প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন নৌপথে বিলাসবহুল প্রমোদতরী ‘বে ওয়ান ক্রুজ’ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ঘাট থেকে আগামী বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে জাহাজটি। ওই দিন রাত ১১টায় যাত্রা শুরু করে পরদিন সকাল ৭টা নাগাদ সেন্টমার্টিনে পৌঁছাবে।
দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে চট্টগ্রাম থেকে প্রথমবারের মতো সরাসরি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করা প্রথম প্রমোদতরী হবে বে ওয়ান ক্রুজ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড বিলাসবহুল এই প্রমোদতরীটি বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করছে।
আজ সোমবার দুপুরে নগরীর পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাটে নোঙ্গর করা জাহাজটিতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। এসময় কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ রশিদ সেখানে বক্তব্য রাখেন।
সভায় জানানো হয়, জাপানের কোবে শহরের মিতশুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজে তৈরি করা প্রমোদতরীটি গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে এসে পৌঁছায়। আনুসঙ্গিক মেরামতের মাধ্যমে জাহাজটিকে নতুন করে বিলাসবহুল রূপ দেওয়া হয়েছে। এরপর প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ করে সেটি সাগরে ভাসানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে পতেঙ্গা থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজটি চালানো হয়েছে। ৪৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ৫৫ ফুট প্রস্থের জাহাজটি উত্তাল সমুদ্র মোকাবেলার সক্ষমতা রয়েছে। ঘণ্টায় ২৪ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম জাহাজটিতে আছে প্রেসিডেন্ট স্যুট, বাঙ্কার বেড কেবিন, টু ইন বেড কেবিন, আরামদায়ক চেয়ারসহ নানা ধরনের আসন।
মতবিনিময়ে জানানো হয়, প্রমোদতরীতে একটি রেস্তোঁরা, স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিন এবং কয়েন পরিচালিত ঝর্ণাও আছে। যাত্রীদের সেবায় ১৬৭ জন ক্রু থাকবেন, এর মধ্যে ১৭ জন জাহাজ পরিচালনা করবেন।
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ রশিদ জানান, সপ্তাহে তিন দিন বে ওয়ান ক্রুজ পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। সর্বনিম্ন তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ভাড়ায় এই প্রমোদতরীতে ভ্রমণ করা যাবে। এ প্যাকেজের আওতায় জাহাজে রাতযাপন, সমুদ্র বিনোদনের সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চালানো যাবে, এটা কেউ কোনো দিন ভাবেনি। আমরা খুব ভালো একটি জাহাজ জাপান থেকে এনেছি। এটা দুই হাজার যাত্রী নিয়ে সৌদি আরব যেতে সক্ষম। ঝড়-তুফানেও জাহাজে কোনো সমস্যা হবে না। এর দুই পাশে দুটি পাখা আছে। তিন-চার পর্যন্ত বা এর বেশি সিগন্যাল থাকলেও এর কোনো সমস্যা হবে না। জাহাজটি মূল সেন্টমার্টিন দ্বীপে নোঙর করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বীপের অদূরে নোঙর করার পর সেখানে অপেক্ষমাণ ছোট জাহাজে করে যাত্রীদের মূল দ্বীপে নেওয়া হবে।
আপাতত ভাড়ায় আনা প্রমোদতরীটি আমদানির প্রক্রিয়ায় আছে উল্লেখ করে এম এ রশিদ বলেন, জাহাজটির প্রতিদিনের খরচ ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী পেলে আমরা এটা নিয়মিত করতে পারব।
পর্যটন মৌসুম শেষে জাহাজটি অলস বসে থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করব কলকাতা, আন্দামান রুটে চালানোর জন্য। এজন্য সরকারের কাছে অনুমতি চাইব। হজের যাত্রী পরিবহনের যদি অনুমতি সরকার দেয়, তাহলে আমরা এর সঙ্গে আরও ৩-৪টা জাহাজ নিয়ে আসব। জাপান থেকে আনা জাহাজটি ২৮ বছরের পুরনো। বিদ্যমান আইনে ২৫ বছরের পুরনো জাহাজ সাগরে ভাসানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এম এ রশিদ বলেন, “এই আইন শুধু আমাদের দেশে আছে। বিদেশে প্যাসেঞ্জার জাহাজ ৫৫-৬০ বছরের পুরনো হলেও চলে। কার্গো জাহাজ ২৫ বছরের পুরনো হলে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু প্যাসেঞ্জার জাহাজে সমস্যা হয় না। আমাদের দেশে কার্গো এবং প্যাসেঞ্জার দুটোকে এক করে আইন তৈরি করেছে। আমরা এই আইন পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছি।মূলত জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স।
এম এ রশিদ বলেন, “কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। দুর্ঘটনা কবলিত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ‘বাংলার সৌরভ’ মেরামত করার জন্য ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঝুঁকি নিয়েছিলাম। সেটা মেরামত করে সরকারকে ফেরত দিয়েছি। অথচ কেউ বলেনি, সেটা আবার সাগরে ভাসবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে পাঁচটি টাগবোট নির্মাণ করে দিয়েছি। এ পর্যন্ত আমরা ১২০০ জাহাজ নির্মাণ করেছি। প্রায় ৮০০ জাহাজ মেরামত করেছি। বে ওয়ান ক্রুজও আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ। কক্সবাজার যাওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিমানে আসা যাত্রীরা চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবেশ না করে সরাসরি জাহাজের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন এবং একইভাবে চট্টগ্রামে এসে আবারও বিমানে ফিরে যেতে পারবেন বলেও তিনি জানান। বিলাসবহুল প্রমোদতরীটি পরিচালনার মধ্য দিয়ে দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
Developed By Muktodhara Technology Limited