দু'জন মেডিকেল অফিসারের করোনা শনাক্ত হওয়ায় তাঁরা বাসায় আইসোলনে রয়েছেন। আরেকজন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন ছুটিতে। ফলে বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবু তৈয়্যব ও দু'জন মেডিকেল অফিসার। এছাড়া ১৩ জন নার্সের স্থলে কর্মরত আছেন ৭ জন। ৪ জনের স্থলে ওয়ার্ড বয় রয়েছেন ২ জন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন ২ জন। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ২জন ওয়ার্ড বয় এবং ২জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। আরও ২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দরকার বলে জানান চিকিৎসকেরা। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), ফার্মাসিস্ট, স্টোর কিপার ও কম্পিউটার অপারটরের পদ থাকলেও তা শূণ্যই রয়ে গেছে।  ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চালানো হচ্ছে কর্মকাণ্ড। হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি পুরাতন হওয়ায় তেমন ব্যবহার হয়না।

এব্যাপারে দোহাজারী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবু তৈয়্যব  বলেন, "৩১শয্যার হাসপাতাল হলেও গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন ৬০/৭০ জন। অপ্রতুল জনবল নিয়ে বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জনবল ও শয্যা সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।"

এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, "দোহাজারী ও পার্শ্ববর্তী ৪/৫ টি ইউনিয়নের রোগীরা দোহাজারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এজন্য হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ বেশি। ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে যেরকম অবকাঠামো এবং জনবল থাকা প্রয়োজন তা আছে। তবে করোনা সংকটের কারনে কয়েকজন চিকিৎসককে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় চিকিৎসক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া দু'জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। ওই দুজন চিকিৎসক করোনামুক্ত হয়ে হাসপাতালে যোগ দিলে সংকট কেটে যাবে।"

এব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, "শীত মৌসুমে ঠান্ডাজনিত সমস্যার কারনে নিউমোনিয়া ও অন্যান্য রোগীদের চাপ একটু বেশি থাকে।" দোহাজারী হাসপাতালে চিকিৎসক স্বল্পতা সম্পর্কে অবগত নন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমি একটা মিটিংয়ে আছি, মিটিং শেষ করে দোহাজারী হাসপাতালের চিকিৎসক স্বল্পতা নিরসণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।"